ঢাকা: সকাল ১০টা থেকে টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন ময়মনসিংহ থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রহিমা খাতুন। তিন-চার ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর টিকিট কাউন্টারে গিয়ে জানতে পারলেন তিনি যে বিভাগের চিকিৎসা নিতে এসেছেন সেখানকার টিকিট শেষ।
কাউন্টার থেকে জানিয়ে দেওয়া হল পরদিন আসতে। কিন্তু তার পক্ষে ঢাকায় অবস্থান করা অথবা আবার ময়মনসিংহ গিয়ে আসা যেমন দূরূহ, এমনকি টিকিটের নিশ্চয়তাও নেই।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) অল্প খরচে (২০০ টাকায়) বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার জন্য রহিমা খাতুনের মতো শতশত রোগী আসেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে। তবে, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কম থাকায় দূর দূরান্ত থেকে আসা অনেকের পক্ষেই সেবা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। রহিমা খাতুনের মতো অনেককেই টিকিট না পেয়ে ফেরি যেতে দেখা গেছে।
সূত্র জানায়, রোগীর তুলনায় দেশে চিকিৎসকের সংখ্যা অনেক কম, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আরও কম। তবে, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নত চিকিৎসা সেবার কথা মাথায় রেখে সাবেক উপাচার্য ডা. প্রাণ গোপাল দত্তের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ২০১১ সালের অক্টোবর থেকে বিএসএমএমইউতে চালু হয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা সেবা। বর্তমানে এখানে ক্যান্সার, পেলিয়াটিভ কেয়ারসহ ২৩ টি বিভাগে বিভিন্ন দূরারোগ্য ব্যাধির বৈকালিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। প্রতিদিন গড়ে পাঁচ থেকে ছয়’শ রোগী বৈকালিক চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে।
হাসপাতালটির অন্যান্য বিভাগে বিশেষজ্ঞদের দ্বারা চিকিৎসা সেবা ভালোভাবে পাওয়া গেলেও নিউরোলজি, হেমাটোলজি, পেডিয়াট্রিক বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে অনেককেই টিকিট না পেয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গাইনি, ডারমাটোলজিসহ বেশ কয়েকটি বিভাগে প্রতিদিন বিকেল তিনটা থেকে ছয়টা পর্যন্ত দুজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রোগীদের পরামর্শ দিলেও এ চার বিভাগে মাত্র একজন করে চিকিৎসক চিকিৎসা দিচ্ছেন। এছাড়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা একদিনে পঁচিশ জন করে রোগী দেখেন। তবে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা এই সংখ্যার কয়েকগুণ বেশি।
চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ রোগীদের দাবি, প্রতিদিন দু’জন করে চিকিৎসক সেবা দিলে এই সংকট অনেকাংশেই কমে আসবে। একইসঙ্গে তাদের দাবি, দেশের অন্যান্য সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে যদি এ ব্যবস্থা ছড়িয়ে দেওয়া যায়, তাহলে রোগীরা আরও বেশি উপকৃত হবেন।
এদিকে, গোপালগঞ্জ থেকে নিউরোলজি বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা লাভলী বেগম নামে এক রোগী চিকিৎসার মান নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, অনেক কষ্ট করে একটা টিকিট নিয়েছিলাম। কিন্তু চিকিৎসকের কক্ষে প্রবেশ করার পর তিনি আমার রোগের হিস্ট্রিটা ভালোভাবে না শুনেই কয়েকটা ওষুধ আর দুইটা টেস্ট দিয়ে দিলেন। টেস্ট করিয়ে রিপোর্ট দিলাম সেটাও ভালোভাবে দেখলেন না, বললেন একমাস পরে আবার আসতে। কিন্তু টেস্ট করিয়েই তো সব টাকা শেষ আমার পক্ষে তো আবার আসা সম্ভব না।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান বাংলানিউজকে বলেন, দেশে রোগীর তুলনায় চিকিৎসক সংকট রয়েছে। বিশেষজ্ঞ
চিকিৎসকের পরামর্শ পাওয়া আরও দূরূহ। তবে এখানে কয়েক বছর ধরে রোগীদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। নিউরোলজিসহ কয়েকটি বিভাগে চিকিৎসকদের নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই কঠোর তদারকির মধ্যে আনা হবে। এসব বিভাগে চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়ানোর জন্যও চেষ্টা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১৫
এইচআর/পিসি