ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ মাঘ ১৪৩১, ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ০০ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

‘৯০ দশকে ব্ল্যাক লিস্টেড ছিলাম’

ঊর্মি মাহবুব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৭ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০১৫
‘৯০ দশকে ব্ল্যাক লিস্টেড ছিলাম’ শ্রমিকনেত্রী নাজমা আক্তার

ঢাকাঃ বাবা-মার’র আদি নিবাস শরীয়তপুরে। জন্ম ও বেড়ে ওঠা রাজধানী ঢাকায়।

প্রাইমারি স্কুলের গণ্ডি পার না হতেই সংসারে দায়িত্ব নিয়েছিলো ছোট্ট একটি মেয়ে। সময়ের সাথে আজ সেই মেয়েটি বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় শ্রমিকনেত্রী নাজমা আক্তার। শুধু বাংলাদেশই নয় আন্তর্জাতিক বিশ্বেও একজন শ্রমিকনেত্রী হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশের নাজমা আক্তার। নারীদিবসে নাজমা আক্তার তার কর্মজীবন ও ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কথা বলেছেন বাংলানিউজের সাথে। জানিয়েছেন ৯০’এর দশকে মালিকপক্ষ তাকে  ‘ব্ল্যাক লিস্টেড’ করে রেখেছিলো।

রাজধানীর শান্তিবাগ প্রাইমারী স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পরই কাজে চলে যেতে হয় নাজমা আক্তারকে। পড়ালেখার পরবর্তী গণ্ডিতে  আর পা রাখা হয়নি তার। বলেন, ‘আমি কোনো মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান নই। গরিব ঘরের সন্তান। তিন ভাই, দুই বোনের মধ্যে আমি সবার বড়। তাই এগারো বছর বয়সে কাজ নিই একই গার্মেন্ট কারখানায়। তারপর থেকে পথ চলা শুরু। ’

কিন্তু একজন সাধারণ নারীশ্রমিক কী করে আন্তর্জাতিক বিশ্বে জায়গা করে নিলেন, এ ধরনের প্রশ্ন হয়তো অনেকের মনেই উঁকি দিচ্ছে। জীবন তার নিজের প্রয়োজনই নাজমা আক্তারকে শ্রমিকনেত্রী বানিয়েছে বলে জানান তিনি। বলেন, সেই অল্প বয়সে, কোনোরকম পড়ালেখা জানা একটি মেয়ে কতো টুকুই বা জানে। কিন্তু প্রয়োজনের তাগিদেই এক সময় আমি কথা বলতে শুরু করি। মালিক বেতন না দিলে বা কোনো অন্যায় করলে সবার আগে প্রতিবাদ করতাম আমি। আর তাই ৯০’এর দশকে আমাকে মালিকপক্ষ ব্ল্যাক লিস্টেড করেছিলো। কোনো কারখানায় আমার চাকরি মিলত না। কোনো জায়গা সকালে কাজ পেলে বিকেলে চাকরি চলে যেত। কিন্তু এতে আমার প্রতিবাদ  করা থামেনি। বরং তা আরো বেড়ে গিয়েছিলো। ’

নারীশ্রমিকদের নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে অন্যান্য বাধার তুলনায় সামাজিক বাধাই বড় ছিলো বলে জানান নাজমা আক্তার। বলেন, ‘এখনতো নারীরা রাস্তায় এসে অনেক আন্দোলনে অংশ নিতে পারেন। কিন্তু ২০ বছর আগে পরিস্থিতি এতো অনুক’লে ছিলো না নারীদের ক্ষেত্রে। নারীর অধিকারের দাবি নিয়ে আমরা যখন রাস্তায় নামতাম তখন মানুষজন আমাদের দিকে বাঁকা চোখে তাকাতো। শুধু তাই না আমরা জোরে কথা বলি, সুতরাং আমরা  ‘ভালো মানুষ না’-- এমন কথাও শুনতে হতো।

নারীদিবসের নারীদের বিভিন্ন অধিকার নিয়ে কথা বলা হলেও নারী শ্রমিকদের অধিকারের বিষয়টিতে ততোটা জোর দেওয়া হয় না। আমরা প্রথম দিকে নারীশিক্ষা, নারী নিরাপত্তার কথা বলেছি। এসব দাবি এখন অনেকাংশেই পূরণ হয়েছে। আর তাই এখন নারীর অর্থনৈতিক মুক্তির দিকে নজর দিতে হবে। কারন অর্থনৈতিক মুক্তি ছাড়া নারী কখনোই সাবলম্বী হতে পারবে না।

নারীশ্রমিকরা কারখানাতে সাধারণত নিম্ন পর্যায়ের কাজই বেশি করে থাকেন। পদোন্নতি তাদের তেমন হয় না। এক নারীশ্রমিক কখনোই ম্যানেজার বা সেই পর্যায়ে যেতে পারেন না। এসব বিষয়ে আজ নজর দেয়ার সময় এসেছে। কারণ নারীরা পুরুষের তুলনায় কোনো অংশেই কম কাজ করেন না; বরং অনেক ক্ষেত্রেই বেশিই করেন। কিন্তু সেইভাবে প্রাপ্য পদমর্যাদাটুকু তাদের দেওয়া হয় না। তাই আমার মনে হয় নারীদেরই উচিত তাদের পদোন্নতির বিষয়ে সজাগ থাকা।

বর্তমানে দক্ষ নারীশ্রমিকের অভাব রয়েছে বলে জানান শ্রমিকনেত্রী নাজমা আক্তার।

আর এ বিষয়ে তিনি বলেন, সরকার ও কর্তৃপক্ষের নারীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার দিকে নজর দেয়া উচিত। কারণ বেশির ভাগ নারীরাই শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে থাকেন। ফলে অনেক সময় ছেলেদের সাথে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৮ ঘণ্টা, মার্চ  ০৮, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।