ঢাকা, সোমবার, ১৩ মাঘ ১৪৩১, ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ২৬ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

পরিবার সঞ্চয়পত্র থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রবীণরা!

এসএম আব্বাস, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২০ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০১৫
পরিবার সঞ্চয়পত্র থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রবীণরা! ছবি: ফাইল ফটো

ঢাকা: দেশের ষাটোর্ধ্ব নাগরিকদের ‘সিনিয়র  সিটিজেন’ মর্যাদা দেওয়া হলেও ‘পরিবার সঞ্চয়পত্র’ কিনতে পারছেন না তারা।

‘পরিবার সঞ্চয়পত্রে’র উদ্দেশ্য অনুযায়ী নারীদের পাশাপাশি দেশের জ্যেষ্ঠ নাগরিকরা এই সুবিধা পাবেন।

কিন্তু প্রকল্পের নিয়মে নারীদের ক্ষেত্রে বয়স ১৮ বছর হলেও ৬৫ বছরের কম বয়সী পুরুষরা কিনতে পারবেন না ‘পরিবার সঞ্চয়পত্র’।

ফলে এই প্রকল্পে দেশের ষাটোর্ধ্ব (৬৫ বছরের নিচে) নাগরিকরা সঞ্চয়পত্রের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। একই সঙ্গে ব্যাহত হচ্ছে ‘পরিবার সঞ্চয়পত্র’ এবং ‘সিনিয়র সিটিজেন’ ঘোষণার উদ্দেশ্যও।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পরিবারের আর্থিক নিরাপত্তায় ২০০৯ সালে ‘পরিবার সঞ্চয়পত্র’ প্রকল্প চালু করে সরকার।   নারীদের পাশাপাশি প্রবীণ নাগরিকদেরও এই প্রকল্পের আওতায় আনা হয়।

তবে ষাটোর্ধ্ব নাগরিকদের ‘সিনিয়র সিটিজেন’ ঘোষণা করা হলেও এখন পর্যন্ত প্রকল্পের নিয়মে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। ফলে ৬০ বছরের বেশি কিন্তু ৬৫ বছরের নিচে কেউ এই সুবিধা পাচ্ছেন না।

গত বছরের ২৭ নভেম্বর সরকারিভাবে দেশের ১ কোটি ৩০ লাখ ষাটোর্ধ জনগোষ্ঠীকে ‘সিনিয়র সিটিজেন’ ঘোষণা করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

ষটোর্ধ্ব প্রবীণ নাগরিকরা বলছেন, পারিবারিক আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঘোষিত সিনিয়র সিটিজেনদের অর্থাৎ ৬০ বছর থেকেই ‘পরিবার সঞ্চয়পত্র’ কেনার সুবিধা দেওয়া দরকার।  

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) সাবেক সিনিয়র সেকশন অফিসার তাজুল ইসলাম (৬৬) বাংলানিউজকে বলেন, আমি মনে করি বয়স ৫৯ হলেই এই সুবিধা দেওয়া উচি‍ৎ। কারণ অনেকেই ৫৯ বছরেই অবসরে যাচ্ছেন।

এদিকে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ সূত্র জানায়, সরকারি চাকরিজীবীদের অবসরে যাওয়ার পর জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতর থেকেও সঞ্চয়পত্র সুবিধা নিতে পারেন। ‘পেনশন সঞ্চয়পত্র’ নামে ওই প্রকল্পে সুবিধাটি নিতে পারবেন ষাটোর্ধ্বরা।

তাজুল ইসলাম বলেন, সবাই তো সরকারি চাকরি করেন না। যারা সরকারি চাকরি করেন না, তারা কী করবেন? সেজন্য সব ‘সিনিয়র সিটিজেন’কে পরিবার সঞ্চয়পত্র প্রকল্পের আওতায় আনা প্রয়োজন।

