ঢাকা, সোমবার, ১৩ মাঘ ১৪৩১, ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ২৬ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

‘আমি নোয়াখালীর নই, সারাদেশের’

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১৯ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০১৫
‘আমি নোয়াখালীর নই, সারাদেশের’ ছবি: জি এম মুজিবুর / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ড. নুরুল করিম। নোয়াখালীর এই কীর্তিমান সন্তান কাজ করছেন যুক্তরাজ্যের খ্যাতনামা ভার্জিন মিডিয়ায়।

তবে, বিদেশের ওই প্রতিষ্ঠান তাকে যে অর্থ দেয়, তার প্রায় সিংহভাগই তিনি উজাড় করে দিচ্ছেন দেশের কল্যাণে, জাতীয় উন্নয়নে।

দেশ-জাতির উন্নয়নে নুরুল করিমের ব্যক্তিগত অবদানের ফিরিস্তি যদি বলা হয়, তবে যে কোনো দেশপ্রেমীই ঈর্ষাকাতর হবেন। তিনি দেশের ৬৪টি জেলার ৬৪টি প্রেসক্লাব ও ৪৬৮টি উপজেলার প্রেসক্লাবে কম্পিউটার দেওয়ার কাজ শুরু করেছেন। গড়ে তুলেছেন ইসলাম-করিম ফাউন্ডেশন কমপ্লেক্স। এর আওতায় নানা ধরনের প্রকল্পে জাতীয় উন্নয়নে কাজ করছেন।

এরমধ্যে রয়েছে- শিক্ষা বৃত্তি, উচ্চ শিক্ষা বৃত্তি, দুঃস্থ ও গরীব মানুষের জন্য নিরাপদ বাসস্থান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভবন নির্মাণ ও অনুদান, প্রযুক্তিগত উন্নয়নে কম্পিউটার প্রদান, গ্রাম উন্নয়স, আত্মকর্মসংস্থান, সেলাই প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্য সচেতনতা প্রশিক্ষণ ও ফার্মিং-বায়োগ্যাস প্রকল্প।

এ সমাজ অনুরাগী বিভিন্ন রকমের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে এবং কিছু প্রতিষ্ঠানে সম্পৃক্ত থেকেও কাজ করছেন। সেসবের মধ্যে রয়েছে মাওলানা মুজাফফর আহমেদ স্কুল অ্যান্ড মাদরাসা, নুরুল করিম হসপিটাল, হাজেরা খাতুন অরফানেজ, উম্মে হাবিবা আধুনিক লাইব্রেরি, নুরুল করিম অডিটরিয়াম, আমির উল্লাহ কম্পিউটার অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, নুরুল করিম সেলাই প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, নুরুল করিম ছাত্রাবাস ও অাবদুল হাদী জামে মসজিদ।

তার সামাজিক উন্নয়ন কর্মসূচির মধ্যে বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে জিজিটালাইজড করে গড়ে তোলার সংগ্রামের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়। দেশের জেলাগুলোতে ২৫ বছর ধরে এ বিষয়ের আদর্শ শিক্ষা তুলে ধরছেন তিনি।

এসব কর্ম ‍তৎপরতার ধারাবাহিকতায়ই শুক্রবার (৬ মার্চ) রাজধানীর মেহেরবা প্লাজায় রংপুর বিভাগ সমিতিকে দু’টি কম্পিউটার প্রদান করেন নুরুল করিম।

এই সময় তিনি বলেন, ‘আমার জন্ম নোয়াখালী জেলায়। এজন্য আমার জেলার এক লোক বলেছিলেন, আপনার জন্ম নোয়াখালী, কিন্তু আপনি সারা দেশের কথা চিন্তা করেন কেন? তখন আমি তাকে বলেছিলাম, আমি বাংলাদেশি ব্রিটিশ, নোয়াখালীর ব্রিটিশ নই। আমি সারা দেশের মানুষের জন্য কিছু করতে চাই। ’

ড. নুরুল করিম আরও বলেন, ‘আমি আমার নিজের পরিবারের জন্য অনেক কিছু করেছি, বাকিটা সময় দেশের জন্য কিছু করতে চাই। পথের পাশে যখন একটি শিশু অনাহারে থাকে, তখন আমার মনটা কাঁদে। আমার দেশটা অনেক সুন্দর। সবার প্রচেষ্টায় একদিনে এই দেশটা আরও সুন্দর হবে। ’

দেশের প্রেসক্লাবগুলোয় কম্পিউটার প্রদান প্রসঙ্গে এ সমাজ অনুরাগী বলেন, গ্রামগঞ্জে অনেক প্রেসক্লাব রয়েছে, যেখানে কোনো কম্পিউটার নেই, সংবাদ পাঠাতে সাংবাদিকরা অন্যস্থানে যায়। এই সমস্যা দূর করার জন্যই আমি দেশের সব জেলায় কম্পিউটার দিতে চাই।

শিক্ষার নানা ধারণা তুলে ধরে নুরুল করিম বলেন, ‘শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড নয়, সু-শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। আমি লন্ডন শহরের এককোণে নীরবে বসে এখনও দেশের কথা চিন্তা করি। যেন দেশের মানুষ সু-শিক্ষা অর্জন করে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে পারে। ’

১৯৬৭ সালে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে সাধারণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন নুরুল করিম। তার পিতার নাম মোহাম্মদ আমিনুল্লাহ, আর মা হাজেরা খাতুন।

নানা অভাব অনটনের মধ্যে জীবন-যাপন করলেও তৎকালীন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে ব্যবস্থাপনা বিভাগে অধ্যয়ন শেষ করে উচ্চ শিক্ষা লাভের আশায় লন্ডনে পাড়ি জমান।

সেখানে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার পাশাপাশি খ্যাতনামা ভার্জিন মিডিয়ায় চাকরি নেন। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির কনসালট্যান্ট হিসেবে কর্মরত আছেন। তবে, প্রতিমাসেই নুরুল করিম একবার করে দেশে আসেন। লন্ডন থেকে বেতন পেয়েই দেশ ও জাতির কল্যাণে অধিকাংশ টাকা খরচ করে ফেলেন। জনকল্যাণে অর্থ ব্যয়ের পর আবার লন্ডনে পাড়ি জমান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ২২১৯ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।