সিলেট: যে নারী রাঁধতে জানে, সে চুলও বাঁধতে জানে। সিলেটের চৌখিদেখি এলাকার রংধনু ৯৬/২ বাসার তাহির উদ্দিনের স্ত্রী গৃহিনী স্বপ্না বেগমের ক্ষেত্রে এই বাক্যটি মানানসই!
শখের বসে ছেঁড়া কাগজ দিয়ে স্বপ্নার তৈরি ভাস্কর্য এখন শিল্পকর্মে পরিণত হয়েছে।
নারী দিবসে কথা হয় স্বপ্না বেগমের সঙ্গে। বয়স পঞ্চাশের কোটায়। এই বয়সেও ক্লান্তিহীন তিনি। এক পর্যায়ে তার বাসার ড্রইংরুমে ঢুকেই চোখে পড়লো অসংখ্য গুণী মানুষের প্রতিকৃতি। এগুলো সব কাগজ দিয়েই তৈরি করেছেন স্বপ্না।
বাসার ড্রইংরুম (অতিথিশালা) সাজানো ভাস্কর্য দিয়ে রীতিমতো একটি জাদুঘরে পরিণত করে ফেলেছেন তিনি। বাংলানিউজের কাছে একান্ত সাক্ষাৎকারে নিজের শিল্পকর্মের আদ্যোপান্ত তুলে ধরেন স্বপ্না বেগম। তার মুখেই শোনা যাক ক্লান্তিহীন জীবনে তার ভাস্কর হয়ে ওঠার গল্প।
স্বপ্না বেগম জানালেন, প্রায় এক দশক আগে ছোট বোন রিছনা বেগমের কাছ থেকে কাগজ দিয়ে ভাস্কর্য তৈরি করতে শেখেন স্বপ্না। এক পর্যায়ে তার বোন ভাস্কর্য তৈরি ছেড়ে দিলেও, তিনি এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।
ভাতের মাড় ও কাগজ দিয়ে ভাস্কর্য তৈরি করে তা কড়া রোদে শুকাতে দেন তিনি। এ কাজে তার প্রায় দুই সপ্তাহ সময় লাগে। এসব কাগজ ফেরিওয়ালাদের কাছ থেকে কেনেন স্বপ্না। এতে ব্যয়িত অর্থের যোগান দিতে তাকে সহায়তা করেন স্বামী তাহির উদ্দিন।
স্বপ্না বেগমের প্রথম ভাস্কর্য ছিল তার স্বামী। একে একে তিনি বিভিন্ন মনিষীর ভাস্কর্য তৈরি শুরু করেন। নিজের অর্থে তৈরি এসব ভাস্কর্য মানুষকে বিনে পয়সায় বিলিয়েছেন তিনি।
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের ভাস্কর্য, পোর্ট্রেট বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, নৌকার দুই গলুইয়ে শেখ হাসিনা ও বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের মাঝখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি, কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গণি ওসমানী, বেগম রাবেয়া খাতুন, শিল্পপতি ও দানবীর রাগিব আলীর ভাস্কর্য ছাড়াও এ পর্যন্ত দুই থেকে তিনশ’ ভাস্কর্য তৈরি করেছেন স্বপ্না বেগম।
এছাড়া ফল-ফসল, বিভিন্ন পশুপাখির প্রতিকৃতি ছাড়াও একমাত্র ছেলের প্রতিকৃতিও তৈরি করেছেন তিনি। হবিগঞ্জের এমপি কেয়া চৌধুরীকে সিলেট জেলা পরিষদে দেওয়া এক সংবর্ধনায় সম্মাননা হিসেবে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য দিয়েছেন স্বপ্না।
স্বামী-সংসার সামলানোর পাশাপাশি রাজনীতির সঙ্গেও সম্পৃক্ত স্বপ্না বেগম। সিলেট মহানগরীর ৬নম্বর ওয়ার্ড মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন।
আওয়ামী লীগের রাজনীতির পাশাপাশি নারী উদ্যোক্তা হিসেবেও বিডব্লিউসিসিআই’র সিলেট জেলার সদস্য হয়ে নারী সচেতনতা ও পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।
স্বপ্না বেগম বলেন, আর্থিক সহায়তা পেলে এ শিল্পকর্মকে বাণিজ্যিক ভিত্তি দেওয়া সম্ভব। তৈরিকৃত এসব শিল্পকর্মের একটি মিউজিয়াম করতে আগ্রহী তিনি। বলেছেন, এ শিল্পকর্ম ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে তুলে দিতে চাই। তারা যেন এটিকে ধরে রাখেন।
ঘরের কাজ সেরে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগদান, সামাজিক সংগঠনে সময় দেওয়ার পর ঘরে ফিরে রাত জেগে নিজের শিল্পকর্মের পেছনে সময় দেন তিনি। এ যেন শিল্পের জন্য নিরন্তর সংগ্রাম স্বপ্নার।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৯, ২০১৫