ঢাকা: বাসের নাম ‘তরঙ্গ প্লাস’, কোম্পানি ‘তরঙ্গ প্লাস ট্রান্সপোর্ট লিমিটেড’। এ বাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সরকারের নির্ধারিত মূল্য তালিকার ধার ধারে না।
রাজধানীর বনশ্রী থেকে এ পরিবহনের একটি বাসে শুক্রবার (০৬ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় কয়েকজন যাত্রী উঠেন। কিছুক্ষণের মধ্যে যাত্রীদের নিয়ে মোহাম্মদপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে বাসটি! চালকও তার আসনে।
মিনিট পাঁচেক পর গাড়িটি স্টার্ট দেওয়ার চেষ্টা শুরু করেন চালক। বহুবার চেষ্টা করেও চালু হলো না বাসটি। জোড়া-তালি দিয়ে বাসের বডি, এদিক-ওদিক রঙ মাখানো রয়েছে গাড়িটিতে।
স্টার্ট নেওয়া অসম্ভব দেখে বাস থেকে যাত্রীদের নামানো হলো। পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা কোম্পানির আরেকটি বাসে উঠানো হলো যাত্রীদের। এবার বহু ধাক্কাধাক্কি শেষে চালু হলো দ্বিতীয় বাসটি। কিন্তু এ বাসের হেডলাইট, ব্যাকলাইট বলতে কেবল চিহ্নই। সামনের গ্লাসটির অনেকটা অংশ ভাঙা। বাসটি নামেই ‘সিটিং সার্ভিস’!
এ সময় সরেজমিনে বনশ্রী বাসস্ট্যান্ডে আরো দেখা যায়, ‘তরঙ্গ প্লাস’র ১০টি বাস দাঁড় করে রাখা হয়েছে। যাত্রী নিয়ে একটির পর একটি ছেড়ে যাচ্ছে। সেইসব বাসের ৭/৮টির মধ্যে কোনোটির হেডলাইট নেই, আবার কোনোটির ব্যাকলাইট নেই। বাসগুলোর অধিকাংশই আসন ও জানালার কাচ ভাঙা। বডি জোড়া-তালি দিয়ে তৈরি। কোনো কোনো জোড়া-তালি খুলে পড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা! এমনকি কয়েকটি বাসে নেই নাম্বার প্লেটও।
প্রতিদিন রাজধানীর মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডের পূর্বপাশ থেকে যাত্রা শুরু করে জিগাতলা হয়ে সায়েন্সল্যাব, শাহবাগ, কাকরাইল, মালিবাগ, মৌচাক, রামপুরা ব্রিজ হয়ে বনশ্রীর ‘জি’ ব্লক এলাকায় এসে শেষ হয় এ পরিবহনের যাত্রা। আবার একই রুটে ফিরে যায় মোহাম্মদপুর।
দেখা যায়, এ পরিবহনের একটি বাসেও নেই ভাড়ার তালিকা। দুই/একটি এলাকা ছাড়া আর কোথাও নেই টিকিট কাউন্টার। গাড়ির ভেতরে দেওয়া হয় টিকিট। ভাড়া নিয়ে যাত্রী-সুপারভাইজারদের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতি যেন নিত্য ঘটনা।
যাত্রীদের অভিযোগ, সরকারের নির্ধারিত ভাড়ায় চলে না এসব বাস। দ্বিগুণ-তিনগুণ বেশি ভাড়া আদায় করা হয় এগুলোতে। গাড়ির ভেতরে টিকিটের মাধ্যমে ভাড়া আদায় করা হয়। বনশ্রী অথবা মোহাম্মপুর থেকে যাত্রা শুরু হলে সর্বনিম্ন দূরত্বের জন্য ভাড়া ১০ টাকা। এরপর ২৫ টাকা, ৩৫ টাকা ও ৪৫ টাকার কমে কোনো টিকিট নেই। মাঝপথ থেকে কেউ উঠলেও পুরো পথের ভাড়া আদায় করা হয়।
পরিবহন কর্তৃপক্ষের দাবি, চার বছর আগে তরঙ্গ প্লাস এ রুটে যাত্রী পরিবহন শুরু করে। প্রথম থেকে যে ভাড়ায় চলাচল শুরু হয়েছে, এখনও সেই ভাড়াই নেওয়া হচ্ছে। সরকার ভাড়া বাড়ালেও প্রয়োজন না হওয়ায় তালিকা টানানো হয়নি। বর্তমানে এ রুটে ‘তরঙ্গ প্লাস’র ৩৩ বাস চলাচল করছে বলে জানা যায়।
ভাড়া সম্পর্কে জানতে চাইলে তরঙ্গ প্লাস ট্রান্সপোর্ট লিমিটেডের চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেন মোবাইল ফোনে বাংলানিউজকে বলেন, চার বছর আগে যে ভাড়া দিয়ে শুরু করেছিলাম সে ভাড়াতে এখনো চলছে। এ সময়ের মধ্যে ভাড়া আর বৃদ্ধি হয়নি।
বাসে ভাড়ার মূল্য তালিকা না টানানোর বিষয়ে তিনি বলেন, সরকারের নির্ধারিত ভাড়া আমরা মানি। কিন্তু আমরা নতুন করে ভাড়া বাড়াইনি, সেজন্য মূল্য তালিকা লাগানোর প্রয়োজন বোধ করিনি।
বাসের ফিটনেস সম্পর্কে জানতে চাইলে তরঙ্গ প্লাসের চেয়ারম্যান বলেন, বাসের ফিটনেস দেখার দায়িত্ব পুলিশের। ফিটনেস যদি না থাকতো, তাহলে তো পুলিশ এসব বাস চলাচল করতে দিতো না। এ সময় তিনি বাসের ফিটনেস দেখার দায়িত্ব একজন সাংবাদিকের আছে কি-না উল্টো প্রশ্ন করেন।
বাংলাদেশ সময়: ০০০৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ১৫
টিএইচ/জেডএস