সিলেট: শিশু সামিউল আলম রাজন হত্যা মামলার বিচার প্রক্রিয়া ১৫ কার্যদিবসে সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ৮ নভেম্বর ১৬তম কার্যদিবসে এ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হবে।
এর আগে গত ২২ সেপ্টেম্বর একই আদালতের বিচারক চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলায় সৌদি আরবে আটক কামরুলসহ ১৩ আসামির বিরুদ্ধে ৩০২/২০১/৩৪ ধারায় চার্জ গঠন করেন।
আদালতের বিচারক মামলার বিচারকাজ দ্রুত সম্পন্ন করার লক্ষ্যে টানা সাক্ষ্যগ্রহণের ৯টি কার্যদিবস ধার্য করেন ১, ৪, ৭, ৮, ১১, ১২, ১৩, ১৪ ও ১৫ অক্টোবর। এর মধ্যে শেষ না হলে সাক্ষ্যগ্রহণের নতুন দিন যোগ করা হয় ১৮ অক্টোবর। এ ১০ কার্যদিবসে ৩৮ আসামির মধ্যে আদালতে ৩৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়।
২১ অক্টোবর কামরুলের আইনজীবীর আবেদনের প্রেক্ষিতে তার উপস্থিতিতে ফের ১১ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা করার অনুমতি দেন আদালত।
রোববার (২৫ অক্টোবর) থেকে ৩৪২ ধারায় আসামিদের মতামত গ্রহণ এবং রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয় মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) বেলা দুইটায়। তিন কার্যদিবসের এ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে বেলা সোয়া দুইটায় রায়ের দিন ঘোষণা করেন মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আকবর হোসেন মৃধা।
এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের প্রথম কার্যদিবসে ১ অক্টোবর সাক্ষ্য দেন রাজনের বাবা আজিজুর রহমান আলম ও মামলার বাদী সিলেট মহানগরীর জালালাবাদ থানার বরখাস্তকৃত উপ-পরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলাম। ৪ অক্টোবর দ্বিতীয় দিনে সাক্ষ্য দেন রাজনের মা লুবনা বেগম, চাচা আল আমিন, স্থানীয় জিয়াউল হক ও মাসুক মিয়া।
তৃতীয় দিনে ৭ অক্টোবর স্থানীয় বাদেআলি গ্রামের বাসিন্দা ইশতিয়াক আহমদ রায়হান ও নিজাম উদ্দিন, অনন্তপুর গ্রামের আব্দুজ জাহির মেম্বার এবং শেখপাড়ার বাসিন্দা পংকী মিয়া সাক্ষ্য দেন।
৮ অক্টোবর ৪র্থ দিনে কুমারগাঁওয়ের বাসিন্দা লুৎফুর রহমান, বাবুল মিয়া ও কাচা মিয়া এবং পূর্ব জাঙ্গাইল গ্রামের বাসিন্দা কাঁচা মিয়া ওরফে কছি সাক্ষ্য দেন। ১১ অক্টোবর ৫ম দিনে সদর উপজেলার পশ্চিম জাঙ্গাইল গ্রামের মৃত আবদুস সাত্তারের ছেলে আনোয়ারুল হক, কুমারগাঁওয়ের বাসিন্দা জাকির আহমদের ছেলে বেলাল আহমদ ও দক্ষিণ গ্রামের ইসকন্দর আলীর ছেলে আবদুল হান্নান সাক্ষ্য দেন।
১২ অক্টোবর ৬ষ্ঠ দিনে গিয়াস মেম্বার, আফতাব মিয়া, আব্দুল করিম ও কোরবান আলী এবং ১৩ অক্টোবর ৭ম দিনে পুলিশ কনস্টেবল জাকির আহমদ, মনির আহমদ, মাইক্রোবাসচালক মালিক আব্দুল মান্নান ও ওয়ার্কশপের মালিক সুদীপ কপালী সাক্ষ্য দেন।
১৪ অক্টোবর ৮ম দিনে সাক্ষ্য দেন সিলেট মহানগর মুখ্য হাকিম প্রথম আদালতের বিচারক মো. সাহেদুল করিম, তৃতীয় আদালতের বিচারক আনোয়ারুল হক, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক তাহমিনা ইসলাম ও জালালাবাদ থানার পুলিশ কনস্টেবল ফয়সল আহমদ।
১৫ অক্টোবর ৯ম দিনে জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আখতার হোসেন, রাজন হত্যা মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা একই থানার বরখাস্তকৃত (ওসি-তদন্ত) আলমগীর হোসেন, একই থানার এসআই আরিফুল আমিন, এসআই শামীম আকঞ্জি, এএসআই সোহেল রানা ও সুনামগঞ্জের দিরাই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মহাদেব বাঁছাড় সাক্ষ্য প্রদান করেন।
