ঢাকা, শুক্রবার, ১৬ মাঘ ১৪৩১, ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ০০ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

‘শেখ হাসিনার আগ্রহ নারী-ক্ষমতায়নে’

সাজেদা সুইটি, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪৭ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০১৫
‘শেখ হাসিনার আগ্রহ নারী-ক্ষমতায়নে’ তাসমীমা হোসেন

ঢাকা: ‘নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ ক্রমশই এগিয়ে যাচ্ছে। আর এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত আগ্রহ ও পদক্ষেপের সুফল।

স্পিকার, বিরোধীদল নেতাই শুধু নয়, বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের অগ্রগামী করতে তার আন্তরিকতা অক্লান্ত। ’
 
বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপে কথাগুলো বলছিলেন সাংবাদিক ও সাবেক সংসদ সদস্য তাসমীমা হোসেন।
 
‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’কে (৮ মার্চ) সামনে রেখে আলাপ করছিলেন তিনি। অতীত ও বর্তমানে নারীর অবস্থান ও সমস্যা নিয়ে নিজের মতামত ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন এই সফল নারী।
 
তাসমীমা হোসেন বলেন, শেখ হাসিনা যেভাবে পরিকল্পনা করছেন, আগামী ১০ বছরে নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে যাবে।
 
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা যতবার ক্ষমতায় এসেছেন নারীর ক্ষমতায়ন করেছেন। প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হয়ে তিনি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়িয়েছেন। এরপরের বার কেবিনেট এবং এক সময় স্পিকার হিসেবে নারীর যোগ্যতার প্রমাণ তুলে ধরলেন। এসব অবদান প্রশংসার দাবি রাখে।  
 
‘আর করবেন নাই বা কেন?’- কারণও ব্যাখ্যা করেন দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) তাসমীমা।
 
তিনি বলেন, ‘একজন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা ঠিকই বুঝেছেন, কোনো দেশই অর্ধশক্তি নিয়ে শক্তিশালী হতে পারে না। দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ও অগ্রগতি চাইলে নারীকে ক্ষমতায়িত, স্বাবলম্বী করতে হবে। কারণ দেশের অর্ধেকই তো নারী। ’
 
পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর সহধর্মিনী তাসমীমা হোসেন বলেন, অনেক প্রতিকূলতা সয়ে যাই আমরা। সব নারীই প্রতিমুহুর্তে নানা প্রতিকূলতা সয়ে চলে। কারণ পুরুষের ‘মাইন্ডসেট’ সেরকমই।
 
তিনি বলেন, পুরুষরা নিজেদের স্বার্থে নারীকে দুর্বল করে রাখতে চায়। ধর্মের দোহাই দেয়। পরিবারের পুরুষ সদস্যটি অযথাই নারী সদস্যকে প্রতিপক্ষ ধরে নেয়। এতে সমস্যা তৈরি হয়।
 
এই সাংবাদিক বলেন, ‘কর্মক্ষেত্রেও তাই, পুরুষরা নারীর অগ্রগতি দেখতে অভ্যস্ত নয়। তাই তারা নানা সমস্যা তৈরি করে। নারী সহকর্মী যথেষ্ট যোগ্যতাসম্পন্ন হলে পুরুষ সহকর্মীর ঈর্ষার শিকার হয় অনেক ক্ষেত্রেই। ’ 
 
তাসমীমা হোসেন বলেন, শহরে নারীর ক্ষমতায়নের চেষ্টা হচ্ছে, গ্রামেও তাই। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় কম। অথচ নারী অর্থনৈতিকভাবে যতই স্বাবলম্বী হবে, ততই সমাজের কল্যাণ।
 
ব্যাখ্যা করেন তিনি, ‘পরিবারের পুরুষ সদস্যটি দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন, মৃত্যুবরণ করতে পারেন। নারী সদস্যটি যদি অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী থাকেন, পরিবারটি ভাঙনের শিকার হয় না; হঠাৎ করে আসা প্রতিকূলতা সামলে নেওয়া সম্ভব হয়। ’
 
