ঢাকা: নারীর অগ্রগতি সূচকে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে। নারী আর অবরোধবাসিনী নন।
গাড়ি চালনার মতো রোমাঞ্চকর ও ঝুঁকিপূর্ণ পেশাতেও নারীদের উপস্থিতি দেশের বাইরে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে। পুরুষের তুলনায় নারীদের হাতে ড্রাইভিংকে অনেকেই নিরাপদ মনে করেন। নারীরা অনেক সর্তকতার সাথে গাড়ি চালান বলে ধীরে ধীরে নারী গাড়িচালকদের কদর বেড়েই চলছে সমাজে। অনেকের দাবি নারীর হাতে গাড়ি মানে নিশ্চিতে গন্তব্য পাড়ি।
বিআরটিএর চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘’নারী গাড়ি চালকরা ভালো, দক্ষ। যারা ড্রাইভিং-এ আছে তাদের প্রত্যেকে পাঁচ মাস মেয়াদী ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ নেওয়া। এ পর্যন্ত নারী ড্রাইভারদের বিরুদ্ধে কোন ‘কমপ্লেইন’ (অভিযোগ) আসেনি। ‘’
তিনি বলেন, “নারীরা চালক হিসেবে ভালোভাবে গাড়ি চালায়। একজন পেশাদার গাড়ি চালকের আচার-আচরণ যেমন হওয়া দরকার তার সবই আছে নারী গাড়ি চালকদের মধ্যে। বরং আচার-আচরণের ক্ষেত্রে নারীরা আরো বেশি ভদ্র, অমায়িক।
বাংলাদেশ রোডস অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) সর্বশেষ হিসেবে অনুযায়ী এ পর্যন্ত ১১ হাজার ৯৭৭ নারীচালক লাইসেন্স নিয়েছেন। এদের মধ্যে অপেশাদার লাইসেন্স নিয়েছেন ১১ হাজার ৬৬৮ জন নারী। আর পেশাদার নারীচালক হিসেবে লাইসেন্স নিয়েছেন ৩০৯ জন।
৩০৯ জন পেশাদার নারী চালকের মধ্যে ভারি গাড়ি চালনার লাইসেন্স নিয়েছেন মাত্র দুইজন। মাঝারি আকারের গাড়ি চালানোর লাইসেন্স দু’জন, লাইট (জিপ, কার, মাইক্রোবাস) ২৮৬ জন, মোটরসাইকেল চালনার লাইসেন্স ১৮ জন এবং থ্রি হুইলার চালনার লাইসেন্স নিয়েছেন একজন নারী।
নারীদের গাড়ীর চালনায় দক্ষ করার জন্য সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাগুলো এগিয়ে আসছে। নারীদের নিয়ে ব্র্যাক, নিসচা, নিটল-নিলয় গ্রুপসহ কয়েকটি এনজিও কাজ করছে। কেউ কেউ সরাসরি প্রশিক্ষণ না দিলেও এ ব্যাপারে সচেতনতার কাজ করছে।
ব্র্যাকের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ব্র্যাক থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া ৯০ জনের মধ্যে লাইসেন্স পেয়েছে ৭৫ জন। বাকিদের ব্যাপারটি প্রক্রিয়াধীন আছে। লাইসেন্স পাওয়া সবাই বিভিন্ন স্থানে চাকরি করছেন। এর মধ্যে ব্র্যাক সেন্টারে একজন, ব্র্যাক ব্যাংকে চারজন, চুয়াডাঙ্গায় একটি বিদেশি সংস্থায় একজন, সাজেদা ফাউন্ডেশনে তিনজন ও বাকিরা ব্যক্তিগত গাড়িচালক হিসেবে চাকরি করছেন। অনেকেই ব্র্যাকের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলে জানা গেছে।
ব্র্যাক থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে একটি বেসরকরি সংস্থায় কাজ করছেন সবিতা রানী। পেশায় নিজের অভিজ্ঞতার কথা বাংলানিউজকে জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ নেওয়ার আগে অনেকেই অনেক কথা বলেছে। চাকরি পাওয়া যাবে না। পেলেও নিরাপত্তা নেই। এখন আর তা মনে হচ্ছে না। ভালোই আছি। পরিবারের সবাইকে নিয়ে বেশ ভালোভাবে কেটে যাচ্ছে। ’
তিনি বলেন, দেশে এখনও নারী ড্রাইভাররা সেভাবে পরিচিতি লাভ না করায় এখনো নানা কথা শুনতে হয়। রাস্তায় গাড়ি নিয়ে নামলে নানা জন নানা কথা কয়। একসময় হয়তো এই অভিযোগ আর থাকবে না।
তবে এই পেশায় আসা নারীদের মতে, দেশের সামাজিক ও নিরাপত্তাজনিত কারণে ড্রাইভিং পেশায় এখনো মেয়েদের কাজ করার পরিবেশ পুরোপুরি তৈরি হয়নি। এ পেশায় মেয়েদের সংখ্যা বাড়লে পরিবেশ তৈরি হয়ে যাবে। তখন নারী শুধু জীবিকার তাগিদে নয়, বরং রোমাঞ্চকর একটি পেশা হিসেবে আসতে উৎসাহী হবে।
কর্মসংস্থানের তাগিদ নারীদের পিছিয়ে রাখতে পারেনি। শুধু শখের বশে গাড়ি চালনা নয়, নারীরা এখন এ পেশায় যোগ দিচ্ছেন জীবিকা অর্জনের জন্য। চাকরি পেতেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই ব্যক্তিগত বা অফিসের গাড়ি চালনার কাজ নিচ্ছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৭, ২০১৫