ঢাকা: ফলে ফরমালিন দেওয়া, ওজনে কম দেওয়া বা দাম বেশি নেওয়ার মত জালিয়াতির কথা আমরা সবাই কমবেশি জানি। কিন্তু এই ফল দেওয়ার ঠোঙ্গাতেও যে জালিয়াতি হয়, আমরা ক’জন জানি!
হ্যাঁ, ভেজাল-নকলের দিনে ঠোঙ্গাতেও (ফলের প্যাকেট) জালিয়াতি হয়।
ফলের সঙ্গে ওজন করে দেওয়া ওই ঠোঙ্গার নিচে আস্ত একটি বই, বা পৃথক কাগজ দিয়ে দেওয়া হয়। তখন ওই ঠোঙ্গার ওজন হয় ৪৫-৮০ গ্রাম, বা তার চেয়েও বেশি।
রাজধানীর অভিজাত এলাকা বনানী, ধানমণ্ডি ও ফার্মগেটের পৃথক তিনটি দোকানে অভিযান চালিয়ে এমন জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া গেছে।
অভিযানে নেতৃত্বদানকারী জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মাসুম আরেফিন বাংলানিউজকে বলেন, এই একটা ঠোঙ্গার ওজন যদি ৮০ গ্রাম হয়, তিনশ’ টাকায় কেনা ফলের সঙ্গে দিলে সেটার মূল্য দাঁড়ায় ২৪-২৫ টাকায়। অথচ এই কাগুজে ঠোঙ্গার দাম হয়ত, মাত্র ৫০ পয়সা বা এক টাকা।
তিনি বলেন, আমরা এই জালিয়াতি রোধে রাজধানীর বনানী, ধানমণ্ডি ও ফার্মগেট এলাকায় অভিযান চালিয়েছি। সেখানে হাতে নাতে এমন জালিয়াতি ধরেছি। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে তাদের পৃথকভাবে পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা করেছি।
সুনির্দিষ্ট ওই সব এলাকা বা দোকানে শুধু নয়, প্রায় সবখানেই ফল পরিমাপ করে দেওয়ার কাগুজের ঠোঙ্গার নিচ অংশে ওজন বাড়ানোর জন্য আলাদা কাগজ বা ছোট বই সংযুক্ত করে দেওয়া হয়। এ বিষয়ে ক্রেতাদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ওই সহকারী পরিচালক।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯-এ এই জালিয়াতকারীর শাস্তি ১ বছরের জেল বা ৫০ হাজার টাকার অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত।
এছাড়া কোনো উৎপাদনকারী/সরবরাহকারী/বিক্রেতা নির্ধারিত মূল্য অপেক্ষা অধিক মূল্যে কোনো পণ্য বা ওষুধ বিক্রি, ওজনে কারচুপি, মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রি, পণ্যের মোড়কে খুচরা মূল্য ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ উল্লেখ না করলে এবং আইনের বাধ্যবাধকতা অমান্য করে দোকান বা প্রতিষ্ঠানে পণ্যের মূল্য তালিকা টানিয়ে প্রদর্শন না করলে যে কোনো ভোক্তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন।
এসব অভিযোগেও অভিযুক্তকে বিভিন্ন দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান আছে ওই আইনে। এক্ষেত্রে অভিযোগকারীকে জরিমানার ২৫ শতাংশ দেওয়া হয়।
ভোক্তাদের বিভিন্ন অভিযোগের দ্রুত, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক নিষ্পত্তির জন্য জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর তিন সদস্যের একটি বিশেষ অভিযোগ নিষ্পত্তি কমিটি করেছে। এতে উপসচিব হুমায়ূন কবির সভাপতি, আরেক উপ সচিব আব্দুল মজিদকে সদস্য ও সহকারী পরিচালক মাসুম আরেফিনকে সদস্য সচিব করা হয়েছে।
সব অভিযোগ জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ৭টি বিভাগীয় উপ-পরিচালক, প্রত্যেক জেলার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবরে করতে হবে। ৩০ দিনের মধ্যে লিখিত অভিযোগ সরাসরি বা ফ্যাক্স/ই-মেইল/ওয়েব সাইটে করা যাবে।
অথবা ০১৭৭৭৭৫৩৬৬৮, ৮১৮৯১০৫ নম্বরেও অভিযোগ করা যাবে।
ইতিমধ্যে রাজধানীসহ সারাদেশে ১৩,৬৭৩টি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে এগারো কোটি আট লাখ পনের হাজার দুইশ’ পঞ্চাশ (১১,০৮,১৫,২৫০/-) টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তন্মধ্যে ১৬৮ জন অভিযোগকারীকে জরিমানার ২৫ শতাংশ হিসেবে চার লাখ বার হাজার সাতশত পঞ্চাশ (৪১২৭৫০/-) টাকা প্রদান করা হয়েছে। বাকি এগারো কোটি চার লাখ পাঁচশত (১১,০৪,০০,৫০০/-) টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়েছে।
চলতি মাসেও এক অভিযোগের ভিত্তিতে ধানমণ্ডির আহার রেস্টুরেন্টকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অভিযোগকারী শওকত আলীকে ২৫ শতাংশ-১২৫০ টাকা দেওয়া হয়েছে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ জানতে http://bdlaws.minlaw.gov.bd/bangla_all_sections.php?id=1014
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৬, ২০১৫
এসইউজে/আরএ