ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ মাঘ ১৪৩১, ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ০০ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

‘চ্যালেঞ্জিং জেনেই এসেছি পুলিশে’

ইমরান আলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৭ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০১৫
‘চ্যালেঞ্জিং জেনেই এসেছি পুলিশে’ সহকারী পুলিশ সুপার তানজিনা আকতার/ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: শৈশবে পুলিশের পোশাক দেখলেই মনে হতো, আমি একদিন পুলিশ হবো। বাবা সেনাবাহিনীর সদস্য হলেও আমার মনে বাসা বেঁধেছিলো পুলিশ হওয়ার বাসনা।

ছোট বেলার ইচ্ছেটাই পরবর্তীতে আরো অদম্য হয়ে ওঠে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ কল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে স্নাতক ও স্নাতোকোত্তর শেষ করে বসে থাকতে হয়নি। ৩১তম বিসিএসে বাংলাদেশ পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করি। এরপর যখন পুলিশের পোশাক পরলাম তখন স্বপ্নে লালন করা ইচ্ছেটি বাস্তবে দেখে মনে মনে হাসলাম। আর ভাবলাম সত্যিই কল্পনাকে লালন করে সে অনুযায়ী কাজ করলে কল্পনাও সত্যিই হয়। ’
 
কল্পনাকে সত্যি করা সহকারী পুলিশ সুপার তানজিনা আকতার পুলিশ হওয়ার কাহিনী এভাবেই শোনান।
 
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া থানার মাজহাটি গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আবু তাহের ও গৃহিনী হেলেনা খাতুনের তিন সন্তানের মধ্যে প্রথম তানজিনা আকতার। কালিয়াচাপড়া চিনিকল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও রফিকুল ইসলাম মহিলা কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে কৃতিত্বের সঙ্গে পাশ করেন তিনি। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে মস্টার্স শেষ করে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন।
 
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় নিয়োজিত বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত তানজিনা আকতার। যোগদানের মাত্র ক’মাসের মধ্যেই পেশাদারিত্বে মুন্সিয়ানা দেখিয়ে আলোচনায় এসেছেন তিনি।

আন্তর্জাতিক নারী দিবসে একজন নারী পুলিশ হয়ে তার ভাবনার কথা জানতেই কথা হয় চৌকস এই নারী পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে।
 
তানজিনা বলেন, এই পেশাককে আমি কখনো নারী হিসেবে দেখি না।   পুলিশের বিশেষায়িত এই ইউনিটতে প্রথম পোস্টিং পেয়ে অনেক খুশি। এখানকার অফিসার থেকে শুরু করে সবাই অনেক পরিশ্রমী। চেইন অব কমান্ড অনুসরণ করে প্রত্যেকটি কাজ সম্পাদন হয়।
 
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক এই বিমানবন্দরে পুলিশের নানামুখি সেবা দিতে পেরে আমি নিজেকে গর্বিত মনে করি।
 
একদিকে যেমন প্রবাসী শ্রমজীবী মানুষদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ রয়েছে, তেমনি ভিআইপি, ভিভিআইপি ব্যক্তিদের নিরাপত্তায় কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
 
স্মরণীয় ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত বছর হজে যাওয়ার জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক ব্যক্তি বিমানবন্দরে আসেন। কিন্তু সরকারি চাকরিজীবীদের হজে যেতে ইমিগ্রেশনে অনুমতিপত্র দেখাতে হয়। কিন্তু তার সেই অনুমতিপত্র না আনায় তাকে যেতে দেয়া হচ্ছিল না। হতাশ হয়ে পড়া ওই লোকটির প্রতি আমার দৃষ্টি গোচর হলে তাকে জিজ্ঞাসা করি। এক পর্যায়ে তিনি এই কথা জানালে আমি নিজে ইমিগ্রেশনে গিয়ে পরের দিন অনুমতিপত্র দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাকে ছেড়ে দেয়। পরের দিন ওই ব্যক্তির অনুমতিপত্র আমি ইমিগ্রেশনে জমা দিই।
 
তানজিনা বলেন, পুলিশ হলো বাংলাদেশ সরকারের সেবাধর্মী একটি প্রতিষ্ঠান। পুলিশ সম্পর্কে সমাজে নেতিবাচক ধারণা থাকলেও বাস্তবে এটি সত্য নয়। পুলিশের প্রতিটি সদস্য তাদের নিজেদের উপর অর্পিত দায়িত্ব ও কতর্ব্য সম্পর্কে অনেক সচেতন।
 
আর একজন নারী হিসেবে বলবো- পেশা হিসেবে পুলিশ অনেক চ্যালেঞ্জিং। আমি জেনে শুনে চ্যালেঞ্জ নেয়ার মানসিকতা থেকেই এ পেশায় এসেছি। আমি মনে করি- এখানকার প্রতিটি নারী যে কোন ধরনের চ্যালেঞ্জ নেয়ার যোগ্যতা রাখে। এই পেশায় আসার আগে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে, এরপর নিজের লক্ষ্য স্থির করে এগিয়ে যেতে হবে।
 
নিজেকে ওইভাবে প্রস্তুত করলে এই পেশা থেকে অনেক সাফল্য পাওয়া সম্ভব।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৮ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।