ঢাকা, বুধবার, ৮ মাঘ ১৪৩১, ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

বান্দরবানে প্রবারণায় ফানুস উৎসব ও রথ বিসর্জন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১৫
বান্দরবানে প্রবারণায় ফানুস উৎসব ও রথ বিসর্জন ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বান্দরবান: বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে বান্দরবানে ফানুস উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। একইসঙ্গে রথ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয়েছে চার দিনব্যাপী এ উৎসবের বর্ণাঢ্য আয়োজন।



বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) রাতে ঐতিহ্যবাহী রাজার মাঠে ফানুস উড়িয়ে এ উৎসবের উদ্বোধন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি।
 
উৎসবে যোগ দেন ৬৯ পদাতিক ব্রিগেডের রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নকিব আহমদ চৌধুরী, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা, জেলা প্রশাসক মিজানুল হক চৌধুরী, পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, বান্দরবান সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল কুদ্দুছ, বান্দরবান পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ জাবেদ রেজা, বান্দরবান প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মোঃ বাদশা মিঞা মাস্টার, বান্দরবান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইসলাম বেবীসহ স্থানীয় গণ্যমান্য, সুশীল সমাজের ব্যক্তি ও প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।

দেশি-বিদেশি হাজারো পর্যটকও অংশ নেন প্রবারণা পূর্ণিমার ফানুস উৎসবে।

উৎসবের শুরুতে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় গুরু ও বুদ্ধ ধাতু জাদির প্রতিষ্ঠাতা উপঞঞা জোত থের (উচহ্লা ভান্তে) প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে ধর্মীয় দেশনা দেন।

এ সময় সহস্রাধিক রং-বেরঙের ফানুস এবং আতশবাজির ঝলকে রঙিন হয়ে ওঠে বান্দরবানের আকাশ। সকল সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণে সৃষ্টি হয় স¤প্রীতির মিলনমেলা।

পরে বাংলাদেশি আইডল শিল্পি মং, পঙ্কজ ও স্থানীয় শিল্পীদের অংশগ্রহণে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

গত সোমবার (২৬ অক্টোবর) থেকে তিনদিন ধরে শহরের বিভিন্ন কেয়াঙে এ দিনব্যাপী ছোয়াইং দান (খাবার প্রদান) সন্ধ্যায় সহস্র প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, রাতে মারমা পল্লীতে ঐতিহ্যবাহী পিঠা তৈরি উৎসবে মেতে উঠেছিলেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা। মারমা তরুণ-তরুণী, শিশু-কিশোরসহ পূণ্যার্থীরা গান-বাজনা আর বাহারি পোশাকে সজ্জিত হয়ে রাস্তায় নেমে এসে এ উৎসবকে বরণ করে নেন।

সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে প্রবারণা পূর্ণিমার রথটি সাঙ্গু নদীতে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় বর্ণাঢ্য প্রবারণা উৎসব। এ সময় ‘ছংরাসিহ্ ওয়াগ্যোয়াই লাহ্ রাথা পোয়েঃ লাগাইমে...’ (সবাই মিলে মিশে রথযাত্রায় যাই) এ বিশেষ মারমা গান পরিবেশন করে মহারথ নিয়ে সাঙ্গু নদীর তীরে পৌঁছে রথযাত্রা।

পাংখো নৃত্যের তালে তালে রথে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন এবং নগদ অর্থ দানে অংশ নেন শত শত মারমা তরুণ-তরুণী এবং পূণ্যার্থীরা। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এ উৎসবে ভিন্ন মাত্রা যোগ করে।

উৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি মংচিংনু মার্মা জানান, এবারের প্রবারণা উৎসব অত্যন্ত আনন্দঘন পরিবেশের মধ্য দিয়ে সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এ উৎসবকে ঘিরে বান্দরবানে আনন্দের জোয়ার বইছে। সকল স¤প্রদায়ের লোকজন এ উৎসবে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতির বন্ধন সুদৃঢ় করেছেন। আশা করছি, এ বন্ধন অটুট থাকবে।

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা তিনমাস ধর্মীয় কাজ (বর্ষা বাস) শেষে ও শীল পালনকারীরা প্রবারণা পূর্ণিমার দিনে বিহার থেকে নিজ নিজ সংসারে ফিরে যান। এ কারণেই এ বিশেষ দিনটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্য বিশেষ গুরুত্ব ও তাৎপর্যপূর্ণ।

বাংলাদেশ সময়: ০১৪৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১৫
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।