ঢাকা, শুক্রবার, ১৬ মাঘ ১৪৩১, ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ০০ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

নারী দিবস কী, জানে না শ্রমজীবী নারীরা

শফিক শামীম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৭ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০১৫
নারী দিবস কী, জানে না শ্রমজীবী নারীরা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: নারী দিবস কী জানে না দিনমজুর নারীরা। তারা শুধু জানে কাজ করলে টাকা পাওয়া যাবে, কাজ না করলে পাওয়া যাবে না।



প্রতিবছর ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা হয়। বাংলাদেশেও নারী দিবস পালিত হচ্ছে। কিন্তু নারী দিবসের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে সচেতন নয় দেশের শ্রমজীবী নারীরা।

রাজধানীর নতুনবাজারে শ্রম বিক্রি করতে এসেছেন ৩ সন্তানের জননী রাবেয়া আক্তার (৩৫)। আন্তর্জাতিক নারী দিবস সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা কোনো দিবস বুঝি না। অভাবের তাড়নায় সংসার চালানোর জন্য ঢাকায় এসেছি। তার স্বামী লাল মিয়াও ঢাকায় রাজমিস্ত্রীর কাজ করেন বলে জানান তিনি।   

রাবেয়া আক্তার বলেন, আমরা পুরুষের সমান কাজ করি। কিন্তু আমাদের বেতন তাদের মতো দেয় না। পুরুষের মতো বেতন পেলে আমাদের কোনো সমস্যা থাকতো না।

রাবেয়ার মতো অনেককেই শ্রম বিক্রির হাটে এসেছেন। তারা প্রতিদিন ভোরে রান্নাসহ বাসার সব কাজ সেরে সকাল ৭ টার মধ্যে বেরিয়ে পড়েন। শ্রম বিক্রির হাট থেকেই কাজের সন্ধান করেন তারা। কোনো কোনো দিন কাজ না পেয়ে খালি হাতে বাসায় ফেরেন।  

গার্মেন্টস কর্মী হাফিজা (২৭) বলেন, প্রতিবছর নারী দিবস পালন করা হলেও আমাদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয় না।

তিনি বলেন, অন্যায়ভাবে প্রতিনিয়ত আমাদের চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে। সময় মতো বেতন দেওয়া হচ্ছে না। ওভার টাইমের টাকাও সময় মতো পাই না। এই হচ্ছে আমাদের নারী অধিকার।

অথচ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন,

আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই!
বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর,
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।
  
বিশ্বে যা-কিছু এলো পাপ-তাপ বেদনা অশ্রুবারি,
অর্ধেক তার আনিয়াছে নর, অর্ধেক তার নারী।
নরককুণ্ড বলিয়া কে তোমা’ করে নারী হেয়-জ্ঞান?
তারে বলো, আদি পাপ নারী নহে, সে যে নর-শয়তান।
 
অথবা পাপ যে-শয়তান যে-নর নহে নারী নহে,
ক্লীব সে, তাই সে নর ও নারীতে সমান মিশিয়া রহে।

এ-বিশ্বে যতো ফুটিয়াছে ফুল, ফলিয়াছে যতো ফল,
নারী দিলো তাহে রূপ-রস-মধু-গন্ধ সুনির্মল।
তাজমহলের পাথর দেখেছ, দেখিয়াছ যত ফল,
অন্তরে তার মোমতাজ নারী, বাহিরেতে শা-জাহান।

জ্ঞানের লক্ষ্মী, গানের লক্ষ্মী, শস্য লক্ষ্মী নারী,
সুষমা-লক্ষ্মী নারীই ফিরিছে রূপে রূপে সঞ্চারি।
 
পুরুষ এনেছে যামিনী-শানি-, সমীরণ, বারিবাহ!
 
দিবসে দিয়াছে শক্তি সাহস, নিশীতে হ’য়েছে বধূ,
পুরুষ এসেছে মরুতৃষা ল’য়ে, নারী যোগায়েছে মধু।

শস্যক্ষেত্র উর্বর হ’ল, পুরুষ চালাল হাল,
নারী সেই মাঠে শস্য রোপিয়া করিল সুশ্যামল।

নর বাহে হলো, নারী বহে জল, সেই জল-মাটি মিশে’
ফসল হইয়া ফলিয়া উঠিল সোনালী ধানের শীষে।

আজকের দিনেও দেশের উন্নয়নে নারীর অবদান কবিতার মতই সত্যি।

বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধী দলীয় নেত্রী, জাতীয় সংসদ উপনেতা, স্পিকার ও কৃষিমন্ত্রী নারী। এছাড়া সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সাবেক শ্রম প্রতিমন্ত্রী, ডাক তার ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী, নারী ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীসহ অনেকেই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন।

যদিও আবহমান কাল ধরে বৈষম্য নিয়েই দিনাতিপাত করছেন দেশের শ্রমজীবী সাধারণ নারীরা।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৭ ঘণ্টা, ০৮ মার্চ, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।