ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ মাঘ ১৪৩১, ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ০০ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

নারীও ধরবে স্টিয়ারিং

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৮ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০১৫
নারীও ধরবে স্টিয়ারিং ছবি : নাজমুল হাসান/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: নার্গিস সুলতানা। ফার্স্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার (এফএজিএম) হিসেবে জনতা ব্যাংকে প্রায় ১৫ বছর ধরে কর্মরত আছেন।



এক মেয়ে ফারিন হোসেন খান নওরিন, ছেলে ফাহমিদ হোসেন খান নাভিদকে নিয়ে বসবাস করেন ধানমন্ডির কলাবাগানে।
 
স্বামী ব্যস্ত থাকায় চাকরির মধ্য থেকে সন্তানদের সময় দিতে হয় তাকে।

শনিবার ধানমন্ডি কলাবাগান লেকসংলগ্ন পানসি রেস্টুরেন্টের সামনে প্রাইভেটকার ড্রাইভ করার প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন তিনি। এ সময় কথা হয় তার সঙ্গে।

ড্রাইভিং শেখা প্রসঙ্গে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, স্বামী ব্যবসার কাজে ব্যস্ত থাকেন। ছেলে-মেয়েদের অনেক সময় স্কুলে নিতে গেলে ড্রাইভার ঠিক মতো আসে না। তাই, নিজে ড্রাইভিং শিখে ছেলে-মেয়েদের স্কুলে নেবো। এছাড়া সন্তানদের লং-ড্রাইভে নিয়ে যাবো। স্বামীর ওপর নির্ভরশীল হবো না। সপ্তাহে দুদিন ছুটি পাই। এ সময়ে তাদের নিয়ে ঘুরতে পারবো। শুধু পুরুষ কেন, নারীও ধরবে স্টিয়ারিং।
 
ড্রাইভিং শেখা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আগে আমার প্রাইভেটকার ছিল না। তাই, ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও শেখা হয়নি। এখন আল্লাহ আমার সেই সামর্থ্য দিয়েছেন; ড্রাইভিং শিখছি। আমি সব সময় নিজের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। জন্মের পর থেকে কারোর ওপর নির্ভর করিনি। তাই, এখনও করতে চাই না। শুধু স্বামীর ওপর নির্ভর করবো কেন?
 
তিনি বলেন, নিজেই বাচ্চাদের স্কুলে পৌঁছে দিয়ে ব্যাংকে চলে যাবো। এর মাধ্যমে সংসারে স্বামীর কাজের চাপও কমে আসবে।

নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখছেন বাংলাদেশের নারীরা। এগিয়েছেন অনেক দূর। মাড়িয়েছেন অনেকটা পথ।

এদেরই একজন ড. সালমা করিম। তিনি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) প্রফেসর।
 
শৈশব থেকেই তিনি দুরন্ত ও সাহসী ছিলেন তিনি। নিজেকে ভিন্ন পরিবেশে গড়ে তুলেছেন। স্কুলে পড়ার সময় সাইকেলে চড়ে ফরিদপুর দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। অপরদিকে, কলেজেও মোটরসাইকেল ড্রাইভ করে ক্লাস করতে গেছেন।
 
বর্তমানে তিনি সব ক্ষেত্রেই সফল। অফিসের প্রয়োজনে তাকে এখন দেশবিদেশ ঘুরে বেড়াতে হয়। প্রায় ১২ বছর ধরে নিজেই প্রাইভেটকার চালান ড. সালমা করিম।
 
নিজের এগিয়ে চলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্কুলে পড়ার সময় থেকেই ফরিদপুর দাপিয়ে বেড়িয়েছি। কলেজে পড়ার সময়ও মোটরবাইকে করে কলেজে গেছি। প্রায় ১২ বছর ধরে আমি নিজেই প্রাইভেটকার ড্রাইভ করি। এটাকে আমি উপভোগ করি। নারীদের আরো এগিয়ে যাওয়া দরকার। এখনও কাঙ্ক্ষিত সফলতা অর্জন করেনি নারী। সে কারণে আরো অনেক দূর এগিয়ে যেতে হবে তাকে।
 
