ঢাকা, শুক্রবার, ১৬ মাঘ ১৪৩১, ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ০০ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

ঐতিহাসিক সেই ‘ব্লাড টেলিগ্রাম’ এখন মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে

আদিত্য আরাফাত, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০১ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০১৫
ঐতিহাসিক সেই ‘ব্লাড টেলিগ্রাম’ এখন মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে ছবি: দীপু/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক সেই ‘ব্লাড টেলিগ্রাম’ এখন বাংলাদেশে। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় অবস্থিত মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে শনিবার দুপুর থেকে সভার জন্য উন্মুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন এই ঐতিহাসিক দলিল।



স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৩ বছর পর আলোচিত এ ব্লাড টেলিগ্রাম বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের কাছে হস্তান্তর করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

রোববার (০৮ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে টেলিগ্রামের মূলকপি হস্তান্তর করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া স্টিফেন্স ব্লুম বার্নিকাট। এত দিন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের এ দলিল যুক্তরাষ্ট্রের কাছেই ছিল।

মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে এ টেলিগ্রাম হস্তান্তরের সময় বার্নিকাট বলেন, মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরকে আজকে এমন একটি অমূল্য উপহার দিতে যাচ্ছি, যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতির বর্হিভুত ছিল। কিন্তু ফরেন সার্ভিসের কর্মকর্তারা বাংলাদেশের পক্ষে শক্তভাবে অবস্থান নিয়ে স্বাধীনতাকে সমর্থন করেছিলেন। এটি একটি ঐতিহাসিক দলিল।

এ দলিল হস্তান্তরের মধ্যে দু’দেশের সম্পর্ক আরও অটুট থাকবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

বার্নিকাট বলেন, মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর এমন একটি জায়গা যেখানে বাংলাদেশের ইতিহাস সংরক্ষিত রয়েছে। দেরিতে হলেও এ যাদুঘরে আরেকটি দলিল স্থান পেয়েছে।

আর্চার কেন্ট ব্লাড (১৯২৩-২০০৪), বাংলাদেশে নিযুক্ত একজন আমেরিকান কূটনীতিক। ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের কনসাল জেনারেল নিযুক্ত হয়েছিলেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে তৎকালীন চলমান নৃশংসতা বন্ধে ব্যর্থ হওয়ায় কঠোর ভাষায় একটি টেলিগ্রাম বার্তা পাঠিয়েছিলেন তিনি। তার সেই বিখ্যাত টেলিগ্রাম বার্তা ‘ব্লাড টেলিগ্রাম’ নামে পরিচিত।

প্রসঙ্গত, ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ঢাকা শহরে গণহত্যা শুরু করে। এরপর ৬ এপ্রিল মার্কিন দূতাবাস থেকে একটি তার বার্তা পাঠানো হয়েছিল ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে।

ঢাকায় কর্মরত মার্কিন কর্মকর্তারা ২৫শে মার্চের ‘কলঙ্কিত রাতের’ গণহত্যা এবং সে বিষয়ে নিক্সন-কিসিঞ্জারের অন্ধ ইয়াহিয়া-ঘেঁষা নীতির প্রতিবাদ জানাতে সংকল্পবদ্ধ হয়েছিলেন।

তারা খুব ভেবেচিন্তে একটি তারবার্তা লিখেছিলেন যাতে স্বাক্ষর করেছিলেন ব্লাড ও তার ২০ জন সমর্থক সহকর্মী। তারা তাতে ঢাকায় ইয়াহিয়ার গণহত্যার প্রতি ওয়াশিংটনের অব্যাহত নীরবতার নিন্দা করেছিলেন।
Barnicat_01
ব্লাড তাতে কেবল স্বাক্ষরই দেন নি, বাড়তি এক ব্যক্তিগত নোটও লিখেছিলেন।

তিনি লিখেছিলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, পূর্ব পাকিস্তানে এখন যে সংগ্রাম চলছে, তার সম্ভাব্য যৌক্তিক পরিণতি হলো বাঙালিদের বিজয় এবং এর পরিণতিতে একটি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা। ’

এই ‘ব্লাড টেলিগ্রাম’ বস্তুত তখনকার নিক্সন-কিসিঞ্জারের দুর্গে বোমা ফেলেছিল। ‘দ্য ট্রায়াল অব হেনরি কিসিঞ্জার’ নামীয় গ্রন্থের লেখক ক্রিস্টোফার হিচিনসের মতে ‘মার্কিন ইতিহাসে ব্লাড টেলিগ্রামের কোনো তুলনা নেই। ’ কিসিঞ্জার এ জন্য ব্লাডকে নির্বাসন দণ্ড দিয়েছিলেন।

আলোচিত এ টেলিগ্রামে যা লেখা হয়েছে তা হচ্ছে—
আমাদের সরকার গণতন্ত্রের দমনকে অভিযুক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে। আমাদের সরকার নিদারুণ নিষ্ঠুরতাকে অভিযুক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে। আমাদের সরকার তার নাগরিকদের রক্ষা করার জন্য শক্তিশালী ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছে যেখানে একই সময়ে পশ্চাৎমূখী নতজানুতায় প্রভাবশালী পশ্চিম পাকিস্তানী সরকারকে শান্ত করতে এবং তাদের বিরুদ্ধে যেকোনো ন্যায্য নেতিবাচক আন্তর্জাতিক জনসংযোগের চাপ হ্রাস করতে সচেষ্ট থেকেছে। আমাদের সরকার এমন প্রমাণিত হয়েছে যাকে অনেকেই মানসিক দেউলিয়া বিবেচনা করবে, (...) কিন্তু আমরা বেছে নিয়েছি মধ্যস্থতা না করা, এমনকি মানসিকভাবে, আওয়ামী দ্বন্দ্বের ক্ষেত্রে, যাতে দুর্ভাগ্যজনকভাবে বহুল শ্রমসাধ্য পরিভাষা 'গণহত্যা' প্রযোজ্য হয়, এটি সার্বভৌম রাস্ট্রের পরিষ্কার আভ্যন্তরীন বিষয়। সাধারণ আমেরিকানরা চরম-বিরক্তি প্রকাশ করেছে। আমরা, পেশাদার বেসামরিক চাকুরে হিসেবে, বর্তমান কূটনীতির সাথে আমাদের ভিন্নমত প্রকাশ করি এবং মনেপ্রাণে চাই যে আমাদের সত্যিকার এবং স্থায়ী স্বার্থ এখানে চিহ্নিত হবে এবং আমাদের কূটনীতি পুন:নির্ধারিত হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০২ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।