সিলেট: বিজ্ঞান-লেখক ও ‘মুক্তমনা’ ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেফতার শফিউর রহমান ফারাবীর সিলেট শহরের বাসভবনে অভিযান চালিয়েছে ঢাকা থেকে যাওয়া তিন সদস্যের গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) দল।
রোববার (০৮ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত অভিযান চালান তারা।
সিলেট কোতোয়ালি থানার সেকেন্ড অফিসার উপপরিদর্শক (এসআই) ফয়েজ আহমদ ফয়েজ বাংলানিউজকে এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, নগরীর মুন্সীপাড়ার ষোল/ডি-নং হোল্ডিংয়ের মুজিবুর রহমানের বাড়ির তৃতীয় তলায় ফারাবীর ভাড়া ফ্ল্যাটে অভিযান চালায় ঢাকা থেকে যাওয়া ডিবির তিন সদস্যের একটি দল।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মো. রহমত উল্লাহ জানান, মুন্সীপাড়ার ওই বাড়িতে ফারাবী তার মা ও বোনকে নিয়ে বসবাস করতেন। তবে অভিযানের সময় ওই ফ্ল্যাটে কেউ ছিলেন না। এ সময় ফ্ল্যাট থেকে পুলিশ একটি ল্যাপটপ, একটি ডেস্কটপের সিপিইউ এবং বেশ কিছু কাগজপত্র জব্দ করে।
এ বিষয়ে ভবন মালিক মুজিবুর রহমানের বাসার কেউ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই বাসার এক নারী জানান, প্রায় এক বছর আগে বাসাটি ভাড়া নেন ফারাবী। কীভাবে কার মাধ্যমে ভাড়া নেন, এ বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি তিনি।
তিনি বলেন, যা বলার পুলিশের কাছে বলেছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফারাবীর অন্য প্রতিবেশীরা জানান, সব সময় ফারাবীর চোখ থাকতো মোবাইল ফোনের দিকে। মুন্সীপাড়া মসজিদে মোবাইল ব্যবহার নিয়ে কয়েকবার মুসল্লিদের তোপের মুখেও পড়তে হয়েছে তাকে। এরপর তাকে আর দেখা যায়নি। সংবাদমাধ্যমে ছবি দেখার পর তারা তাকে চিনেছেন।
তারা জানান, সব সময় মোবাইল ফোনে কথা বলার কারণে মুসল্লিরা ফারাবীকে মসজিদে মোবাইল ফোন নিয়ে যেতে বারণ করেছিলেন। তাকে সব সময় তারা নিঃসঙ্গ চলাচল করতে দেখেছেন।
প্রসঙ্গত, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত পৌনে নয়টার দিকে একুশে বইমেলা থেকে বিজ্ঞান-লেখক ও ‘মুক্তমনা’ ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায় ও তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা বাসায় ফিরছিলেন। পথিমধ্যে টিএসসি এলাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেট পেরিয়ে ফুটপাত দিয়ে শাহবাগের দিকে যাওয়ার সময় পেছন থেকে সন্ত্রাসীরা চাপাতি দিয়ে তার মাথার পেছনে কোপাতে থাকেন।
এ সময় অভিজিতের স্ত্রী বন্যা হাত দিয়ে ঠেকাতে গেলে তার হাতের আঙুল কেটে পড়ে যায় এবং অভিজিৎ উপুড় হয়ে পড়ে যান।
আহত বন্যার চিৎকার শুনে একটি ফটো এজেন্সির ফটো সাংবাদিক জীবন আহম্মেদ একজন পুলিশ সদস্যের সহায়তায় গুরুতর আহত অবস্থায় অভিজিৎ ও বন্যাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে দেন। পরে চিকিৎসকেরা অভিজিৎ রায়কে মৃত ঘোষণা করেন। আর বন্যাকে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এদিকে, ঘটনার পর পরই ‘আনসার বাংলা সেভেন’ নামে টুইটারের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে বলা হয়, ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য অভিজিৎকে হত্যা করা হয়েছে।
অপরদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অভিজিৎকে হত্যার হুমকি দেওয়ায় প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে নাম উঠে আসে ফারাবীর। গত ২ মার্চ ফারাবীকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে আটক করে র্যাব।
বর্তমানে মামলাটির তদন্ত করছে ডিবি পুলিশ। অভিজিৎ বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈত নাগরিক হওয়ায় তার হত্যা তদন্তে সহায়তা করছে দেশটির অভ্যন্তরীণ তদন্ত সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৮ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০১৫/আপডেটেড: ১৭০১ ঘণ্টা