তিনি বলেন, অনেক সময় ড্রাইভার একদিনের ছুটির কথা বলে সপ্তাহ পার হয়ে যায়। কিন্তু আসার আর নাম থাকে না। তাছাড়া ড্রাইভার গাড়ি ড্রাইভ করলে গাড়ি তাড়াতাড়ি বিকল হয়ে যায়। এ জন্য নিজেই গাড়ি চালাই। কারোর ওপর ভরসা করি না। এছাড়া গাড়িটাও অনেক ভালো থাকে।

নারীর অগ্রগতির বিষয়ে ড. সালমা করিম বলেন, প্রত্যেক নারীই ফ্যামিলির সবার প্রতি দায়িত্ববোধ বজায় রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। সংসারে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভেদাভেদ করলে হবে না। আমি যদি বলি, বাইরে আমি অনেক কাজ করি; তাহলে ঘরে কেন কাজ করবো, তা হলে হবে না! স্বামীর প্রতি রেসপেক্ট (শ্রদ্ধা) থাকলে অধিকার এমনিতেই আসবে।

তিনি বলেন, অবসর সময়ে আমি ফুলগাছে পানি দেই ও পরিবারের জন্য রান্নাবান্না করি। সবার প্রতি দায়িত্ব রেখেই নারীকে ঘরের বাইরে এগিয়ে যেতে হবে। বিশেষ করে যে  নারীরা চালকের আসনে আছেন।

নারীর দায়িত্বশীলতার উদাহরণ দিয়ে ড. সালমা আলী বলেন, পুলিশ, সেনা ও বিমানবাহিনীতেও চালকের আসনে রয়েছেন অনেক নারী। অনেকে আবার দেশে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ নিয়ে বিদেশে যেতে চান।
 
হাতিরঝিল এলাকায় প্রাইভেটকার চালানোর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন সাদিয়া ইসলাম। তিনি নগরীর রামপুরার মধুবাগে বসবাস করেন। প্রাইভেটকার প্রশিক্ষণ নেওয়া প্রসঙ্গে সাদিয়া বাংলানিউজকে বলেন, স্বামী কানাডায় থাকে। বছর শেষে আমিও স্থায়ীভাবে সেখানে চলে যাবো। স্বামী কাজের জন্য অনেক ব্যস্ত থাকবে। নিজেকে সার্ভাইভ (খাপ খাইয়ে নেওয়া) করার জন্য ড্রাইভিং শিখছি।
 
অনেক নারী দেশে প্রশিক্ষণ নিয়ে বিদেশে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন। তাদের একজন নন্দিতা দেবনাথ। তার বাবার নাম ইন্দ্রজিৎ দেবনাথ। ধানমন্ডির গ্রিণরোডে বসবাস করেন। বর্তমানে কানাডায় তিনি নিজেই প্রাইভেটকার ড্রাইভ করেন।

নন্দিতা দেবনাথের মতো হাজারও নারী ড্রাইভিংয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে বিদেশে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
 
এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রো মোটর ড্রাইভিং মালিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি দিদারুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের কাছে যে সব নারী ড্রাইভিংয়ে ট্রেনিং নিয়েছেন, তাদের অনেকেই বিদেশে গেছেন।

অনেকে আবার সন্তানদের স্কুলে আনা-নেওয়া থেকে শুরু করে অফিসেও প্রাইভেটকার ড্রাইভ করে যাওয়া আসা করেন।

তিনি বলেন, আগের তুলনায় এখন অনেক নারীই ড্রাইভিংয়ে ট্রেনিং নিতে আমাদের কাছে আসেন। অনেকে আমাদের কাছে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বামীর সঙ্গে বিদেশে পাড়ি জমান।
 
পুরুষের পাশাপাশি নারীরা এখন অনেক ক্ষেত্রেই নারীরা চালকের আসনে। একই সঙ্গে পথ চলছেন তারা। নারী-পুরুষের সমতাই একদিন বন্ধুর পথকে করবে কল্যাণমুখী সমাজ। বাসযোগ্য করবে পৃথিবী!
 
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৯ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।