ঢাকা: গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার আতিলা গ্রামে মরদেহ নিয়ে যাওয়ার মতো সামর্থ্যও নেই নিহত রিয়াদের পরিবারের। তাই অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করতে টাকা যোগাচ্ছেন স্বজনেরা।
সংসারের চাকা ঘুরাতে রিয়াদ ও রিপন দুই ভাই ঢাকায় আসেন কয়েক বছর আগে। রিয়াদ বয় হিসেবে কাজ নেন রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় ‘ঘরোয়া’ হোটেলে। গ্রামের বাড়িতে কেবল থাকেন তাদের মা।
বুধবার (২৮ অক্টোবর) সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে বাংলানিউজকে এসব কথা জানান রিয়াদের আত্মীয় জুয়েল।
এর আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গের সামনে ভিড় করেন তার মা-ভাই এবং আত্মীরা। সন্ধ্যায় রিয়াদের ময়না তদন্ত সম্পন্ন করেন ঢামেক হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক কাজী আবু সামা।
জুয়েল আরও জানান, আমিও ঘরোয়া হোটেলে চাকরি করতাম। হোটেল মালিক সোহেল অমানুষের মতো ব্যবহার করতেন। একটা গ্লাস হাত থেকে পড়ে ভেঙে গেলে যার বেতন ২১শ’ টাকা তাকে জরিমানা করতেন ২৫শ’ টাকা। আর বলতেন ‘এই যে জরিমানা করছি, আর ভাঙবো না’।
এসব কারণে তিন বছর আগে চাকরি ছেড়ে দিলেও গ্রামের অনেকে কাজ করেন বলে ঘরোয়া হোটেলের সামনে যেতাম তাদের সঙ্গে দেখা করতে। একদিন সোহেল তার গাড়ি দিয়ে আমাকে চাপা দেওয়ারও চেষ্টা করেন।
বলেন, ‘এই হোটেলের সামনে যেন তোরে আর না দেহি, আবার আইলে গাড়ি দিয়া চাপা দিমু’।
কেবল জরিমানাই নয়, কর্মচারীদের শারীরিক নির্যাতনও করতেন সোহেল।
রিয়াদের বড় ভাই রিপন বলেন, মঙ্গলবারই (২৭ অক্টোবর) খবর পাই, আমার ভাইকে হোটেল মালিক মারধর করছেন। মোবাইল ফোনে না পেয়ে হোটেলে ছুটে যাই। গিয়ে দেখি, পেছনে দুই হাত বাঁধা রয়েছে রিয়াদের। শরীরে আঘাতের চিহ্ন। অন্য এক কর্মচারীর মোবাইল এবং কিছু টাকা চুরি হয়েছে, রিয়াদকে সন্দেহ করে মারধর করছেন হোটেল মালিক। অনেক অনুরোধ করার পরে রিয়াদকে তারা ছেড়ে দেন। আবার কাজ শুরু করলে আমি চলে আসি।
জানতে পারি, রাতে হোটেল মালিকই তার গাড়িতে করে রিয়াদকে স্বামীবাগে মিতালী স্কুল গলিতে ‘ঘরোয়া’হোটেলের মেসে নিয়ে যান। আর সেখানেই গুলি করে হত্যা করেন আমার ভাইকে।
এ ঘটনায় রিপন বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
ওয়ারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তপন চন্দ্র সাহা জানান, হোটেল মালিক সোহেলকে প্রধান এবং আরও দুইজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন রিপন। তবে তদন্তের স্বার্থে আসামিদের নাম প্রকাশ করা যাচ্ছে না।
ময়না তদন্ত শেষে আবু সামা জানান, রিয়াদের ডান চোয়ালে গুলি প্রবেশের চিহ্ন রয়েছে এবং ঘাড়ের পেছনে একটি বুলেট পাওয়া গেছে। এছাড়া নিহত ব্যক্তির দুই হাতে এবং শরীরের আরও কিছু জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
এর আগে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন ওয়ারী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল মালেক। প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, রিয়াদের ডান চোয়ালে বুলেটের ছিদ্রযুক্ত জখম এবং দুই হাতের কবজি ও পায়ের গোড়ালিতে রয়েছে আঘাতের কালো দাগ।
গ্রামের বাড়িতে নেওয়ার আগে রিয়াদের মরদেহ ‘ঘরোয়া হোটেল’ এর সামনে নেওয়া হবে বলেও জানান জুয়েল।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১৫
এজেডএস/এটি/এএসআর
** রাজধানীতে হোটেল কর্মচারীকে গুলি করে হত্যা