ঢাকা: একটা শ্রেণি ধর্মকে ব্যবহার করে নারীদের বন্দি করে রাখতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তবে, এ ধরনের প্রতিকূলতা মোকাবেলা করেও নারীদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
রোববার (৮ মার্চ) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের অনুষ্ঠান উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকির সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- ইউএনএফপিএ‘র প্রতিনিধি আর্জেন্টিনা মাতাভেল পিচিন।
‘ইসলাম নারীর অধিকার নিশ্চিত করেছে’– সবাইকে এ কথা মনে রাখার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা শ্রেণি আমাদের ইসলামের নাম করে নারী সমাজকে বন্দি করে রাখতে চায়। অথচ একমাত্র ইসলাম ধর্মই নারীদের অধিকার নিশ্চিত করেছে। এটা অনেকেই ভুলে যায়।
তিনি বলেন, ইসলাম ধর্ম কখনও কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেনি। কিন্তু যারা আজকে ইসলাম ধর্মের নাম করে নারীদের বাধা দিতে চায়, তারা আসলে সত্যিকারের ইসলাম ধর্ম ও ধর্মের অনুশাসন হয়তো দেখেও না দেখার চেষ্টা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রথম ইসলাম ধর্মগ্রহণ যিনি করেছিলেন, তিনিও একজন নারী ছিলেন। তিনি ছিলেন বিবি খাদিজা (রা.)। তিনি নিজে ব্যবসা-বাণিজ্য করতেন। ইসলামের জন্য প্রথম শহীদও হয়েছিলেন একজন নারী।
নারীর উন্নয়ন ছাড়া দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়- উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, একটি দেশকে এগিয়ে নিতে হলে নারী-পুরুষকে সমানভাবে উন্নত করতে হবে। এক অংশকে পেছনে ফেলে একটি সমাজ-একটি দেশ উন্নত হতে পারে না।
বাংলাদেশে নারীর উন্নয়ন ও অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা নারীর উন্নয়নে বাংলাদেশের প্রশংসা করছে। বাংলাদেশ সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনে বিশ্বে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রির্পোট ২০১৪ অনুযায়ী ১৪২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৬৮তম। রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে নারীর অংশগ্রহণের মান হিসেবে বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম।
বাংলাদেশের নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা এবং এদেশের নারীদের কর্মস্পৃহা, দক্ষতা ও ত্যাগের ফলে জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে নারীর অবস্থান সুদৃঢ় হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিচার বিভাগ, বিশ্ববিদ্যালয়, সশস্ত্র বাহিনী, বেসামরিক প্রশাসন, পুলিশ, ব্যাংকিংসহ বিভিন্ন পেশার উচ্চপদে নারীদের পদায়নের চিত্রও এসময় তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে নারী উন্নয়ন ও নারী শিক্ষার প্রসারে সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
নারী নির্যাতন বন্ধে সরকারের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা নির্যাতিত নারী ও শিশুদের জন্য সারাদেশে ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার এবং ৬০টি ওয়ান-স্টপ-ক্রাইসিস সেল স্থাপন করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধের কড়া সমালোচনা করে বলেন, খুব দুঃখ লাগে, যখন আমরা দেখি প্রতিটি ক্ষেত্রে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, উন্নত-সমৃদ্ধশালী হচ্ছে, সারা বিশ্বাব্যাপী বাংলাদেশ যখন সুনাম অর্জন করেছে- ঠিক সেই সময় একসময়ের বিরোধীদলীয় নেত্রী, বর্তমানে না সংসদে না সরকারে, নিজের অফিসে বসে পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ পুড়িয়ে মারছেন। অন্তসত্ত্বা নারীকেও পুড়িয়ে মেরে ফেলেছে। মানুষকে পুড়িয়ে মারা; এর থেকে জঘণ্য কাজ আর কী হতে পারে? অথচ সেই জঘণ্য কাজটি তিনি করে যাচ্ছেন। এ রকম মানসিকতা নিয়ে তিনি কীভাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন?
সহিংসতার বিরুদ্ধে নারীদের সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারী সমাজকে আহ্বান জানাবো, এ ধরনের জঘণ্য ঘটনা, হীন কর্মকাণ্ড, মানুষ পুড়িয়ে মারার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। সবাইকে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এই ধরনের জঘণ্য ঘটনা বাংলাদেশে ঘটতে দেওয়া যায় না।
মানুষ পুড়িয়ে হত্যার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিচার হবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নারীর উন্নয়ন-অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করেন ইউএনএফপিএ‘র প্রতিনিধি মাতাভেল।
নারী দিবসের অনুষ্ঠান উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রীসহ অতিথিরা মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৭ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০১৫/আপডেট ১৫২৪ ঘণ্টা