ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: বর্ধিত শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন ও অ্যাকাডেমিক কাজের জন্য প্রায় প্রতি বছরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নির্মিত হচ্ছে নতুন নতুন ভবন। ফলে সমান তালে কমছে ক্যাম্পাসের খোলা জায়গা।
অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিক মাঠ থাকলেও অবহেলা ও সংস্কারের অভাবে বেশিরভাগই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার সুযোগ কমছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট হল সংখ্যা ২০টি। যার মধ্যে ছেলেদের ১৫টি এবং মেয়েদের ৫টি। এ হলগুলোর মধ্যে ছোট-বড় মিলিয়ে খেলার মাঠ রয়েছে মাত্র পাঁচটি হলের। এর মধ্যে জগন্নাথ হল, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক ও হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের হলের মাঠ তিনটি বেশ বড়। এছাড়া ছোট ছোট দু’টি মাঠ রয়েছে কবি জসীম উদদীন হল ও স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠসহ জগন্নাথ হল ও জহুরুল হক হলের মাঠের আয়তন বেশ বড় হওয়ায় এগুলো যেকোনো টুর্নামেন্ট আয়োজনের উপযোগী। কিন্তু আন্তঃবিভাগ কোনো টুর্নামেন্ট ছাড়া এ মাঠ তিনটিতে খেলার সুযোগ হয় না সাধারণ শিক্ষার্থীদের।
শরীরচর্চা কেন্দ্র, সংশ্লিষ্ট হল কর্তৃপক্ষ এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খেলার উপযোগী এ তিনটি মাঠই কর্তৃপক্ষ বছর জুড়ে বিভিন্ন ক্লাবের কাছে ভাড়া দেয়। ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা সেখানে খেলার সুযোগ বঞ্চিত।
মুহসীন হলের মাঠটিতে হলের বর্ধিত ভবন নির্মাণ করায় এর আয়তন কমেছে। অন্যদিকে সংস্কারের অভাবে মাঠটি অনেকটা খেলার অনুপযোগী হয়ে উঠেছে। এছাড়া মাঠের একদিকে পাকা রাস্তা থাকলেও নীলক্ষেত এলাকায় সহজে যাতায়াতের জন্য শিক্ষার্থীরা মাঠটি ব্যবহার করেন ‘বাইপাস’ রাস্তা হিসেবে। এ কারণে মাঠের ক্ষতি হওয়া ছাড়াও খেলাধুলায় বিঘ্ন ঘটে।
সম্প্রতি ঘুরে দেখা গেছে, সংস্কারের অভাবে মাঠটি পরিত্যক্ত হওয়ার পথে। এফ রহমান হল লাগোয়া অংশ সম্পুর্ণ ব্যবহারের অনুপযোগী। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে এ অংশের আগাছাগুলো বড় হতে হতে জঙ্গলের সৃষ্টি হয়েছে। পাকা রাস্তার পাশের অংশে পার্ক করে রাখা হয়েছে একাধিক ঠেলাগাড়ি। অন্যদিকে জঙ্গলের সুবিধা নিয়ে পথচারী এবং ছিন্নমূলেরা মাঠের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশটিকে ‘ভ্রাম্যমাণ টয়লেট’ হিসেবে ব্যবহার করছেন। এছাড়া মাঠ জুড়েই দেখা যায় বিভিন্ন ময়লা আবর্জনা আর ইট-পাথর ও কাঠের টুকরা ছড়ানো। ফলে খেলার সময় শিক্ষার্থীদের আহত হওয়ার খবরও পাওয়া যায়।
তাছাড়া মাঠটিতে পুরান ঢাকার যুবক এবং নীলক্ষেতের দোকানদারদের দৌরাত্ম্য রয়েছে বলেও জানান শিক্ষার্থীরা। ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার সুযোগ একেবারেই কমে গেছে।
