ঢাকা: নিজেরা আয় করেই অধিকার নিয়ে কথা বলার সুযোগ নিতে হবে নারীদের। অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ছাড়া অধিকার আদায়ের সুযোগ নেই।
বাংলাদেশের নারী সমাজের অবস্থা বর্ণনায় বক্তারা বলেন, সমাজের সার্বিক চিত্রে দেখা যায়, ‘আমি যদি আয় করি, আমার নিরবতাও চিৎকারের মতো, কিন্তু যদি আয় না করি, আমার চিৎকারও নিরবতা বলেই গণ্য হয়ে যায়। অর্থাৎ আয় করলে উচ্চারণের সুযোগ তৈরি হয়, নইলে নয়। ’
সোমবার (০৯ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে অক্সফাম আয়োজিত ‘বাংলাদেশে জেন্ডার বৈষম্য’ শীর্ষক বৈঠকে তারা এসব কথা বলেন।
তারা বলেন, অর্থনৈতিক স্বাবলম্বনের অভাব শুধু নয়, ধর্মের প্রভাবেও নারীরা পশ্চাদপদ।
সংগঠনের কান্ট্রি ডিরেক্টর স্নেহাল সোনেজির সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠকটিতে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান ড. কাজী খলিকুজ্জামান আহমেদ।
এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. ফেরদৌস জাহান, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সাবেক জ্যেষ্ঠ গবেষক ড. প্রতিমা পাল মজুমদার, শারী সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক প্রিয় বালা বিশ্বাস।
নারীদের অর্থনৈতিক স্বাবলম্বনে জোর দিয়ে উপস্থিত বক্তারা বলেন, এখনো নারীরা পরিশ্রমের পুরো মূল্যায়ণ পান না। সারাদিন বাড়ির সব কাজ করেও স্বামীর প্রশ্ন শোনেন, সারাদিন তুমি কী কাজ করো!
‘অন্যদিকে কর্মজীবী নারীরা অনেকক্ষেত্রে স্বামীর ভালোবাসা পান। দরিদ্র পরিবারে কন্যাশিশু কাঙ্খিত নয়। কন্যারা এখানে অবহেলিত হতে দেখা যায়’- বলেন তারা।
এছাড়া শস্য তোলার কাজে নিয়োজিত শ্রমজীবী নারী পুরুষ শ্রমিকের অর্ধেক মজুরি পান বলেও জানান বক্তারা।
অনেক নারী পরিবারে ভূমিকা রাখতে পারছেন, স্বামী ও সন্তানের জীবনে চলার পথে সহযোগিতা করতে পারছেন ভেবেই অনেক সময় খুশি থাকছেন।
জেন্ডার বৈষম্যের ওপর সাম্প্রতিক একটি গবেষণার ফল তুলে ধরেন অধ্যাপক ড. ফেরদৌস জাহান।
ফেরদৌস বলেন, বাংলাদেশে মাত্র ২০ শতাংশ নারী এমপি রয়েছেন। তারাও সেভাবে মূল্যায়ণ পান না। প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য সুনির্দিষ্ট কোন নীতিমালা নেই।
তিনি বলেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া নারীদের বক্তব্য হতাশা জাগায়। তাদের অধিকাংশই বলেছেন, তারা স্বামীর উৎসাহে ও সহযোগিতায় নির্বাচনে এসেছেন। এটি নারীর ক্ষমতায়নের একটি হতাশার দিক। কারণ এ নারীরা নিজ উদ্যোগ-আগ্রহে নয়, স্বামীর চাওয়া পূরণে ও স্বামীর সম্মান বৃদ্ধির উপায় হিসেবে নির্বাচন করছেন।
ফেরদৌস বলেন, আদিবাসী নারীদের ক্ষেত্রেও একই চিত্র। হাজং নারীদের জীবনযাত্রায় মূল্যায়ণ সাধারণ বাঙালি নারীর মতোই পান। তবে গারো ও রাখাইন নারীরা কিছুটা ভিন্নভাবে সমাজে বসবাসের সুযোগ পান।
তাই প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রয়োগ, আইএলও কনভেনশনের বাস্তবায়ন, সবাইকে অধিকার সচেতন করা।
ড. প্রতিমা পাল মজুমদার বলেন, নারী ও নৃ-গোষ্ঠী বৈষম্যের শিকার।
বাংলাদেশে সময়: ১২৩১ ঘণ্টা, মার্চ ৯, ২০১৫