তিনি বলেন, কোনো নারী নিজের স্বার্থে সন্তান, মা-বাবা বা পরিবারের সদস্যকে ফেলে দিতে পারে না। তারা নিজের সবটুকু দিয়ে পরিবারকে সহযোগিতা করে। তাদের এই আবেগকে দুর্বলতা হিসেবে নয়, বরং রাষ্ট্রীয়ভাবে কাজে লাগানো যায়। সামাজিক সম্পর্কের দৃঢ়তা বাড়াতে এটি কাজ দেবে।
 
‘তাছাড়া দেশের অর্ধেক শক্তি কাজে না লাগিয়ে অব্যবহৃত রেখে দিয়ে অগ্রগতি আশা করা যায় না’- বলেন তিনি।
 
তাসমীমা বলেন, মেয়েদের শারীরিক দুর্বলতার সুযোগ নেওয়া হয়। সেই অজুহাতে তাদের পেছনে ফেলে রাখার চেষ্টা হয়।
 
‘এক্ষেত্রে প্রতিটি নারীকে সচেতন হতে হবে’- পরামর্শ তার।
 
‘এখনো নারীরা চরমভাবে নিরাপত্তার অভাববোধ করেন’- বলেন তাসমীমা।
 
তিনি বলেন, এখনো যে সমস্যাটি প্রকটভাবে রয়েছে, তা হল নিরাপত্তার অভাব। নিরাপদে বিচরণ করতে পারছে না তারা। সব সময় শঙ্কিত থাকতে হয় নিরাপত্তা না পেয়ে।
 
নিজের বিস্ময় প্রকাশ করেন তাসমীমা বলেন, ‘অবাক লাগে, এখনো নারীরা সুন্দর ও ফর্সা নারী গৃহকর্মী রাখতে ভয় পান। স্বামী বা পরিবারের পুরুষ সদস্যের অবজ্ঞা ও অবহেলার কারণে এই মানসিকতা কাজ করে তাদের মধ্যে। ’
 
তিনি বলেন, সৌদি আরবকে আমরা তীর্থস্থান মনে করি, সেখানেই এই অবস্থা! তাহলে পুরুষরা ধর্ম কতটা রক্ষা করছে? কেন স্ত্রীকে এমন ভয় ও অনিশ্চয়তায় থাকতে হবে?
 
‘কারণ এখনো পুরুষরা নারীকে পণ্য হিসেবে গণ্য করে, শয্যাসঙ্গী হিসেবে ও রূপের ভিত্তিতে নারীর মূল্যায়ণ করে। বিশ্বাসের জায়গাটিতে আঘাত পেতে পেতে ক্রমশই অন্যরকম হয়ে যায় অনেক নারী’ বলেন তাসমীমা।
 
তিনি বলেন, সংবিধানে নারীর অধিকার দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার বাস্তবায়ন হচ্ছে না। নারীর সাথে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকের মতো আচরণ করা হচ্ছে। পুরুষরা প্রতিপক্ষ ধরে নিয়ে তাদেরকে সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করছে।
 
এবারের নারী দিবসের স্লোগান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নারী দিবসের এবারের স্লোগানটি বাস্তবে পরিণত করতে হবে। এবার বলা হচ্ছে- ‘নারীর ক্ষমতায়ন মানবতার উন্নয়ন’। আসলেও তাই। মানবতার উন্নয়নের স্বার্থেই নারীকে ক্ষমতায়িত করতে হবে।
 
তাসমীমা বলেন, নারীশিক্ষায় জোর দিতে হবে। তাদেরকে শিক্ষিত, অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী ও সচেতন হতে হবে। আর পুরুষকেও বুঝতে হবে, তাদের নিজের স্বার্থেই নারীকে স্বাবলম্বী হতে দেওয়া উচিৎ। তাদের মনে রাখা উচিৎ, বিপদের সময়টিতে কাছের নারীটিই হবেন তার সবচে সহযোগী-শক্তি।
 
প্রসঙ্গত, প্রতিবছর ৮ মার্চ আন্তর্জাতিকভাবে পালিত হচ্ছে নারীদিবস। প্রতিবারই এর একটি স্লোগান থাকে। এবার নারীদের ক্ষমতায়নের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে স্লোগান রাখা হয়েছে- ‘নারীর ক্ষমতায়ন, মানবতার উন্নয়ন’।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৮ ঘন্টা, মার্চ ০৮, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।