ঢাকা: শুধু প্রতিবাদ নয়, প্রতিরোধের ডাক দিয়ে যশোর হত্যাকাণ্ডের ১৬তম বার্ষিকী পালন করলো বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী।
দিবসটি উপলক্ষে শুক্রবার (০৬ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি’র স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশের আয়োজন করে উদীচী।
সমাবেশের শুরুতেই যশোর হত্যাকাণ্ডের শিকার শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশে নির্মিত অস্থায়ী বেদিতে শ্রদ্ধা জানায়- উদীচীর কেন্দ্রীয় সংসদ, ঢাকা মহানগর সংসদ ও এর অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন শাখা সংসদ। এছাড়া আরও শ্রদ্ধা জানায়- বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, সংগীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ, গণসংগীত সমন্বয় পরিষদ, প্রগতি লেখক সংঘসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
এরপর উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের শিল্পীরা পরিবেশন করেন গণসংগীত ‘ওরা বোমাবাজ, ওরা যুদ্ধবাজ, ওরা জঙ্গি, ওদেরকে রুখো’ গানটি। তারপর যশোর বোমা হামলাসহ পরবর্তীতে বাংলাদেশের শিক্ষা-সংস্কৃতি জগতের ওপর চালানো সব বর্বরোচিত হামলায় নিহতদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
নীরবতা পালনের পর শুরু হয় আলোচনা সভা। বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি কামাল লোহানীর সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন- উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম, সংগীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ ঘোষ, যশোরে বোমা হামলার প্রত্যক্ষ শিকার, আহত সংস্কৃতি কর্মী সুকান্ত দাস, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল কাফি রতন, গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি ও গণসংগীত শিল্পী ফকির আলমগীর।
আরও বক্তব্য রাখেন- উদীচী ছাড়াও যে সাংস্কৃতিক সংগঠনটির ওপর নৃশংস হামলা চালানো হয়েছিল সেই ছায়ানটের সংগঠন ডা. সারওয়ার আলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক, শিক্ষাবিদ ও সম্প্রতি মৌলবাদী গোষ্ঠীর হামলায় নিহত বিজ্ঞান লেখক-ব্লগার অভিজিৎ রায়ের বাবা অধ্যাপক অজয় রায়, যশোরে বোমা হামলাকালীন সময়ে উদীচীর কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি সৈয়দ হাসান ইমাম, সে সময়কার সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সহ-সভাপতি মাহমুদ সেলিম, উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সদস্য অধ্যাপক এ এন রাশেদা, উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক প্রবীর সরদার, উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের সভাপতি কাজী মোহাম্মদ শীষ, যশোরে বোমা হামলার পর আহতদের সেবাদানকারী চিকিৎসক ডা. তপন বিশ্বাস প্রমুখ। এ আলোচনা সভাটি সঞ্চালনা করেন- উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, যশোরে উদীচীর সম্মেলনে কাপুরুষোচিত হামলার ১৬ বছর পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশের অন্য লাখো মামলার মতো এই মামলারও বিচার কাজ এখনও শেষ হয়নি। লোক দেখানো বিচার করা হলেও তাতে প্রকৃত অপরাধীদের কেউই শাস্তির আওতায় আসেনি। এ সময় বক্তারা দ্রুত এর বিচার চান।
সবশেষে দৃশ্যায়িত হয় ১৯৯৯ সালে যশোর থেকে শুরু করে ২০০৫ সালের ০৮ ডিসেম্বর নেত্রকোনায় উদীচী কার্যালয়ে বোমা হামলার রক্তাক্ত ইতিহাসের প্রামাণ্য দলিল নিয়ে উদীচী কেন্দ্রীয় চলচ্চিত্র ও চারুকলা বিভাগের প্রযোজনায় নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘ক্ষতচিহ্ন’।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫১ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০১৫