রাজশাহী: আলুর ব্যবসা করে সংসার চলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ পিঠালিতলা গ্রামের সেতাবুর রহমানের ছেলে সাহেব আলীর (৪০)।
বেঁচে থাকার তাগিদেই আলু কিনতে গিয়েছিলেন নওগাঁর মহাদেবপুরে।
নৃশংসতার আগুনে সাহেব আলীর শরীরের ৪৬ শতাংশ পুড়ে গেছে। শরীরজুড়ে পোড়া যন্ত্রণা নিয়েই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে এখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন তিনি।
পেট্রোলবোমার আগুনে ঝলসে বিভৎস হয়ে গেছে সাহেব আলীর গোটা মুখ। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে পরিবার নিয়ে চরম অনিশ্চয়তার আতঙ্ক পোড়া যন্ত্রনাকে দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। পাশের বেডেই রয়েছেন ট্রাকচালক ফিরোজ কবির (৪২)। তিনিও মারাত্মক দগ্ধ হয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন।
ফিরোজ শিবগঞ্জ উপজেলার জালমাছমারি গ্রামের ওমর আলীর ছেলে। থেকে থেকে পাশের ফাঁকা বিছানাটি দেখে হু হু করে কেঁদে উঠছেন। বিছানাটি ছিল ট্রাকের হেলপার সেলিম রেজার। বৃহস্পতিবার (০৫ মার্চ) বিকেলে পেট্রোলবোমায় দগ্ধ হয়ে তিনি পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে গেছেন না ফেরার দেশে।
বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন সাহেব আলী বলেন, নওগাঁর মহাদেবপুর থেকে বুধবার (০৪ মার্চ) রাতে আলু নিয়ে শিবগঞ্জে ফিরছিলাম। গোমস্তাপুর এলাকায় এলে ১০ থেকে ১৫ জন দুর্বৃত্ত লাঠিসোটা নিয়ে ট্রাক থামায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ট্রাকের ভেতরে একটি পেট্রোলবোমা ছুড়ে মারে।
এসময় আগুন ধরে গেলেও তারা ট্রাক থেকে নামতে দেয়নি। ওই ট্রাকের মধ্যেই জীবন্ত পুড়িয়ে মারতে চেয়েছিল দুর্বৃত্তরা। কিন্তু শরীরটা পুড়ে গেলেও আল্লাহর ইচ্ছায় প্রাণে বেঁচে যাই।
ট্রাক চালক ফিরোজ কবির (৪২) জানান, বুধবার গভীর রাতে ফেরার সময় অবরোধকারীরা ট্রাক লক্ষ্য করে পেট্রোলবোমা ছুড়ে মারে। এতে তারা দুইজন একসঙ্গে অগ্নিদগ্ধ হন। পরে স্থানীয় লোকজন ছুটে এসে তাদের উদ্ধার করে রামেক হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
এখন তারা হাসপাতালের বেডে ব্যান্ডেজে মোড়ানো পোড়া শরীর নিয়ে মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। নাশকতার আগুনে তার শরীরের ২০ শতাংশ পুড়ে গেছে। সুস্থ হলেও এ পোড়া হাতে কিভাবে কাজ করবেন সেটাই বেশি ভাবাচ্ছে তাকে।
দু’জনের মুখে এখন একই প্রশ্ন, কী ছিল তাদের অপরাধ! যদি তাদের কোনো অপরাধ নাই থাকে, তাহলে কেনো তাদের এ ভয়াবহ পরিণতি হলো। আর কত মানুষ এভাবে পুড়বে। যারা এমন নৃশংসভাবে আগুন দিয়ে মানুষ পোড়াচ্ছে, তারা কাদের ভোট নিয়ে ক্ষমতায় যেতে চায়!
এভাবেই রামেক বার্ন ইউনিটে বাড়ছে পেট্রোলবোমায় দগ্ধ রোগীর সংখ্যা, বাড়ছে আর্তনাদ। মঙ্গলবার রাতে দগ্ধ শিশু শাকিলের পর বুধবার রাতে আরও দুইজনকে ভর্তি করা হয়েছে। এরাও বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের নাশকতার শিকার।
তাদের মধ্যে সাহেব ও ফিরোজ বর্তমানে রামেক বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন। এছাড়া চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের ১৪ বছরের শিশু শাকিলের অবস্থাও এখন আশঙ্কজনক। পেট্রোলবোমার আগুনে তার শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। তাই এখনও তাকে হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে।
রামেকের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন বলেন, গোমস্তাপুরে পেট্রোলবোমায় গুরুতর দগ্ধ ওই তিনজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রামেকে নিয়ে আসা হয়। বর্তমানে সরকারি খরচেই তাদের সব চিকিৎসা চলছে। এদের মধ্যে সেলিম রেজার অবস্থা সঙ্কাটাপন্ন ছিল। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
এছাড়া আহত অপর দু’জনের চিকিৎসা চলছে। গভীরভাবে তাদের পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০২১৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৭, ২০১৫