ফরিদপুর: ফরিদপুর সদর উপজেলার মুন্সিবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে কেটে ফেলা হয়েছে সাতটি গাছ। জেলা-উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়সহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মিলে গাছগুলো কেটে ক্যাম্পাসেই ফেলে রেখেছেন।
সূত্র জানায়, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি রেজুলেশন করে গাছ কাটার অনুমতি দেন। তবে পরে কর্তৃপক্ষের অনুমতি না থাকার বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে প্রধান শিক্ষক সুশান্ত কর বলছেন, এ গাছগুলো কে বা কারা কেটে নিয়েছেন, তা তিনি জানেন না। অবশ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো. জাসদ মিয়া গাছ কাটার কথা আংশিক স্বীকার করেছেন।
ওই বিদ্যালয়ের দু’টি ভবনের মাঝের জায়গায় আনুমানিক লক্ষাধিক টাকা মূল্যের ওই গাছগুলো ছিল। এর মধ্যে দু’টি মেহগনি গাছ ও পাঁচটি রেনট্রি গাছ।
মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, একটি মেহগনি গাছ গোড়া থেকে কেটে মাটি খুঁড়ে সম্পূর্ণ উপড়ে ফেলা হয়েছে। বাকি গাছগুলোর সকল ডাল কেটে ফেলা হয়েছে। গাছের কেটে ফেলা কাণ্ড ওই ক্যাম্পাসেই ফেলে রাখা হয়েছে।
বিদ্যালয়ের পাশের বাসার গৃহবধূ ফারহানা আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, গত শুক্রবার (২৩ অক্টোবর) থেকে গাছগুলো কাটা শুরু হয়। বিদ্যালয়ের উদ্যোগেই কাটা শুরু হয়েছিল। তবে গত রোববার (২৫ অক্টোবর) এটিও (সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা) নার্গিস জাফরীন এসে বাধা দেওয়ায় বাকি গাছের কাণ্ড কাটা হয়নি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুশান্ত কর বলেন, গাছের পাতা ঝরে পড়ায় ও মাঝে মধ্যে ডাল ভেঙে পড়ায় স্কুলের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছিল। এজন্য বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি গাছগুলোর ডাল ছেটে ফেলার একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু বন্ধের সময় গাছগুলো কে বা কারা কেটে ফেলেছেন, তা আমি জানি না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের পাশে বসবাসকারী এক ব্যবসায়ী জানান, ১৭ হাজার টাকা দিয়ে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি লোক ভাড়া করে এনে গাছগুলো কাটান। এরপর গাছগুলো বিক্রি করার কথা ছিল। প্রধান শিক্ষক এবং সভাপতি এ গাছ বিক্রির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। কিন্তু জানাজানি হওয়ায় সব অস্বীকার করছেন প্রধান শিক্ষক।
এ কাজে নিজের যুক্ত থাকার কথা স্বীকার করে ওই বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও গেরদা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মো. জাসদ মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, গাছগুলো কাটা হয়নি, গাছের ডাল ছেটে নেওয়া হয়েছে মাত্র। গাছগুলোর ডাল ভেঙে যাতে জানমালের হানি না ঘটে সেজন্যই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তিনি দাবি করে বলেন, গাছ কাটার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সকলকেই জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, স্কুল খোলা থাকলে ডাল ছাটা সম্ভব নয়। সেজন্য বন্ধের মধ্যে এ কাজ করতে হয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শিবপদ দে বলেন, খোঁজ নিয়ে গাছ কেটে ফেলার ঘটনার সত্যতা পেয়েছি। স্কুল বন্ধের সুযোগে গাছগুলো কাটা হয়েছে। ‘ছেটে ফেলা আর কেটে ফেলা এক কথা নয়’- মন্তব্য করে তিনি বলেন, ওই বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে গাছ কাটা বা ছেটে ফেলার কোনো সিদ্ধান্ত আমাদের জানানো হয়নি। গাছ কাটতে হলে বিভিন্ন দফতরের অনুমতি নিতে হয়। এক্ষেত্রে তা নেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১৫
এমআইএস/এএসআর