ঢাকা: শনিবার ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। বাঙালি জাতির মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে এক অনন্য সাধারণ ও তাৎপর্যপূর্ণ দিন।
১৯৭১ সালের এই দিনে তদানীন্তন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জনতার উত্তাল সমুদ্রে দাঁড়িয়ে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পরাধীন জাতিকে স্বাধীনতা যুদ্ধের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেন।
সাড়ে সাত কোটি বাঙালিকে দিক নির্দেশনা দেন মুক্তিযুদ্ধের। ওই ভাষণেই স্পষ্ট হয়ে উঠে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেদিন স্বাধীনতা লাভের অদম্য স্পৃহায় মুক্তিকামী জাতির আশা আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে বজ্র কণ্ঠে উচ্চারণ করেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। ... ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল।
তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে প্রস্তুত থাক। প্রত্যেক গ্রামে, প্রত্যেক মহল্লায়, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোল এবং তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাক। মনে রাখবা রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেবÑ এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ’।
১৯৪৭ সালে ধর্মভিত্তিক ভ্রান্ত দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে চাপিয়ে দেওয়া অসম পাকিস্তান রাষ্ট্রের শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতি দীর্ঘ দিন ধরে লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে আসে।
ধাপে ধাপে এগিয়ে চলা বাঙালির এই স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্বে আসেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার নেতৃত্বে স্বাধীনতা সংগ্রামরত মুক্তিগামী বাঙালি চূড়ান্তে পর্যায়ে এসে উপনীত হয়।
স্বাধীনতা সংগ্রামের এই চূড়ান্ত পর্বে ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার নিদের্শ দেন।
৭ মার্চের এই ভাষণের মধ্য দিয়ে তিনি পাকিস্তানিদের শাসন-শোষণ-পীড়ন থেকে নিজেদের মুক্ত করে স্বাধীনতা অর্জনের সুনির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনা দেন।
এই ভাষণের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ও মুক্তিকামী প্রতিটি মানুষকে উজ্জীবিত করেন চূড়ান্ত লড়াইয়ে নামার জন্যে। সেই সঙ্গে তিনি স্পষ্ট করেই প্রতিটি মানুষকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেন। ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার নির্দেশনার মধ্য দিয়েই তা স্পষ্ট হয়ে যায়।
বঙ্গবন্ধুর সেই নির্দেশ ও দিক-নির্দেশনাকে অনুসরণ করে বাঙালি জাতি অসহযোগ আন্দোলনের চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকে। ২৫ মার্চের কালোরাতে পাক হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালি জাতির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ওই রাতেই গ্রেফতার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি চূড়ান্ত বিজয় লাভ করে।
পরাধীনতার শৃঙ্খল ছিন্ন করে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দিলে সর্বস্তরের মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ শুরু করে।
বাঙালি জাতি নয় মাসের বীরত্বপূর্ণ মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনীকে চূড়ান্তভাবে পরাজিত করে বিজয় ছিনিয়ে আনে।
বাংলাদেশ সময়: ০০০১ ঘণ্টা, মার্চ ০৭, ২০১৫