অন্যদিকে আশঙ্কাজনক হারে কমছে খোলা জায়গা। শিক্ষার্থীরা জানান, যেসব হলের নিজস্ব মাঠ নেই সেসব হলের শিক্ষার্থীরা মল চত্ত্বর এলাকায় খেলাধুলা করতেন। কিন্তু সম্প্রতি ‘ক্লিন ডিউ, গ্রিন ডিউ’ প্রকল্পের আওতায় সবুজায়নের নামে মল এলাকার বেশিরভাগ জায়গাই বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। ফলে এখানেও খেলাধুলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিন মল এলাকায় ঘুরে করে দেখা গেছে, রেইনট্রিসহ বিভিন্ন বড় বড় গাছের ছায়া ঘেরা অবস্থায় নতুন রোপিত চারাগুলোর বেড়ে ওঠার সুযোগ কম থাকা সত্ত্বেও সেখানে বিভিন্ন প্রজাতির চারাগাছ রোপণ করা হয়েছে। প্রায় বছর খানেক আগে বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখা হলেও বেশিরভাগ চারাই মরে গেছে। তাছাড়া মানুষের যাতায়াত বন্ধ করায় সেখানে জমেছে ময়লা আবর্জনার স্তুপ।
সূর্যসেন হলের শিক্ষার্থী চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী নওশাদ বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের হলের ভেতরে খেলার কোনো মাঠ না থাকায় আমরা মল চত্ত্বরে খেলতাম। কিন্তু সেখানে বেড়া দিয়ে দখল করায় আমরা খেলাধুলার সুযোগ বঞ্চিত রয়েছি।
জানা গেছে, মল এলাকার যে অংশটি ফাঁকা রাখা হয়েছে সেটি কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজনের জন্য। তাছাড়া শিক্ষার্থী বহনকারী বাসগুলোও সারাদিন ওই যায়গায় দাঁড় করানো থাকে।
বিদেশি শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার জন্য স্যার পিজে হার্টগ ইন্টারন্যাশনার হলের সামনে ছোট পরিসরের একটি খোলা জায়গা ছিল। যেখানে বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের প্রায় প্রতিদিন বিকেলেই খেলতে দেখা যেত। কিন্তু ‘নিরাপত্তার’ অজুহাতে সে জায়গাটি লোহার গ্রিল দিয়ে ঘিরে বিভিন্ন প্রজাতির ফুল গাছ লাগানো হয়েছে। ফলে বিদেশি শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার আর কোনো জায়গা নেই।
স্যার পিজে হার্টগ ইন্টারন্যাশনাল হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক লুৎফর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এখানে খেলাধুলা করলে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা বিঘ্নিত হয়। তাছাড়া নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কার কথাও জানিয়েছেন কয়েকজন। তাই জায়গাটি ঘিরে ফেলা হয়েছে।
তবে কয়েকজন বিদেশি শিক্ষার্থী নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানিয়েছেন জায়গাটি খালি না থাকায় তারা খেলাধুলার সুযোগ হারিয়েছেন। তাদের অভিযোগ, এ হলে শিক্ষার্থীদের চেয়ে শিক্ষকদের সংখ্যাই বেশি। তাদের বেশিরভাগই পরিবারসহ থাকেন। শিক্ষকদের ‘সমস্যার’ ফলেই মূলত জায়গাটিকে ঘিরে ফেলা হয়েছে।
তবে কবি জসীম উদদীন হলের মাঠটি সম্প্রতি সংস্কার খেলাধুলার উপযোগী করেছে হল প্রশাসন। কিন্তু জসীম উদদীন হল ছাড়াও বঙ্গবন্ধু হল, জিয়া হল, বিজয় একাত্তর হলের শিক্ষার্থীরা এখানে খেলাধুলা করেন। তাই ছোট এ মাঠটিতে খেলার সুযোগ পাওয়া অনেকটা দুষ্কর।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বাংলানিউজকে বলেন, ক্যাম্পাস সবুজায়নের জন্যই মল এলাকায় চারা রোপণ করা হয়েছে। এটি শিক্ষার্থীদেরও দাবি ছিল।
মাঠগুলো দ্রুত সংস্কারের পরিকল্পনা প্রশাসনের রয়েছে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৭১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১৫
এসএ/এএসআর