ঢাকা, সোমবার, ১৩ মাঘ ১৪৩১, ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ২৬ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

১৬ বছরেও ধরাছোঁয়ার বাইরে উদীচী ট্র্যাজেডির ঘাতকরা

উত্তম ঘোষ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১০ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০১৫
১৬ বছরেও ধরাছোঁয়ার বাইরে উদীচী ট্র্যাজেডির ঘাতকরা

যশোর: উদীচী ট্র্যাজেডি দিবস শুক্রবার (৬ মার্চ) । ১৬ বছর আগে ১৯৯৯ সালের এই দিনে রাতে স্থানীয় টাউন হল মাঠে উদীচীর দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলাকালে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী এক বর্বরোচিত বোমা হামলা চালায়।

এতে ১০ জন নিহত ও দু’শতাধিক নারী-পুরুষ আহত হন। এই ঘটনায় মামলা হলেও বিচার কাজ শেষ হয়নি এখনও। ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন ঘাতকরা।
 
দীর্ঘ ১৬ বছর পার হলেও ঘাতকদের বিচার না হওয়ায় হতাশ হয়েছেন আহত, নিহতদের স্বজন এবং দেশের সাংস্কৃতিক কর্মীরা।

যশোরের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, সরকার পক্ষের আইনজীবীদের আশা খুব তাড়াতাড়ি ফের মামলাটির কার্যক্রম শুরু হবে।

এদিকে, প্রতি বছরের মতো এবারও শহীদদের স্মরণে টাউন হল মাঠে বিকেল ৪টা ১ মিনিটে প্রতিবাদী গান ও সন্ধ্যায় প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া সকাল সাড়ে ৯টায় উদীচী প্রাঙ্গণে রক্তদান কর্মসূচি, প্রতিবাদ মিছিল এবং শহীদ বেদিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হবে।

উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী যশোর জেলা শাখার সভাপতি ডিএম শাহিদুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, সিআইডির ত্রুটিপূর্ণ চার্জশিটের কারণে ২০০৬ সালের ৩০ মে আদালত থেকে খালাস পেয়ে যান এই মামলার সব আসামি। পরে সরকার ওই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করলে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হলেও তা আটকে আছে আইনের বেড়াজালে।

বিচারের এই দীর্ঘ বিড়ম্বনায় ক্ষুব্ধ যশোরের মানুষ এখন দ্রুত ‍বিচারকার্যের চূড়ান্ত ফল দেখতে চায় বলেও জানান তিনি।

১৯৯৯ সালের ৬ মার্চ  যশোর টাউন হল মাঠে আয়োজিত বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলনের শেষ দিন ছিল। রাত ১টার কিছু সময় পর মঞ্চের পেছনে দুইটি শক্তিশালী বোমার বিস্ফোরণ ঘট‍ায় দুর্বৃত্তরা। এতে প্রাণ হারান নূর ইসলাম, নাজমূল হুদা তপন,  শিল্পী সন্ধ্যা রানী ঘোষ, ইলিয়াস মুন্সী, শাহ আলম বাবুল, বাবুল সূত্রধর, শাহ আলম, বুলু, রতন রায় এবং রামকৃষ্ণ। আহতদের কেউ দুই পা, কারও এক পা, কারও হাত কেউবা শ্রবণশক্তি হারিয়ে চিরদিনের জন্য পঙ্গত্ববরণ করেন। ‍

এ ঘটনার পর দিন অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা করা হয়।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামসহ ২৪ জনের নামে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। পরে তরিকুল ইসলামের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট তার নাম বাদ দিয়ে দেন। ২০০৬ সালের ৩০ মে যশোরের স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল আদালত এ মামলার রায়ে ২৩ আসামিকে বেকসুর খালাস দেন। উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ন্যায়বিচার হয়নি বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পুন:তদন্তের আবেদন করলে মামলাটির বর্ধিত তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় সিআইডিকে। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নান আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে গ্রেফতার হলে উদীচীর বোমা হামলা মামলা নতুন মোড় নেয়। ওই বছরের ১৯ নভেম্বর আদালতে হান্নানের দেওয়া জবানবন্দিতে উদীচীর অনুষ্ঠানে বোমা হামলায় তার জড়িত থাকার কথাও স্বীকার করেন। হান্নানের স্বীকারোক্তিতে পুলিশ হরকাতুল জিহাদের সদস্য বরিশালের আবুল হোসেন ও মাদারীপুরের মওলানা আবদুর রউফকে আটক করে। পরবর্তীতে মহিউদ্দিন আলমগীর, আহসান কবীর হাসান ও মিজানুর রহমান মিজান মারা যান। আদালতের কাছে তাদের মৃত্যুর কাগজপত্র দাখিল হওয়ায় তাদের বাদে বাকি ২০ জনের বিরুদ্ধে সমন জারি করা হয়। এর পর  ২০১১ সালের ৪ মে সরকারের দায়ের করা আপিলটি গ্রহণ করেন বিচারপতি সিদ্দিকুর রহমান মিয়া ও কৃষ্ণা দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ।

এর ফলে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হয়। উচ্চ আদালত এ মামলার খালাস প্রাপ্তদের পুনরায় আত্মসমর্পণের জন্য সমন জারির নির্দেশ দেন। এ সংক্রান্ত একটি পত্র ২০১১ সালের ২০ জুন যশোর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এসে পৌঁছায়। ২১ জুন খালাসপ্রাপ্ত ২৩ আসামির বিরুদ্ধে সমন জারি করেন চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। সমনে উল্লেখ করা হয়, এক মাসের মধ্যে সবাইকে আত্মসমর্পণ করে জামিন নিতে হবে। পরে ১৭ জন বিভিন্ন সময়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন। কিন্তু শফিকুল ইসলাম মিন্টা, শরিফুল ইসলাম লিটু ও সোহরাব নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আত্মসমর্পণ না করায় তাদের বিরুদ্ধে ২৪ জুলাই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেন আদালত।

সর্বশেষ ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে আটক হন এ মামলার অন্যতম আসামি শফিকুল ইসলাম মিন্টো। পরে তাকেও এ মামলায় জামিন দেন আদালত।

** কেমন আছেন উদীচী ট্র্যাজেডিতে আহতরা

বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।