১৮ অক্টোবর ১০ম দিনে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক সুরঞ্জিত তালুকদারের সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়।
২১ অক্টোবর প্রধান আসামি কামরুলের আবেদনের প্রেক্ষিতে ফের সাক্ষ্য দেন সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতের বিচারক সাহেদুল করিম, দ্বিতীয় আদালতের বিচারক আনোয়ারুল হক, রাজন হত্যা মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা মহানগরীর জালালাবাদ থানার বরখাস্ত হওয়া (ওসি-তদন্ত) আলমগীর হোসেন, মামলার বাদী একই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলাম, রাজনের বাবা আজিজুল রহমান আলম, মা লুবনা বেগম, চাচা আল আমিন, স্থানীয় বাসিন্দা ইশতিয়াক আহমদ, বেলাল আহমদ, কোরবান আলী ও আফতাব আহমদ।
২৫ অক্টোবর থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত আলোচিত এ মামলায় কামরুল ইসলামসহ ১৩ আসামির পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন তাদের আইনজীবীরা।
আসামিদের মধ্যে কামরুলের ভাই মুহিত আলম, অপর ভাই আলী হায়দার, ভিডিওচিত্র ধারণকারী নূর আহমদ, আয়াজ আলী, আজমত উল্লাহ ও ফিরোজ আলী নিজেদের নির্দোষ দাবি করে আদালতে লিখিত আবেদন করেন। নূর আহমদ একই সঙ্গে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রত্যাখ্যান করে আবেদন করেন।
অন্য সাত আসামি হচ্ছেন- প্রধান আসামি কামরুল ইসলাম, চৌকিদার ময়না মিয়া, দুলাল আহমদ, তাজ উদ্দিন বাদল, রুহুল আমিন এবং পলাতক দুই আসামি পাভেল ও শামীম আহমদ।
রাজন হত্যা মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, রাজন হত্যা মামলা অন্য হত্যা মামলাগুলোর ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত ও অনুকরণীয় হয়ে থাকবে। যেকোনো হত্যা মামলার রায় এভাবে তাড়াতাড়ি হলে বিচার বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।
মাত্র ১৬ কার্যদিবসে এ হত্যা মামলার রায় হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
গত ৮ জুলাই সিলেটের কুমারগাঁওয়ে সামিউল আলম রাজনকে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। নিহত রাজন সদর উপজেলার কান্দিরগাঁও ইউনিয়নের বাদেআলী গ্রামের আজিজুল ইসলাম আলমের ছেলে। নৃশংস নির্যাতনের ২৮ মিনিটের ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশে-বিদেশে নিন্দার ঝড় ওঠে। খুনিদের ফাঁসির দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠে জনতা।
হত্যাকাণ্ডের পর মহানগরীর জালালাবাদ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে মুহিত আলমসহ অজ্ঞাত ৪/৫ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে গিয়ে হত্যাকারীদের সঙ্গে আর্থিক সমঝোতার অভিযোগে বরখাস্ত হন জালালাবাদ থানার ওসি (তদন্ত) আলমগীর হোসেন, এসআই জাকির হোসেন ও আমিনুল ইসলাম।
গত ১৬ আগস্ট সৌদি আরবে আটক কামরুল ইসলামসহ ১৩ আসামিকে অভিযুক্ত করে আদালতে এ হত্যা মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ইন্সপেক্টর সুরঞ্জিত তালুকদার। এর আগে মুহিত আলমসহ আটজন এ ঘটনায় হত্যার দায় স্বীকার আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১৫
এনইউ/এএসআর
** হত্যাকারীদের ফাঁসি চান রাজনের বাবা
** ফাঁসি চান রাষ্ট্রপক্ষ, খালাস প্রত্যাশী আসামিপক্ষ
** রাজন হত্যা মামলার রায় ৮ নভেম্বর