বাগেরহাট: নানা জটিলতায় প্রায় এক মাস বিলম্বের পর অবশেষে বঙ্গোপসাগর উপকূলের পূর্ব সুন্দরবন এলাকায় শুটকি আহরণ মৌসুম শুরু হয়েছে।
বন বিভাগের অনুমতি সাপেক্ষে ৭ হাজারেরও বেশি জেলে, ডিপো মালিক ও বহদ্দার বৃহস্পতিবার (০৫ নভেম্বর) থেকে বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী সুন্দরবনের দুবলা জেলে পল্লীর উদ্দেশে রওনা হয়েছেন।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগ সূত্র জানায়, কিছু জটিলতা থাকায় এবার প্রায় একমাস পর ৪ নভেম্বর রাতে দুবলা যাওয়ার অনুমতিপত্র বিতরণ শুরু করে বন বিভাগ।
৫ নভেম্বর থেকে সুন্দরবন সংলগ্ন বাগেরহাটের মংলা উপজেলার পশুর ও শরণখোলার বলেশ্বর নদী দিয়ে কোস্টগার্ড ও বনরক্ষীদের নিরাপদ পাহারায় সাগরে যাত্রা শুরু করেছেন শুটকি আহরণকারীরা।
এর মাধ্যমে শুটকি আহরণে এসে প্রায় এক মাস ধরে সাগরে অবস্থান করা হাজার-হাজার জেলের অবর্ণনীয় দুর্দশার অবসান ঘটেছে। শুটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ ও অস্থায়ী পল্লী নির্মাণের উদ্দেশে রওনা করা এসব জেলেরা প্রায় এক মাস ধরে বলেশ্বর ও পশুর নদীতে অপেক্ষায় ছিলেন।
সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের র্নিদেশে সুন্দরবন সুরক্ষায় বনের সব ধরণের সম্পদ আহরণ নিষিদ্ধ করেছে বন মন্ত্রণালয়। এরই প্রেক্ষাপটে অক্টোবরের শুরুতে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চরে শুটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ ও অস্থায়ী জেলে পল্লী র্নিমাণ প্রক্রিয়া আটকে যায়।
হঠাৎ করে সরকারের এ সিদ্ধান্তের ফলে উপকূল ও সুন্দরবন সংলগ্ন মংলা- শরণখোলার নদীতে এক মাস ধরে আটকা পড়ে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে থাকেন হাজার-হাজার জেলেরা।
অবশেষে ৪ নভেম্বর বিকেলে বনের সব আইন মেনে ও অতিরিক্ত ৭টি শর্ত সাপেক্ষে জেলে-বহদ্দারদের নিয়ন্ত্রিতভাবে দুবলার জেলে পল্লীতে যাওয়ার অনুমতি আসে প্রধান বন সংরক্ষক (সিসিএফ) মো. ইউনুস আলীর কাছ থেকে।
খুলনার বিভাগীয় বন সংরক্ষক ওই অনুমতিপত্র গ্রহণের পর বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ শর্ত সাপেক্ষে জেলেদের পাস প্রদান শুরু করে।
এদিকে, বিগত বছরগুলোতে সুন্দরবনের দুবলার ১৪টি চরে অস্থায়ী শুটকি পল্লী নির্মাণের অনুমতি মিললেও এবার কেবল মাত্র ৫টি চরে জেলেদের মাছ আহরণ, প্রক্রিয়াকরণ ও বাজারজাতকরণের অনুমতি দিয়েছে বন বিভাগ।
চরগুলো হলো, দুবলার মেহেরআলীর চর, আলোরকোল, মাঝের কিল্লা, নারকেল বাড়িয়া ও শ্যালারচর।
অন্যদিকে, গত মৌসুমে ১৩ জন বহদ্দার থাকলেও এবার ১১ জন ও ১১৫ জন ডিপো মালিক থাকলেও এবার মাত্র ৩৫ জনে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এবার ৯৮৫টি জেলে ঘরের স্থলে ৫০০টি অস্থায়ী ঘর নির্মাণের অনুমতি মিলেছে।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ( ডিএফও) মো. সাইদুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, কেবল রান্নার জন্য শুকনো জ্বালানি ছাড়া অন্য কোনপ্রকার বনজ সম্পদ না ব্যবহারের শর্তে এবার জেলে-বহদ্দারদের দুবলা যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
তিনি জানান, বনহীন নির্দিষ্ট ৫টি চরে ডিপোসহ ৫৩৫টি অস্থায়ী ঘর তৈরির অনুমতি পাওয়া জেলেরা কেবল সমুদ্র ও সমুদ্র উপকূল থেকে মাছ শিকার করতে পারবেন। তারা কোনো অবস্থাতেই বনের অভ্যন্তরে নদ-নদী বা খালে মাছ শিকার করতে পারবেন না।
তিনি আরো জানান, শুটকি পরিবহনের জন্য এবার নিয়ন্ত্রিতভাবে শুধু পশুর ও বলেশ্বর নদী ব্যবহার করা যাবে। এসব দেখভালের বিষয়ে বন বিভাগের কঠোর মনিটরিং থাকবে।
এদিকে, শুটকি আহরণ মৌসুম শুরুর ফলে দস্যুদের দমন ও জেলেদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বন বিভাগের পাশাপাশি র্যাব ও কোস্টগার্ডের টহল জোরদার করা হয়েছে।
গত শুটকি মৌসুমে দুবলার ১৪টি চরের জেলেপল্লীতে জেলেরা ২৭ হাজার ৭১২ কুইন্টাল শুটকি মাছ উৎপাদন করেন। এ থেকে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের ১ কোটি ৩৮ লাখ ৫৬ হাজার টাকা রাজস্ব আয় হয়েছিল।
২০১৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবনের দুবলার জেলেপল্লীতে শুটকি মৌসুম শেষ হবে। তবে জেলে-বহদ্দারদের আবেদনের কারণে এ সময় আরো একমাস বাড়ানো হতে পারে বলে বন বিভাগ সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ২০১৫
এসআর