ঢাকা, সোমবার, ১৩ মাঘ ১৪৩১, ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ২৬ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

বেসরকারি দিবসে বিরতি: বিরোধী ও স্বতন্ত্র এমপিরা হতাশ

শাহজাহান মোল্লা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১৩ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০১৫
বেসরকারি দিবসে বিরতি: বিরোধী ও স্বতন্ত্র এমপিরা হতাশ

ঢাকা: সাংবিধানিক ব্যাখ্যা অনুযায়ী সব আলোচনার প্রাণ কেন্দ্র জাতীয় সংসদ। জনপ্রতিনিধিরা নিজ এলাকার জনগণের দাবি সংসদের মাধ্যমে সরকারের কাছে তুলে ধরেন।

আর এই দাবি পূরণে কাজ করে সরকার।
 
কার্যপ্রাণালী বিধি অনুযায়ী সংসদ অধিবেশন চলাকালে প্রতিটি কর্ম দিবসকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে পৃথক করা রয়েছে। এরমধ্যে বুধবার প্রথম ৩০ মিনিট থাকে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্ন জিজ্ঞাসাকাল। এছাড়া বৃহস্পতিবার হচ্ছে বেসরকারি দিবস। অন্যান্য দিবস সাধারণ মন্ত্রীদের প্রশ্নকাল এবং অন্যান্য কার্যাবলী সম্পাদনের জন্য।
 
কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী বেসরকারি দিবসের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। কেননা এই দিবসে সরকারের বাইরে থাকা এমপিরা যে কোন বিল আনতে পারেন। যা অন্য কোন দিন সম্ভব নয়। কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী বিল আনার অধিকার থাকে শুধু মন্ত্রীদের। কিন্তু বেসরকারি দিবসে তার উল্টো। বিধি অনুযায়ী কোন বেসরকারি সদস্য বিশেষ কোন বিল আনতে হলে ১৫ দিন আগে সংসদ সচিবালয়ে লিখিত আকারে বিলটি উত্থাপন করবেন।  
 
এছাড়া বেসরকারি দিবসে সরকারের বাইরে থাকা এমপিরা বেশী বেশী কথা বলার অধিকার রাখেন। অতীতের সংসদগুলোতে দেখা গেছে, বেসরকারি দিবসে কোন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিল উত্থাপন হয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার জন্য আনীত একটি বিল। পরে বিলটি পাস করিয়ে এখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হচ্ছে। তাই বেসরকারি সদস্যদের মতে, দিবসটির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। কিন্তু সেই দিবসেই বার বার বিরতি।
 
দশম জাতীয় সংসদের পঞ্চম অধিবেশনে পর পর ৪টি বেসরকারি দিবসে বিরতি দেওয়া হলো। এনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্বতন্ত্র ও বিরোধী দলের এমপিরা।
 
সংসদ অধিবেশনের বিরতির জন্য বেসরকারি দিবসকে বেছে নেওয়া হলো কেন জানতে চাইলে জাতীয় সংসদের প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজ বাংলানিউজকে বলেন, বিশেষ কোন কারণ নেই। চলমান সহিংসতায় এমপিদের জনগণের পাশে থাকার সুযোগ করে দিতেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকারি দলের পার্লামেন্টারি বোর্ডে সিদ্ধান্ত হয়েছিল সহিংসতা রোধে এমপিদের নিজ এলাকায় কাজ করতে হবে। সেই সিদ্ধান্তই বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বিশেষ কোন কারণে নয়।
 
তিনি বলেন, দশম জাতীয় সংসদে সরকারের বাইরে থাকা এমপিদের অনেক কথা বলার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। যা অতীতে কোন সময়ই দেওয়া হতো না। বৃহস্পতিবার বিরতি থাকলে দূরের এমপিরা নিজ এলাকায় গিয়ে দুই দিন থাকতে পারেন। এমপিরা ভোটারদের সাথে সময় দিতে পারেন। তাই বৃহস্পতিবার থেকেই বিরতি দেওয়া হয়।
 
এদিকে বেসরকারি দিবসে বিরতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মো. রুস্তম আলী ফরাজী।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, এমনিতেই সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকা নিয়ে বাইরে নানা প্রশ্ন রয়েছে। যা একটু কথা বলি আমরা স্বতন্ত্র এমপিরাই। সংসদকে প্রাণবন্ত ও কার্যকর করতে হলে সরকারের বাইরে থাকা এমপিদের বেশী বেশী কথা বলার সুযোগ দিতে হবে।
 
তিনি বলেন, আমাদের একটি মাত্র দিন বৃহস্পতিবার। এই দিনে আমরা বেশী করে কথা বলার সুযোগ পাই। কিন্তু গত ৪ সপ্তাহ ধরেই বৃহস্পতিবার সংসদ মুলতবি রাখা হচ্ছে। এটা কেন করা হচ্ছে জানি না। এমপিদের যদি এলাকায় যাওয়ার সুযোগ দিতে হয় তাহলে একবারে বেশী করে কয়দিন বিরতি দিলেই পারে।
 
তিনি আরো বলেন, আমি বেশ কয়টি বিল দিয়ে রেখেছি। বেসরকারি দিবসে কথা বলার সুযোগ পেলে এগুলো উত্থাপন করা হবে। বিশেষ করে কোর্ট কাচারিসহ সর্বত্র বাংলা ভাষা ব্যবহার নিশ্চিত করতে একটি বিল আনা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ‍সুযোগ দিলে এই বিল উঠানো হবে। তবে বার বার বৃহস্পতিবার বিরতি ভালো লক্ষণ নয়। এতে আমরা বেসরকারি সদস্যরা হতাশ।
 
তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ঝিনাইদহরে স্বতন্ত্র এমপি তাহজীব আলম সিদ্দীকি বলেন, আমরা চাই একটু বেশী কথা বলার সুযোগ দেওয়া হোক। কিন্তু তা না করে বেসরকারি দিবসে অধিবেশন বন্ধ রাখা হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য হতাশার।
 
এক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্নমত পোষণ করেছেন সরকারের অংশে থাকা সংসদের বিরোধী দলের সদস্য পীর ফজলুর রহমান। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, কথা তো বলার সুযোগ পাচ্ছি। প্রতিদিনই পয়েন্ট অব অর্ডারে কেউ না কেউ দাঁড়িয়ে যাচ্ছি। কিন্তু বেসরকারি দিবসে কেন বন্ধ করা হচ্ছে তার কোন উত্তর আমার জানা নেই। এটা আমার দল জাতীয় পার্টির ওয়ার্কিং বোর্ডের সদস্যরাই ভালো বলেতে পারবেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮১০ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।