যশোর: যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার হাড়িয়া গ্রামের হেনা বেগম স্বামীর মৃত্যুর পর থেকেই সংসারের ঘানি টানছেন। স্বামীর মৃত্যু শোকে ভারাক্রান্ত হলেও ভেঙে পড়েননি তিনি।
দুই ছেলে-মেয়ের ভবিষ্যৎ গড়তে শুরু করেন ফুলচাষ। জমিতে ফুলের চারা রোপন-গাছ পরিচর্যা থেকে শুরু করে নিজেই ফুল কেটে বাজারজাত করেন সংগ্রামী এই নারী।
সকাল থেকে রাত পর্যন্ত হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেন তিনি। জমির ফুল বিক্রির টাকায় তিনি ছেলের লেখাপড়া থেকে শুরু করে দোতলা বাড়ি নির্মাণ ও ৫০ লাখ টাকার চার বিঘা জমি কিনেছেন।
হেনা বেগম বাংলানিউজকে জানান, বছর তিনের আগে স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি ফুলচাষ শুরু করেন। বর্তমানে ছয় বিঘা জমিতে গ্লাডিওলাস ও গাঁদা ফুল চাষ করছেন তিনি। এছাড়া কয়েক বিঘা জমিতে তিনি ধান-পাটও চাষ করেন।
তিনি আরো জানান, একমাত্র মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেছেন তার একমাত্র ছেলে তরিকুল। বর্তমানে তার চাকরি নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন হেনা।
হেনা বলেন, আমি সারাজীবন মাঠে খেটে আয় করলেও স্বপ্ন দেখি, ছেলে ভালো চাকরি করবে।
একই গ্রামের শাহেদা বেগমের স্বামী পঙ্গু। স্কুল পড়ুয়া দুই ছেলে-মেয়ে আর স্বামীকে নিয়ে তার সংসার। একটু ভালো থাকার স্বপ্ন নিয়ে তিনিও ফুলচাষ শুরু করেছেন।
শাহেদা বাংলানিউজকে জানান, গাছ থেকে পড়ে তার স্বামীর পা ভেঙে যায়। ঢাকার একটি হাসপাতালে ছয় মাস স্বামীর চিকিৎসা করাতে গিয়ে দেনার দায়ে ডুবে যায় পরিবারটি। সেই সঙ্গে তার স্বামী পঙ্গু হয়ে যান। বাড়ি ফিরে শাহেদা নিজেই নেমে পড়েন জীবন যুদ্ধে। সারাদিন রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে ফুলের জমিতে কাজ করেন তিনি। দুই বিঘা জমিতে জারবেরা ফুল চাষ করছেন। তবে প্রতি কাঠা জারবেরা চাষের জমির ছাউনির বাঁশ-খুঁটি, টিন ও মিস্ত্রি খরচের ১০ লাখ টাকা জোগাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে।
একই এলাকার নিহারণ নেছা (৬০) এখনও দুই ছেলের সঙ্গে ফুলের জমি দেখাশোনা করেন।
শুধু তারাই নন। তাদের মতো তিন শতাধিক নারী গদখালী ও আশপাশের এলাকায় ফুলচাষ করে সাবলম্বী হয়েছেন। মাঠে কাজ করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পেরে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তারা।
এদিকে, এ এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় রাতে ফুল বাজারজাত প্রক্রিয়া ও সন্তানদের লেখাপড়া বাধাগ্রস্থ হয়। তাই তারা সরকারের প্রতি এই এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার দাবি জানান।
বাংলাদেশ সময়: ০৩৫০ ঘণ্টা, মার্চ ০৯, ২০১৫