খুলনা: ‘গরুর মাংস ৩২০ টাকা কেজি। হাতে টাহা (টাকা) নাই।
শুক্রবার (০৬ মার্চ) সকালে খুলনার ময়লাপোতার মোড়ে গরুর মাংস কিনতে আসা রিকশাচালক রানা বাংলানিউজকে এসব কথা বলেন।
তিনি জানান, আগে প্রতি শুক্রবার তিনি গরুর মাংস কিনতেন। দাম বৃদ্ধির কারণে প্রায় দুই মাস পর সন্তানদের জন্য আজ মাংস কিনছেন।
আক্ষেপ নিয়ে তিনি জানান, তার মতো নিম্ন আয়ের অনেকে মাংসের স্বাদ নিতে পারছেন না। কি গরু কি খাসি।
জানা যায়, চলমান হরতাল-অবরোধের বাজারে মাংসের দাম মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গেছে। দুই মাসেই প্রতিকেজি মাংসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে অন্তত ৪০ টাকা। ফলে নিম্ন আয়ের মানুষ মাংসের স্বাদ ভুলতে বসেছে। ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
শিল্পনগরী খুলনার মাংস বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিএনপি-জামায়াতের চলমান হরতাল-অবরোধে গত দুই মাসে প্রায় সব রকমের মাংসের দাম বেড়েছে। আগে প্রতিকেজি মাংস বিক্রি হতো ২শ’ ৬০ টাকা থেকে ২শ’ ৮০ টাকা। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৩শ’ ২০ টাকা থেকে ৩শ’ ৩০ টাকা। প্রতিকেজিতে বেড়েছে ৪০ টাকা।
অতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধির ফলে মাংস এখন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। ফলে কমেছে বিক্রি। অনেকে প্রতিসপ্তাহে শুক্রবার মাংস কিনতেন। বর্তমানে তারা মাসে একদিনও মাংস কিনছেন না বলে জানান বিক্রেতারা। গরুর মাংসের বদলে তাদের কেউ কেউ মাছের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন।
বিক্রেতারা আরও জানান, টানা অবরোধ, সঙ্গে হরতালও। এ কারণে মাংসের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। বিক্রি কমে যাওয়ায় ইতোমধ্যে নগরীর ৩০টির মতো দোকান বন্ধ হয়ে গেছে।
মহানগরীর মাংসের দোকান ঘুরে দেখা যায়, গরু ও খাসির সংকট থাকায় এখন মাত্র ৫০-৬০টি দোকানে মাংস বিক্রি হচ্ছে। অবরোধের আগে প্রায় ৯০টি দোকানে মাংস বিক্রি হতো। যেগুলো খোলা রাখা হয়েছে, তাতে দুই থেকে তিনটির বেশি গরু জবাই দেওয়া হচ্ছে না।
মাংস ব্যবসায়ীরা জানান, একদিকে গরুর সংকট অন্যদিকে চামড়ার বাজার মন্দা। সবকিছু মিলিয়ে লোকসানের পাল্লা ভারি থাকায় বাধ্য হয়ে বিক্রি বন্ধ রাখছেন তারা।
তারা জানিয়েছেন, অবরোধ-হরতালের কারণে গরু-ছাগলের সরবরাহ বেশ কমে গেছে। পশুবাহী ট্রাকেও পেট্রলবোমা মারছে হরতাল-অবরোধকারীরা। ফলে ট্রাক চালকরা শহরে আসতে চান না। আসলেও ভাড়া বেশি রাখছেন। তাই মাংসের দামও বেড়েছে।
তারা আরও জানান, অবরোধ-হরতালে মাংস বিক্রি কমায় অনেক ব্যবসায়ী অন্য কিছু করে সংসার চালাচ্ছেন।
শুক্রবার সকালে খুলনা মহানগরীর ময়লাপোতা মোড়ের বাবু মিট শপের শাওন খান বাংলানিউজকে জানান, বর্তমানে প্রতি কেজি গরুর মাংসের মূল্য ৩২০ টাকা, তবে এ দাম মাত্র দু’মাস আগে ছিল ২৮০ টাকা।
এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, হরতাল-অবরোধে ভারতীয় গরু না আসায় এই মূল্য বৃদ্ধি।
ইকবাল মিট শপের শেখ মাসুম বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে প্রতি কেজি ছাগলের (খাসি) মাংসের মূল্য ৫৫০ টাকা ও মায়া ছাগলের মাংসের মূল্য ৪৫০। এ দাম আগে ছিল ৪৫০ থেকে ৪৮০ টাকা।
‘দেশে সহিংসতা অব্যাহত থাকলে আরও বাড়বে গরু ও খাসির মাংসের দাম’- বলেন তিনি।
রূপসার মাংস বিক্রেতা বাবু খান বাংলানিউজকে বলেন, হরতাল-অবরোধে ভারতীয় গরু আনতে পারছিনা। মাংসের চাহিদার চার ভাগের তিনভাগই পূরণ হয় ভারতীয় গরু দিয়ে। ভারতীয় গরু যশোর ও কুষ্টিয়া থেকে খুলনায় আনতাম। পর্যাপ্ত গরু সরবরাহ না থাকায় অধিকাংশ দোকান বন্ধ রাখা হয়েছে। তাছাড়া চামড়ার বাজারেও ধসের কারণে এখন আমাদের পথে বসার উপক্রম।
তিনি জানান, মাংসের দাম বেড়ে যাওয়ায় শুধু ক্রেতারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন না, বিক্রি কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আগে ৫/৬ মণ মাংস প্রতিদিন বিক্রি করলেও বর্তমানে তিনি ১ থেকে ২ মণ মাংস বিক্রি করছেন। হোটেলের মালিকরা আগে ২/৩ মণ মাংস কিনতেন। বর্তমানে তারা বিক্রি কমিয়ে ২০-২৫ কেজিতে এসেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০২২০ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০১৫