ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৮ মাঘ ১৪৩১, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ২২ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

মানবতাবিরোধী অপরাধ

শরীয়তপুরের দুইজনের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন চূড়ান্ত

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১৫
শরীয়তপুরের দুইজনের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন চূড়ান্ত

ঢাকা: একাত্তরে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, লুন্ঠন, অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের চার অভিযোগে শরীয়তপুরের দুইজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
 
বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান ও সিনিয়র কর্মকর্তা সানাউল হক এ তথ্য জানান।



অভিযুক্তরা হলেন- জেলার পালং উপজেলার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাশিপুর মুসলিম পাড়ার মৃত চাঁন মোল্লার ছেলে সোলায়মান মোল্লা (৮৪) ও একই থানার মাহমুদপুরের মৃত হামিক আলী সরদারের ছেলে ইদ্রিস আলী সরদার ওরফে গাজী ইদ্রিস (৬৭)।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সোলায়মান মোল্লা ১৯৭১ সালে পাকিস্তান দখলদার বাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য শান্তি কমিটিতে এবং সশস্ত্র রাজাকার বাহিনী গঠন করেন। এরপর স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় শরীয়তপুরে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, লুন্ঠন, অগ্নিসংযোগসহ সব ধরণের মানবতাবিরোধী অপরাধ করেন। সোলায়মান মোল্লা ১৯৬৩ সালের পর মুসলিম লীগের নেতা হিসেবে শরীয়তপুর জেলার পালং থানার সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
 
ইদ্রিস আলী সরদার ওরফে গাজী ইদ্রিস ১৯৭১ সালে শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনীতে যোগ দিয়ে মানবতাবিরোধী একই রকম অপরাধ করেন। তিনি ১৯৬৯ সালে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ‘ইসলামি ছাত্র সংঘের’ নেতা ছিলেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ইদ্রিস ইসলামি ছাত্র সংঘের সক্রিয়কর্মী ছিলেন।
 
সানাউল হক বলেন, তাদের মধ্যে গত ১৫ জুন সোলায়মান মোল্লাকে আটক করে ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়। ইদ্রিস আলী এখনো পলাতক রয়েছেন।
 
তাদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়ায় মামলায় ২৮ জনকে সাক্ষি ও সিজার লিষ্টে আরো ৩ জনকে সাক্ষি করা করা হয়েছে। এতে সাত খণ্ডে ৮৫২ পাতার চূড়ান্ত প্রতিবেদন বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনে দাখিল করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
 
তাদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় চারটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে জানিয়ে সিনিয়র কর্মকর্তা সানাউল হক বলেন, ১ নম্বর অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ২২ মে, আসামিরা পাকিস্তান দখলদার সেনাবাহিনীর ১০০ থেকে দেড়শ জন সদস্যসহ শরীয়তপুর জেলার পালং থানা এলাকায় কয়েকটি গ্রামে হামলা চালিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কৃষক আব্দুস সামাদসহ প্রায় ২০০ হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষকে গুলি করে হত্যা করে ও বাড়ির মালামাল লুট করে।
 
২ নম্বর অভিযোগে বলা হয়, ২৬ মে, ১৯৭১ সালে জেলার পালং থানার মালোপাড়া ও রুদ্রকর গ্রামে হামলা চালিয়ে মঠের পুরোহিতকে গুলে করে হত্যা করে ও গ্রামগুলো থেকে মামালাল লুট ও আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়। মালোপাড়া থেকে ৩০/৪৫ জন নারী ও পুরুষকে ধরে মাদারীপুর পাকিস্তান আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে ৩ দিন আটকে রেখে নারীদের ধর্ষণ করে ছেড়ে দেয়। কিন্তু পুরুষদের গুলি করে হত্যা করে।
 
৩ নম্বর অভিযোগে বলা হয়, জুন একই থানার শৈলেন্দ্র কৃষ্ণ পালের বাড়িতে হামলা চালিয়ে দুইজনকে হত্যা করে ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের নির্যাতন করে বেওনেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে।
 
৪ নম্বর অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত আসামিরা দখলদার বাহিনীর সহায়তায় এলাকায় হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতনসহ বিভিন্ন অপরাধ করে। এ সময় মানবতাবিরোধী অপরাধ করার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ভয়ভীতি ও আতংকের সৃষ্টি করে পালং থানার এক থেকে দেড় হাজার মানুষকে দেশ ত্যাগ করে ভারতের শরর্থানী শিবিরে আশ্রয় গ্রহনে বাধ্য করে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১২৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১৫
টিএইচ/বিএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।