ঢাকা, সোমবার, ১৩ মাঘ ১৪৩১, ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ২৬ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

মশার যন্ত্রণায় ঘুমানোই দায়, মার্চে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম

সাঈদ শিপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০১৫
মশার যন্ত্রণায় ঘুমানোই দায়, মার্চে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: সন্ধ্যার আগেই সব জানালা বন্ধ করে দিই। সকালে সূর্য উঠার আগে আর খোলা সম্ভব হয় না।

বন্ধ ঘরে ছেলে-মেয়েরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে। জানি আলো-বাতাসবিহীন বন্ধ ঘর বাচ্চাদের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু কি করবো? কোন উপায় নেই মশার যে উপদ্রব।
 
বিকালের পর জানালা খুললেই মৌমাছির মতো দল বেঁধে মশা ঘরে ঢুকে পড়ে। এটি বাচ্চাদের জন্য আরও বেশি ক্ষতিকর। ফলে বাধ্য হয়েই ছেলে-মেয়েকে বদ্ধ ঘরে রাখতে হয়। তারপরও মশার হাত থেকে রক্ষা নেই। রাতে মশারির ভেতরেও মশা ঢুকে পড়ে। মশার কামড়ে বাচ্চাদের কয়েকবার ঘুম ভেঙে যায়। আমরাও ঘুমাতে পারি না। কথাগুলো বলছিলেন রামপুরার জাকের রোডের বাসিন্দা শিমুল বেগম।
 
এটি শুধু রাজধানীর রামপুরার চিত্র না। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রতিটি অঞ্চলেই একই চিত্র। যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, পোস্তাগোলা, খিলগাঁও, মুগদা, গোড়ান, মাদারটেক, আহমদবাগ, মানিকনগর, গোপীবাগ, আরামবাগ, মতিঝিল, হাজারীবাগ, লালবাগ, নবাবপুর, সূত্রাপুর, নারিন্দা অঞ্চলের অন্তত ৫০ জন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
 
এরমধ্যে মুগদা, গোড়ান, যাত্রাবাড়ী, মীরহাজীরবাগ, ফকিরাপুল অঞ্চলে মশার উপদ্রব তুলামূলক বেশি। এই অঞ্চলগুলোতে সন্ধ্যার পর ঘরের সব জানালা-দরজা বন্ধ করে মশারি টানিয়েও মশার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায় না বলে দাবি করেন বাসিন্দারা।
 
এদিকে মশার উপদ্রব থেকে নগরবাসীকে রক্ষা করতে মার্চ মাসের মধ্যেই ক্র্যাশ প্রোগ্রাম (ব্যাপক ভিত্তিতে মশা নিধন কর্যসূচি) চালু করবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। এ জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে ১১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্থার প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান।
 
মাহবুবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, মশা নিধনে বিভিন্ন কার্যক্রম চলছে। ইতিমধ্যে ৩ নম্বর অঞ্চলের ডোবা-নালার কচুরিপানা পরিষ্কারসহ ফগার মেশিন দিয়ে মশা নিধন কার্যক্রম চালানো হয়েছে। বর্তমানে ২ ও ৫ নম্বর অঞ্চলে এ কার্যক্রম চলছে। মার্চের মধেই ক্র্যাশ প্রোগ্রাম চলানো হবে। এ জন্য ওষুধ কেনার টেন্ডারের কাজ চলছে।
 
সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৩ নম্বর অঞ্চল এর মধ্যে রয়েছে- ইসলামবাগ, পোস্তা, লালবাগ, শহীদনগর, ঢাকেশ্বরী, আজিমপুর, ভাগলপুর, নওয়াবগঞ্জ, বকশীবাজার, জিগাতলা, চকবাজার, রহমতগঞ্জ, গণকটুলী, হাজারীবাগ, রায়েরবাজার, বুরহানপুর, কোম্পানিঘাট, সুলতানগঞ্জ ও কামরাঙ্গীরচর।
 
এ অঞ্চলের কমপক্ষে ১৫ জন বাসিন্দার সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজের। তাদের কেউ মশা নিধনে সিটি কর্পোরেশনের দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ দেখেননি। তাদের দাবি গত এক বছরের মধ্যে একবারের জন্যও ফগার মেশিন দিয়ে মশার ওষুধ ছিটানো হয়নি।
 
আজিমপুরে আরিফুল ইসলাম, বকশীবাজারের আলেয়া বেগম, জিগাতলার শরিফুল ইসলাম রায়েরবাজারের ইমরান প্রত্যেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আগে সিটি কর্পোরেশন থেকে ফগার মেশিন দিয়ে মশার ওষুধ ছিটানো হতো। কিন্তু গত ৪-৫ বছর ধরে মশার ওষুধ ছিটাতে দেখা যায়নি।  
 
