জাতীয় সংসদ ভবন থেকে: বিএনপি-জামায়াত জোটের অব্যহত অবরোধ-হরতাল সত্ত্বেও দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি শক্তিশালী রয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেছেন, চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটের দ্বিতীয় প্রান্তিক (জুলাই-ডিসেম্বর) পর্যন্ত রাজস্ব আদায়, রফতানি আয় ও রেমিটেন্স বেড়েছে।
রোববার (০৮ মার্চ) জাতীয় সংসদে চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটের দ্বিতীয় প্রান্তিক (জুলাই-ডিসেম্বর) পর্যন্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি ও আয়-ব্যয়ের গতিধারা এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ সংক্রান্ত প্রতিবেদন তুলে ধরে এসব তথ্য জানান অর্থমন্ত্রী।
অর্থমন্ত্রী দ্বিতীয় প্রান্তিক বাজেট বিশ্লেষণে বলেন, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নও বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। এ সময়কালে আমদানি ব্যয় কিছুটা বেড়েছে। তবে রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ৩ শতাংশ প্রক্ষেপণে খানিকটা পরিবর্তন আনা দরকার হতে পারে।
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম নিন্মমুখী হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, তেলের মূল্যের নিন্মমুখী প্রবণতার প্রভাবে চলতি অর্থবছরে ভর্তুকি ব্যয়ের ক্ষেত্রে স্বস্তিদায়ক অবস্থান বজায় থাকবে।
বাজেট বাস্তবায়নের প্রতিবেদন তুলে ধরতে গিয়ে বিএনপি-জামায়াতের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের কঠোর সমালোচনা করেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, আর্থ-সামাজিক অর্জনের পথ ধরে দেশ যখন মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে উপনীত তখন এ অগ্রযাত্রাকে প্রতিহত করার অপচেষ্টা চলছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ও সেবার সরবরাহে তৈরি করা হচ্ছে কৃত্রিম সংকট। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে অভ্যন্তরীণ ব্যবসা আর আন্তর্জাতিক বাণিজ্য। দৈনন্দিন কাজের সুযোগ বঞ্চিত হয়ে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বিসহ অবস্থায় পড়েছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, দিনমজুর আর শ্রমিক শ্রেণী। এ সাময়িক সংকট আমাদের গভীরভাবে ব্যথিত করলেও আমরা বিশ্বাস করি, সরকারের প্রচেষ্টার পাশাপাশি দেশবাসীর সাহসী প্রতিরোধে অচিরেই জনবিচ্ছিন্ন এ সকল কার্যকলাপের সমাপ্তি হবে।
অর্থমন্ত্রী চলতি অর্থবছরের বাজেটের গত ৯ মাসের বাস্তবায়ন প্রতিবেদন তুলে ধরতে গিয়ে আবারও দেশের জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তির অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি জানান, গত বাজেটে দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলোর উল্লেখযোগ্য অংশ আমরা ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছি। পূর্বমেয়াদে প্রতিশ্রুত চলমান কার্যক্রমগুলোর পাশাপাশি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটে গৃহীত হয়েছে নতুন কিছু কার্যক্রম। প্রতিশ্রুত কার্যক্রমগুলো বাস্তবায়নের জন্য আমরা নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছি। এসব কারণে অর্থনৈতিক উন্নয়নেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
বাজেটের দ্বিতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত অগ্রগতি তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী জানান, ২০১৪-১৫ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে পূর্ববর্তী অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আওতাধীন কর রাজস্ব আদায় ১৩ দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। মোট সরকারি ব্যয় ৭৬ হাজার ৮৫৪ কোটি থেকে দশমিক এক শতাংশ কমে হয়েছে ৭৬ হাজার ৭৯৮ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন বিগত অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের ১৫ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা থেকে ১০ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১৭ হাজার ৯ কোটি টাকা। এছাড়া একই সময়ে রফতানি আয় বিগত অর্থছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের ১৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ১ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়ে ১৪ দশমিক ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
অর্থমন্ত্রী জানান, দ্বিতীয় প্রান্তিকে আমদানি ব্যয় ১৮ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে ২২ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে। আমদানি ঋণপত্র খোলা ও নিষ্পত্তির প্রবৃদ্ধি হয়েছে যথাক্রমে ১৩ দশমিক ২ এবং ১০ দশমিক ১ শতাংশ। প্রবাস আয় ১০ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিগত অর্থবছরের একই সময়ে প্রবাস আয় ৮ দশমিক ৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছিল। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ২২ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। তিনি জানান, পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি ২০১৩ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে ৬ দশমিক ১ শতাংশে নেমে এসেছে।
কৃষি ক্ষেত্রে সরকারের সাফল্যের কথা তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, কৃষি উৎপাদনের পাশাপাশি সংগ্রহ, মজুদ ও সংরক্ষণের সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণের ফলে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম আমরা নিজেদের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি চাল রফতানি করতে সক্ষম হয়েছি। খাদ্যশস্যের পাশাপাশি বাংলাদেশ মৎস্য উৎপাদনেও ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ মৎস্য উৎপাদনে সারা বিশ্বের মধ্যে চতুর্থ স্থানে রয়েছে।
তিনি জানান, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে চলতি অর্থবছরে ৩০ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছি, যা দারিদ্র্যের হার আরও কমিয়ে আনতে সহায়তা করবে।
আগামী পাঁচ বছরে দেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হবে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী জানান, বর্তমান সরকার ২০০৯ থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত অতিরিক্ত ৮ হাজার ৩৪১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছি। লোডশেডিং যন্ত্রণা এখন আর নেই বললেই চলে। বিদ্যুত খাতে উন্নয়নের এ ধারাবাহিকতা রক্ষায় আমরা বদ্ধপরিকর। আমার বিশ্বাস, বিদ্যুতের চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে সমন্বয় সাধনের লক্ষ্যে আমাদের নেওয়া মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়িত হলে আগামী পাঁচ বছরে দেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৭ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০১৫