ঢাকা: দলীয় গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে সালাউদ্দিন কাদের সাকা চৌধুরীর পাশে দাঁড়িয়েছে বিএনপি। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বর্তমানে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন।
বিএনপির গঠনতন্ত্রের ৫ এর ‘খ’ (২) ধারায় স্পষ্ট বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতাবিরোধী, গোপন সশস্ত্র রাজনীতিতে বিশ্বাসী সক্রিয়ভাবে সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা সমাজবিরোধী ও গণবিরোধী কোনো ব্যক্তিকে এই সংগঠনের (বিএনপি) সদস্য পদ দেয়া হবে না’।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতায় কেবল বিরোধিতা নয়, একাত্তরে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সক্রিয় অবস্থান ও ফৌজদারি অপরাধের দায়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন। এরপর দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগও ট্রাইব্যুনাল-১ এর দেওয়া মুত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখেছেন। সুতরাং দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাকা চৌধুরী আর বিএনপিতে থাকতে পারেন না।
কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের পর দলীয় গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে সাকা চৌধুরীর পক্ষে অবস্থান নেয় বিএনপি। মানবতাবিরোধী অপরাধের অন্যান্য রায়ের পর নীরব ভূমিকা পালন করলেও দলের এ স্থায়ী কমিটির সদস্যের বেলায় নিজেদের অবস্থান পরিস্কার করে বিএনপি।
গত ২৯ জুলাই আপিল বিভাগের রায়ের পর দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্দেশে বিএনপির মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন তাৎক্ষণিক প্রেস ব্রিফিং করেন। ওই প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি জানান, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতের দেওয়া রায়ে বিএনপি হতাশ এবং বিস্মিত। বিএনপি মনে করে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্যই সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু ৫ এর ‘খ’ নয়, বিএনপির গঠনতন্ত্রের ৭ এর ‘ক’ ধারায়ও স্পষ্ট বলা হয়েছে, ‘১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতির আদেশ নং ৮-এর বলে দণ্ডিত ব্যক্তি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য পদ থাকতে পারবেন না’।
কিন্তু আপিল বিভাগের রায়ের পরও বিএনপির স্থায়ী কমিটি থেকে সাকা চৌধুরীকে বাদ দেওয়া হয়নি। বরং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিএনপির শীর্ষ নেতারা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন। অভিযোগ তুলেছেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করেছে সরকার।
সূত্র মতে, বিএনপিতে থাকা অপেক্ষাকৃত প্রগতিশীল অংশ মনে করে, জন্মলগ্ন থেকে স্বাধীনতাবিরোধীদের পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার যে অভিযোগ বিএনপির বিরুদ্ধে ছিল আপিল বিভাগের দেওয়া রায়ের পর সালাউদ্দিন কাদেরের পক্ষে অবস্থান নিয়ে সে বিষয়টি আরো পরিষ্কার করে ফেলেছে বিএনপি। যা বর্তমান সংকটের মুহূর্তে দলটির জন্য বুমেরাং হবে।
বিএনপির এ অংশের মতে, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বহাল রাখার পর বিএনপির উচিত ছিল নীরব থাকা। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বিএনপির সব পদ থেকে সাকা চৌধুরীকে বাদ দেওয়া।
বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার জিয়াউর রহমান খান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, দলের পক্ষে কথা বলার জন্য নির্ধারিত ব্যক্তি রয়েছেন। তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
তবে সহ আইন বিষয়ক সম্পাদক তৈমুর আলম খন্দকার বাংলানিউজকে বলেন, দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যেটা হওয়ার কথা সেটিই হয়েছে। ভিন্ন কিছু হয়নি।
তাহলে কি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এখন আর বিএনপিতে নেই- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি দায়িত্বশীল নেতারা বুঝিয়ে বলতে পারবেন।
এদিকে বিএনপির আরেকটি অংশের মতে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে বিএনপির অবস্থান আগের মতোই আছে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য হওয়ায় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায়ের পর দায়সারাভাবে দলের মুখপাত্রকে দিয়ে ব্রিফিং করানো হয়েছে।
এ অংশের মতে, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ব্যাপারে খুব বেশি আগ্রহ থাকলে একজন শীর্ষ নেতাকে দিয়েই আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতো বিএনপি। তাছাড়া দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার প্রয়োজনেই স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে অবস্থান নিতে হয়েছে বিএনপিকে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, যুদ্ধাপরাধী বা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের ব্যাপারে আমাদের অবস্থান সব সময় ইতিবাচক। আমরা শুধু বিচারের স্বচ্ছতার কথা বলেছি। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বেলায়ও সেটিই বলা হয়েছে। এর চেয়ে বেশি কিছু নয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০১৫
এজেড/এএসআর