ঢাকা: জমিতে বীজ বপন থেকে শুরু করে উৎপাদিত ফসল বিক্রি করে পরিবারের সব ভার বয়ে চলছেন নারীকৃষক পুতুল রানী রায়। স্বল্প পুঁজি আর ধার-দেনা করে চলছে তার কৃষিকাজ।
আর নাটোর জেলার নারীকৃষক তারিফুন বেগম জানালেন, মজুরির ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার সবসময়ই হতে হয়। একই সময়ে পরিশ্রম করে পুরুষেরা পারিশ্রমিক পান ২৫০ টাকা, তারা পান দেড়শ টাকা করে। এছাড়া পুরুষের তুলনায় তাদের কাজও জোটে কম।
একজন নারীকৃষক হয়ে কীভাবে সংগ্রাম করে জীবনযাপন করছেন সে প্রসঙ্গ তুলতেই নিজেদের কথা তুলে ধরেন তারা। তবে শুধু পুতুল ও তারিফুন নন তাদের মতো দেশের প্রায় সব নারীকৃষক ও শ্রমিকদের একই অবস্থা।
মাঠে একটানা নিরলস পরিশ্রম করে দেশের কৃষিতে অবদান রাখার পাশাপাশি পরিবারের হাল ধরা এসব নারীকৃষকদের আজও মেলে নি কোনো স্বীকৃতি। ফলে সরকারি অনেক সুবিধা থেকেই বঞ্চিত হতে হচ্ছে।
বিভিন্ন গবেষণা, বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা, নারী কৃষক ও শ্রমিক এবং বাংলানিউজের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এলো এসব তথ্য।
দিনাজপুর জেলার নারীকৃষক পুতুল রানী রায় বলেন, তিন ছেলেমেয়ের পড়াশোনাসহ নিজেদের খরচ মেটাতে তিনি কৃষিকাজে নেমে পড়েন। কিন্তু কারও কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পান না। তার ধারণা, তৃণমূল পর্যায়ের নারীকৃষকদের জন্য কোনো সুযোগ-সুবিধা আদৌ নেই।
নানা প্রতিবন্ধকতায় নারীকৃষক ও শ্রমিকেরা কোনো সুবিধাই ভোগ করতে পারেন না বলে জানালেন বেসরকারি সংস্থা অক্সফামের পলিসি অফিসার কামরুন্নাহার নাজনীন। তিনি বলেন, কৃষিসহায়তার সমবন্টন হয় না। কৃষিকার্ড করতে গেলে ভূমির মালিকানা দরকার হয়। কিন্তু অধিকাংশ নারীকৃষকের ভূমি নেই। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই একই সমস্যা।
কৃষক হিসেবে কেউ মেনে নেন না নারীকৃষকদের এমন অভিযোগ সব নারী-কৃষকের। ময়মনসিংহ জেলার নারীকৃষক মমতাজ বেগম বলেন, কেউই আমাদের কৃষক হিসেবে মেনে নেয় না। একজন পুরুষের সমান কাজ করলেও কোনো মূল্যায়ন নেই। কৃষি অফিসারের কাছে গেলেও তারা অবহেলা,অবজ্ঞা করেন। অথচ আমরা একা একা কাজ করে সফলতাও পেয়েছি।
বেসরকারি সংস্থা ইনসিডিন বাংলাদেশ’র নির্বাহী পরিচালক একে এম মাসুদ আলী সাম্প্রতিক এক গবেষণার তথ্য তুলে ধরে বলেন, নারীর শ্রমকে ব্যবহার কার হলেও সমাজে তার কোনো সমাদর নেই। দেশে মোট শ্রমিকের মধ্য নারী ৪৩ শতাংশ আর মোট নারী-শ্রমশক্তির ৭৮ শতাংশ কৃষিখাতে নিয়োজিত। কৃষিতে নারীর অবদান ৬১ শতাংশ।
আর ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক প্রতিষ্ঠান এফএও এর হিসাব মতে বাংলাদেশে নারীর মালিকাধীন কৃষিজমির পরিমাণ ছিল মাত্র তিন দশমিক ৫ শতাংশ। প্রায় বিশ বছরে এই মালিকানা হ্রাস পেয়ে দুই শতাংশে নেমে এসেছে। আর ইউএনডিপির এক জরিপ মতে শুধু কৃষিতেই আদিবাসী নারীদের অংশগ্রহণ শতকরা ৯০ ভাগ। কিন্তু উৎপাদিত দ্রব্যের ওপর তাদের অধিকার নেই বললেই চলে।
নাটোর, রাজশাহী, দিনাজপুর, কুড়িগ্রামের নারীকৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল,নারীদের শিক্ষার হার কম হওয়ায় কৃষিকাজ করতে গিয়ে নানা সমস্যার মুখে পড়তে হয়। তবে তারা যদি সঠিক প্রশিক্ষণ এবং দিকনির্দেশনা পান তাহলে আরও উন্নতি করতে পারবেন--- এরকম আত্মবিশ্বাসের সুর বেজে উঠল তাদের কণ্ঠে।
বাংলাদেশ সময়: ০১২৮ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০১৫