জানতে চাইলে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. সুলতানুল ইসলাম চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, প্রথমে নারীদের টার্গেট করে এই প্রকল্পটি চালু হয়েছে। পরে  পরিবারের আর্থিক নিরাপত্তার বিষয়টি চিন্তা করেই এ প্রকল্পে যোগ করা হয় প্রবীণ পুরুষদের।

‘কিন্তু সিনিয়র সিটিজেন ঘোষণা করা হয় পরবর্তীতে। তাই এখন বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে,’—বলেন তিনি।

অতিরিক্ত সচিব মো. সুলতানুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বিষয়টি নিয়ে আগামী বাজেটে অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হবে।

পরিবার সঞ্চয়প্রত্র
সর্বনিম্ন ১০ হাজার এবং সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত পাঁচবছর মেয়াদী এই সঞ্চয়পত্র কেনা যায়। পর্যায়ক্রমে তা ১০ হাজার, ২০ হাজার, ৫০ হাজার, ১ লাখ, ২ লাখ, ৫ লাখ এবং ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কেনার সুযোগ আছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, মেয়াদ শেষে প্রতি মাসে ১৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ মুনাফা পাওয়া যাবে। তবে মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগে নগদায়ন করলে (টাকা তুলতে চাইলে) প্রথম বছর শেষে ৯ দশমিক ২০ শতাংশ, দ্বিতীয় বছর শেষে ৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ, তৃতীয় বছর শেষে ১০ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং চতুর্থ বছর শেষে ১১ দশমিক ৪৫ শতাংশ মুনাফা যোগ হবে।  

যারা কিনতে পারবেন:
১৮ ও তার বেশি বয়সের যে কোনো বাংলাদেশি নারী, শারীরিক প্রতিবন্ধী (পুরুষ ও মহিলা) এবং ৬৫ কিংবা এর বেশি বয়সের নারী-পুরুষ।

ক্রয়ের ঊর্ধ্বসীমা:
একক নামে সর্বোচ্চ ৪৫ লাখ টাকার পরিবার সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে।  

অন্যান্য সুবিধা:
মনোনীত ব্যক্তি নিয়োগ করা যায়, প্রয়োজনে তাদের পরিবর্তন কিংবা বাতিলও করা যায়। সঞ্চয়পত্র হারিয়ে বা নষ্ট হয়ে গেলে দ্বি-নকল সঞ্চয়পত্র ইস্যু করতে পারবেন গ্রাহকরা।  

পেনশন সঞ্চয়পত্র
পাঁচ বছর মেয়াদি এ সঞ্চয়পত্র ২০০৪ সালে চালু করা হয়। সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কেনা যায়।  
পর্যায়ক্রমে তা ৫০ হাজার, ১ লাখ, ২ লাখ, ৫ লাখ এবং ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত কেনা যায়। জাতীয় সঞ্চয় ব্যুরো, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সব বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং ডাকঘর থেকেও এই সঞ্চয়পত্র কেনা কিংবা ভাঙানো যায়।

মেয়াদ শেষে ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ মুনাফা দেওয়া হয়।   এক লাখ টাকায় প্রতি তিন মাস পরপর ৩ হাজার ২৯৭ টাকা ৫০ পয়সা পাওয়া যায়।

যারা কিনতে করতে পারবেন:
এ ধরনের সঞ্চয়পত্র অবসরপ্রাপ্ত সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্ত্বশাসিত,আধা-স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা/ কর্মচারী, সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য এবং মৃত চাকরিজীবীর পারিবারিক পেনশন সুবিধাভোগীরা কিনতে পারবেন।

ক্রয়ের ঊর্ধ্বসীমা:
অবসরের পর প্রাপ্ত আনুতোষিক ও ভবিষ্যৎ তহবিলের অর্থ মিলিয়ে একক নামে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা টাকার পেনশনার সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে।
এছাড়া জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের আওতায় পাঁচবছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, তিনমাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র এবং বাংলাদেশ প্রাইজবন্ড কেনার সুবিধা রয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ০৭২০ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।