অঞ্চল-২’র মধ্যে আছে- খিলগাঁও ‘এ’ ও ‘সি’ ব্লক, তিলপাপাড়া, গোড়ান, দক্ষিণ বনশ্রী, মেরাদিয়া, ভূঁইয়াপাড়া, বাসাবো, মাদারটেক, কদমতলা, রাজারবাগ, মুগদাপাড়া, কমলাপুর, উত্তর ও দক্ষিণ গোপীবাগ, বঙ্গভবন, মতিঝিল, ফকিরাপুল, বিজয়নগর, আরামবাগ, মালিবাগ, শাহজাহানপুর, শান্তিবাগ, চামেলীবাগ, শান্তিনগর ও বায়তুল মোকাররম।
 
আর অঞ্চল-৫’র মধ্যে আছে- মানিকনগর, ঋষিপাড়া, কাজীপাড়া, গোপীবাগ, নারিন্দা, স্বামীবাগ, দয়াগঞ্জ, করাতিটোলা, ওয়ারী, দক্ষিণ মৈশুন্ডি, বেগমগঞ্জ, বানিয়ানগর, ধূপখোলা, শরাফতগঞ্জ, মিলব্যারাক, আলমগঞ্জ, সূত্রাপুর, গেন্ডারিয়া, ফরিদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, ধলপুর, গোলাপবাগ, মীরহাজীরবাগ, ধোলাইরপাড়, মুরাদপুর, জুরাইন, আলমবাগ ও পোস্তাগোলা।
 
এ অঞ্চলগুলোর বাসিন্দরাও জানান, সিটি কর্পোরেশন থেকে মশা নিধন সংক্রান্ত কোন কার্যক্রম চলাতে দেখা যায়নি। অথচ মশার যে উৎপাত তাতে ঘরের ভেতরেও ৫ মিনিট স্থির হয়ে থাকা যায় না। এমনকি মশার কয়েল জ্বালিয়েও মশার হাত থেকে রক্ষা মেলে না। মশারির ভেতরেও মশা ঢুকে পড়ে। সন্ধ্যার পর ঘরের বাইরে কোথাও দুই মিনিট দাঁড়ালে মাথার উপর মশারা ঝাঁক বেধে যায়।

যাত্রাবাড়ী নবীনগরের বাসিন্দা আলেয়া বেগম বলেন, সন্ধ্যার পর মশারি ছাড়া ঘরের ভেতরেও থাকা যায় না। খাবার খেতে বসলে মশার কামড়ের মাত্রা মনে হয় বেড়ে যায়। অনেক সময় খাবারের সঙ্গে মশাও মুখের ভেতরে ঢুকে পড়ে। আর ঘুমানোর সময় কয়েল জ্বালিয়ে ও মশারিট টানিয়েও রক্ষা পাওয়া যায় না। একই ধরনের কথা জানান, তিলপাপাড়ার আজগর আলী, গোড়ানের সুমন, বাসাবোর আয়েশা খাতুন, মুগদাপাড়া রাফিয়া সুলতানা।
 
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশেনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আনসার আলী। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কোথাও মশা নেই। আমরা মশা নিধনের সব ব্যবস্থা করেছি।
 
যোগাযেগা করা হলে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অঞ্চল-২’র সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আবু সাদাত মো. সালেহ বাংলানিউজকে বলেন, শুনেছি মার্চ মাস থেকেই ক্র্যাশ প্রোগ্রাম চালানো হবে। তবে আমাদের এখনো এ বিষয়ে লিখিতভাবে কিছু জানানো হয়নি।
 
তিনি বলেন, ক্র্যাশ প্রোগ্রাম হলে ব্যাপক ভিত্তিতে মশা নিধন কার্যক্রম চালানো হবে। এ পদ্ধতিতে রুটিং মাফিক কর্যক্রমের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি কাজ করা হয়। ক্র্যাশ প্রোগ্রাম শুরু হলে মহল্লা, খাল, ডোবা, নালা সব জায়গাই মশা নিধন কর্যক্রম চলানো হবে। মশা নিধনে ফগার মেশিন, হুইল বার, হ্যান্ড স্প্রে এই তিনটি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় বলে জানান আবু সাদাত মো. সালে।
 
সায়েদাবাদে অবস্থিত দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অঞ্চল-৫’র কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলে প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন বলেন, উপর থেকে নির্দেশ আছে আমরা কোন সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারবো না। আপনি নগর ভবনের দায়িত্বরতদের সঙ্গে কথা বলেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৯ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০১৫

** ‘কয়েল জ্বালাইয়া আর কত মশা তাড়ামু!’

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।