ঢাকা, রবিবার, ১৯ মাঘ ১৪৩১, ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

ঝুঁকি জেনেও হাত তুলে রাস্তা পারাপার..

ফররুখ বাবু, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১৫
ঝুঁকি জেনেও হাত তুলে রাস্তা পারাপার.. ছবি: শাকিল/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে কোনো গুরুত্ব দিচ্ছেন না নগরবাসী। বৃদ্ধ থেকে শিশু সবাই হাত তুলে রাস্তা পার হতে যেন স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন!

ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার প্রসঙ্গে সিটি কলেজের দুই শিক্ষার্থী সামিয়া ও অপর্ণা বাংলানিউজকে বলেন, ‘হাত তুলতেই গাড়ি থামিয়ে দেয় চালকরা।

আর মেয়েদের দেখলে গাড়ি সম্পূর্ণ থামিয়ে দেয়। আমাদের কোনো সমস্যা হয় না, রাস্তা পারাপারে। ’

সরেজমিনে দেখা গেছে, মতিঝিল শাপলা চত্বরে মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হওয়ার সময় গাড়ির ধাক্কায় হাত ভেঙে যায় বেসরকারি একটি ব্যাংকের হিসাব রক্ষক মমিনুল ইসলাম। এ অবস্থা দেখেও সেখান দিয়েই হাত উঁচিয়ে গাড়ি থামিয়ে রাস্তা হচ্ছেন পথচারীরা।

রাজধানীর মতিঝিল, জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে, রামপুরা, শাহাবাগ, বাংলামটর, কমলাপুর, মধ্যবাড্ডার ফুটওভার ব্রিজের নিচ থেকে সব বয়সের পথচারীরা রাস্তা পারাপার হচ্ছেন। আর ফুটওভার ব্রিজের উপরে ভিখারি ও ভূমিহীন মানুষের বসবাস চোখে পড়ার মতো।

ফুটওভার ব্রিজ পারাপার প্রসঙ্গে বেসরকারি চাকরিজীবী মোবারক হোসেন বলেন, ‘সকালে রাস্তায় অনেক জ্যাম থাকে অফিসে ঢুকতে দেরি হয়ে যায় প্রায়ই। তাই অল্প সময়ে যাওয়ার রাস্তা খুঁজতেই ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করা হয় না। ’
 
একাধিক পথচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় দেড়তলা পর্যন্ত সিঁড়ি বেয়ে, আবার নিচে নামতে কষ্ট হওয়ার কারণে এড়িয়ে চলেন ফুটওভার ব্রিজ। এছাড়া ভিক্ষুক সহ নানা দোকানদারের কারণে ব্রিজের পথ সরু হয়ে যাওয়ায় গায়ে গায়ে ধাক্কা লাগায় অধিকাংশ নারী ব্রিজে ওঠেন না।
 
বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে ট্রাফিকের দায়িত্বে থাকা করিম বাংলানিউজকে জানান, ‘সকালে আর বিকেলে এ এলাকায় মানুষের যাতায়াত বেশি থাকে। এই সময়ের মধ্যে প্রায়ই গাড়ির ধাক্কায় একজন বা দু’জন পথচারীকে আহত হতে দেখা যায়। ’

‘এ সড়কে যারা যাতায়াত করেন অধিকাংশ পথচারী শিক্ষিত। তবে তাদের মধ্যে সচেতনতার অনেক অভাব রয়েছে’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
 
তিনি আরও বলেন, ‘অনেক পথচারী ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করেন। তবে বেশির ভাগ মানুষ হাত তুলে রাস্তা পার হন। তাদের বলেও কোনো লাভ হয় না। ’
 
এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি দক্ষিণ) যুগ্ম কমিশনার বনজ কুমার বাংলানিউজকে বলেন, আইন করে পথচারীদের ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে বাধ্য করার মতো কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। এ বিষয়টি তার অধীনে নয় বলে আর কোনো প্রশ্নের জবাব দেননি বনজ কুমার।    
 
‘অধিকাংশ গাড়ির চালক চেষ্টা করে সামনের গাড়ির একদম পেছন পেছন গাড়ি চালাতে। আর তাদের এভাবে গাড়ি চালানোর একটাই কারণ, যেন গাড়ির সামনে থেকে কোনো পথচারী হাত তুলে ইশারা দিয়ে রাস্তা পার না হন। একজন পথচারী গাড়ি থামালেই আরও দশজন তাকে অনুসরণ করে’ সরেজমিনে দেখা যায়।

ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে পথচারীদের অনিহা কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) নির্বাহী সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান বলেন, ‘অনেক পথচারী রয়েছেন, যারা শারীরিক ভাবে অসমর্থ তারা কিভাবে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করবেন। ’

এছাড়া ‘হাঁটা মানুষের মৌলিক অধিকার। তবে সিটি করপোরেশন সেই অধিকার থেকে আমাদের বঞ্চিত করছে। সরকারের এই সংস্থা রাস্তায় পথচারীদের হাঁটার জন্য কোনো সাইন (জেব্রাক্রসিং) রাখেনি। আর যে সাইন রয়েছে তা দেখা যায় না’ বলে দাবি করেন তিনি।
 
তবে, সচল পথচারীদের ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে সচেতনতা বৃদ্ধিতে সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা কর্তা ব্যক্তিদের জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এ পরিবেশবিদ।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১৫
এফবি/ পিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।