বগুড়া: মাসখানেক আগেও চিত্র ছিল একেবারে ভিন্ন। বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথার সাতপাকের মাঝখানে স্থাপিত ‘বীরশ্রেষ্ঠ স্কয়ার’টি রংবেরংয়ের পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুনে ঢেকে গিয়েছিল।
যথাযথ কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে এভাবে স্থাপনাটি অরক্ষিত হয়ে পড়ে। মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরশ্রেষ্ঠদের সম্মানে গড়া স্মৃতিস্তম্ভটি যেন অসম্মানের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
দীর্ঘদিন ধরে এভাবে চলতে থাকলে অবশেষে স্মৃতিস্তম্ভের সম্মান রক্ষায় এগিয়ে আসেন ফটো সাংবাদিকরা। স্থাপনাটির সার্বিক তত্ত্বাবধান ও রক্ষণাবেক্ষণে আগ্রহ প্রকাশ করে বগুড়া ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের পক্ষ থেকে বগুড়া পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট একেএম মাহবুবর রহমানের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়। পরে মেয়র এ সংক্রান্ত অনুমতিপত্র সংগঠনের নেতাদের হাতে তুলে দেন।
এরপর স্থাপনাটি সংস্কারে নামেন তারা। বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সহযোগিতা কামনা করেন। ব্যাপক সাড়াও মেলে। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে লাগানো পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন তুলে ফেলা হয়। ভেতরের ময়লা-আবর্জনা, আগাছা পরিষ্কার ও ধোয়া-মোছার কাজ করা হয়। বর্তমানে চলছে শোভাবর্ধনের কাজ। এখন লাইটিং, টাইলস ও সামান্য কিছু সংস্কার সম্পন্ন করতে পারলেই স্থাপনাটি তার ঝকঝকে অবয়ব ফিরে পাবে। এজন্য অবশ্য আরও কিছু দিন সময় লাগবে।
বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) বগুড়া ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের নেতারাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য উঠে আসে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে এ ‘বীরশ্রেষ্ঠ স্কয়ার’ নির্মাণ করা হয়। ২০০৪ সালের ২৬ মার্চ বিএনপি’র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান এ স্মৃতিস্তম্ভের উদ্বোধন করেন। এ ‘বীরশ্রেষ্ঠ স্কয়ার’ এ স্থান পায় সাত বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহি হামিদুর রহমান, ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান, স্কোয়াড্রন লিডার রুহুল আমিন, সিপাহি মোস্তফা কামাল, ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ, ল্যান্স নায়েক মুন্সি আবদুর রউফ ও ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের প্রতিকৃতি। স্মৃতি ফলকে তাদের নাম খোদাই করে লেখা রয়েছে।
বগুড়া ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শফিকুল ইসলাম শফিক ও সাধারণ সম্পাদক ঠান্ডা আজাদ বাংলানিউজে জানান, ‘বীরশ্রেষ্ঠ স্কয়ার’র সার্বিক তত্ত্বাবধান ও রক্ষণাবেক্ষণের অনুমতি চেয়ে সংগঠনের পক্ষ থেকে বগুড়া পৌরসভার মেয়র বরাবর একটি আবেদন জানানো হয়। পরে ২২ সেপ্টেম্বর মেয়র স্থাপনাটি তত্ত্বাবধান ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য তাদের একটি অনুমতিপত্র দেন।
এরপর ১৮ অক্টোবর তারা ‘বীরশ্রেষ্ঠ স্কয়ার’সহ সাতমাথা চত্বর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় নামেন। বগুড়া পৌরসভার প্যানেল মেয়র আমিনুল ফরিদ এ কাজের উদ্বোধন করেন। সাংবাদিক ছাড়াও পুলিশ, সামাজিক, সংস্কৃতিকর্মী, বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষসহ সাতমাথা চত্বরে বসা ভ্রাম্যমাণ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এতে অংশ নেন।
তারা আরও জানান, এরই ধারাবাহিকতায় শুরু করা হয়েছে শোভাবর্ধনের কাজ। এ কাজের উদ্বোধন করেন শিবগঞ্জ এম এইচ মহাবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও গোকুল সবুজ নার্সারির স্বত্বাধিকারী আব্দুল মান্নান। ইতিমধ্যেই ‘বীরশ্রেষ্ঠ স্কয়ার’র ভেতরে লাগানো হয়েছে ৭টি ইফোরবিয়া ক্যাকটাস, ৬টি গাঁদা, ৬টি জিনিয়া, ১০টি কসমস, ১০টি ভ্যানকা, ১০টি চন্দ্রমল্লিকা, ২৫টি সাইলেসিয়া ও ২০০টি পুত্তলিকা জাতের ফুলগাছ।
পাশাপাশি শোভাবর্ধনের জন্য আরও গাছের চারা এ নার্সারি থেকে সরবরাহ করা হবে বলে এর মালিক আব্দুল মান্নান ঘোষণা দিয়েছেন। এছাড়া সাতমাথা চত্বরে বসা ভ্রাম্যমাণ দোকানিরা ময়লা-আর্বজনা ফেলার জন্য ঝুড়ি ব্যবহার করছেন। নিয়মিত তারা স্ব স্ব বসার স্থান পরিষ্কার করছেন। আর এ বিষয়গুলো বগুড়া ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন।
বগুড়া পৌরসভার প্যানেল মেয়র আমিনুল ফরিদ বলেন, ফটো সাংবাদিকরা ‘বীরশ্রেষ্ঠ স্কয়ার’ দখলমুক্ত করতে পারলেও আমরা পারিনি। এটা আমাদের ব্যর্থতা বলে স্বীকার করছি।
শফিকুল, দুলু, হোসেন, জামালসহ সাতমাথা চত্বরে বসা একাধিক ভ্রাম্যমাণ দোকানিরা বাংলানিউজকে জানান, ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়, তার জ্বলন্ত প্রমাণ দেখা যাচ্ছে। মাত্র কয়েকদিনেই ‘বীরশ্রেষ্ঠ স্কয়ার’র চিত্র বদলে গেছে। আর কিছু কাজ করলে স্থাপনাটি আগের চেহারা ফিরে পাবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১৫
এমবিএইচ/আরএম