ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ মাঘ ১৪৩১, ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ০০ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

কর কর্মকর্তা হত্যা

মূল পরিকল্পনায় গাড়িচালক, ঘাতক ৮

ইমরান আলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৮ ঘণ্টা, মার্চ ৯, ২০১৫
মূল পরিকল্পনায় গাড়িচালক, ঘাতক ৮ ছবি : বাংলানিউজটোয়েটিফোর.কম

ঢাকা: রাজধানীর রামপুরায় অবসরপ্রাপ্ত কর কমিশনার আবু তাহের হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী তারই গাড়িচালক নাছির। গাড়ি চালানো নিয়ে মালিক আবু তাহেরের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি ও বাক-বিতণ্ডা হয়।

এক পর্যায়ে নাছির চাকরি ছেড়ে দেন। পরে তার বেতন চাইলে আবু তাহের তাকে চেকে বেতন দেওয়ার কথা জানান। কিন্তু নাছির চেকে বেতন নেবেন না বলে জানান।

এরই মাঝে তাহেরকে হত্যা করবেন বলে পরিকল্পনা করেন নাছির। পরিকল্পনা অনুসারে তার ৮ সহযোগীকে নিয়ে হত্যা ও মালামাল লুট করে নিয়ে যান তিনি।

চাঞ্চল্যকর এ হত্যার রহস্য উদঘাটন ও নাছিরসহ তার সহযোগী রাসেলকে গ্রেফতারের পর সোমবার (৯ মার্চ) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম, উপ-কমিশনার (পূর্ব) জাহাঙ্গীর আলম মাতুব্বর, উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) খন্দকার নূরুন্নবি।

অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার ইকবাল হোছাইন বাংলানিউজকে বলেন, গ্রেফতারকৃত আসামি নাছির অবসরপ্রাপ্ত কর কমিশনার আবু তাহেরের বাসার গাড়িচালক হিসাবে কর্মরত ছিলেন। তিনি দীর্ঘ ৯ মাস চাকরি করার পর গত ২০ জানুয়ারি হরতাল-অবরোধে গাড়ি চালাতে পারবেন না বলে তার মালিক আবু তাহেরকে জানান। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে আসামি নাছির চাকরি করবেন না জানিয়ে বাসা থেকে চলে যান।

পরবর্তীতে নাছির মোবাইল ফোনে তার বেতনের টাকা চাইলে কর কমিশনার তাকে বাসায় এসে চেক নিয়ে যেতে বলেন। চেকের মাধ্যমে বেতন নিতে তিনি অস্বীকার করেন এবং এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে আসামি নাছির ক্ষিপ্ত হয়ে কর কমিশনার আবু তাহেরের ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা করেন।

ইকবাল হোছাইন আরও বলেন, নাছির চাকরি ছেড়ে যাওয়ায় বেকার হয়ে যান। এরই মধ্যে তার সঙ্গে পরিচয় হয় ডাকাত আমির হোসেনের সঙ্গে। নাছির, আমিরের সহায়তা নিয়ে রাসেল, রুস্তম, সোহেল, নূর আলম, সুজন ও মাসুমসহ ৮ জনের দল সংগঠিত করেন। তারা অবসরপ্রাপ্ত কর কমিশনার আবু তাহেরের বাসায় ডাকাতির প্রস্তুতি নিতে থাকেন।

গত ১ মার্চ দিবাগত রাত ৩টায় ডাকাতরা দোতলার জানালার গ্রিল ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে সরাসরি আবু তাহের ও তার স্ত্রীর রুমে টোকা দেন। আবু তাহেরের স্ত্রী দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে ডাকাতরা ভেতরে ঢুকে এ দম্পতিকে জিম্মি করে ফেলেন। তারা ঘুমন্ত আবু তাহেরের গলা চেপে ও মাথায় আঘাত করে স্কচ টেপ দিয়ে হাত-মুখ বেঁধে ফেলেন। এরপর তার স্ত্রীর জোরপূর্বক সহায়তা নিয়ে স্টিলের আলমারির ড্রয়ারের ভেতর থেকে নগদ ৪৫ হাজার টাকা, ১২ ভরি স্বর্ণালংকার ও ৩টি স্যামসাং মোবাইল ফোন নেন।

ডাকাতি শেষে মৃত্যু নিশ্চিত করতে আবু তাহেরের ডান হাতের কবজি এবং বাম পায়ের হাটুর রগ কেটে দেন ডাকাতেরা। পরবর্তীতে কর কমিশনারের স্ত্রীর হাত-পা ও মুখ স্কচ টেপ দিয়ে বেঁধে তার কাছ থেকে চাবি নিয়ে দরজা ও গেট খুলে লুন্ঠিত মালামালসহ ডাকাতরা চলে যান।

ইকবাল হোছাইন আরও বলেন, হত্যার ঘটনায় মোট ৮ জন অংশ নেন। এর মধ্যে বাসার বাইরে ছিলেন ৪ জন। আর ভেতরে প্রবেশ করেন ৪ জন।

গ্রেফতারকৃত নাছির ও রাসেল একে অপরের মামাতো-ফুফাতো ভাই। তারা দু’জনেই বাসার ভেতরে থেকে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন।

তাদের দু’জনকেই ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠানো হবে বলে জানান গোয়েন্দা বিভাগের এই কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৮ ঘণ্টা, মার্চ ০৯, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।