ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

গৌরনদী হানাদার মুক্ত হয় ২২ ডিসেম্বর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৫
গৌরনদী হানাদার মুক্ত হয় ২২ ডিসেম্বর

বরিশাল: ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা যুদ্ধের বিজয় ঘোষিত হলেও সর্বশেষ হানাদার মুক্ত হয়েছিলো বরিশালের গৌরনদী।

দীর্ঘ ২৮ দিন মুক্তিবাহিনী ও মুজিব বাহিনীর যৌথ আক্রমণের পর ১৯৭১ সালের ২২ ডিসেম্বর গৌরনদী কলেজ ক্যাম্পে অবস্থানরত শতাধিক পাকিস্তানি সেনা মিত্র বাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলো।



স্বাধীনতা যুদ্ধের ৪৪ বছর পেরিয়ে গেলেও এখানে এখনও সরকারি উদ্যোগে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে কোনো স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়নি।

যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সৈয়দ মনিরুল ইসলাম বুলেট ছিন্টু জানান, ’৭১ সালের ২৫ এপ্রিল পাক হানাদাররা ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক দিয়ে এ জনপদে প্রবেশের মাধ্যমে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। তাদের প্রবেশের খবর শুনে গৌরনদীর স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মীরা কটকস্থল (সাউদের খালপাড়) নামকস্থানের বটগাছের পেছনের অংশে পাক হানাদারদের প্রতিহত করার জন্য বাংকার তৈরি করে অবস্থান নেয়। হানাদাররা সেখানে পৌঁছালে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে পরে।

সেইদিন (২৫ এপ্রিল) পাক হানাদারদের সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে প্রথম শহীদ হন গৌরনদীর নাঠৈ গ্রামের সৈয়দ আবুল হাসেম, চাঁদশীর পরিমল মণ্ডল, গৈলার আলাউদ্দিন ওরফে আলা বক্স ও বাটাজোরের মোক্তার হোসেন। এটাই ছিলো বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে স্থলপথে প্রথমযুদ্ধ এবং এরাই হচ্ছেন প্রথম শহীদ। একই দিন মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে নিহত হয় আটজন হানাদার।

জানা গেছে, ২৫ এপ্রিল মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে আটজন হানাদার নিহত হওয়ার পর তারা (পাকবাহিনী) ক্ষিপ্ত হয়ে এলোপাথাড়ি গুলি ছুঁড়তে থাকে। ওই নরপশুদের গুলিতে সেইদিন দু’শতাধিক নিরীহ গ্রামবাসী মারা যায়। হানাদাররা গৌরনদী বন্দরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার শত শত ঘর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে।

মে মাসের প্রথম দিকে পাকবাহিনী গৌরনদী কলেজে স্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করে। ক্যাম্পে ছিল আড়াই শতাধিক সৈন্য ও স্থানীয় অর্ধশতাধিক আল-বদর, রাজাকার।

এ অঞ্চলে সর্বপ্রথম সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, অ্যাডভোকেট আ. করিম সরদার এমএলএর উদ্যোগে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করা হয়। ওই দলের প্রধান ছিলেন প্রয়াত মতিয়ার রহমান তালুকদার, সহযোগী ছিলেন প্রয়াত নুর মোহম্মদ গোমস্তা।

কোটালীপাড়ার হেমায়েত উদ্দিনের নেতৃত্বে গঠন করা হয় পৃথক বাহিনী। যা পরবর্তীতে হেমায়েত বাহিনী নামে পরিচিতি লাভ করে। হেমায়েত ও তার বাহিনী আগৈলঝাড়া-রামশীল-পয়সারহাট-সিকিরবাজার এলাকায় পাকবাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধ করেন।

সর্বশেষ মুজিব বাহিনীর একটি দল ভারত থেকে ট্রেনিং শেষে আগৈলঝাড়ায় এসে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ওই দলের নেতৃত্বে ছিলেন সাবেক চিফ হুইপ ও বর্তমান স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ। তার চাচাতো ভাই আব্দুর রকিব সেরনিয়াবাত, কসবার ফজলুর রহমান হাওলাদার, বিল্বগ্রামের মেজর শাহ আলম তালুকদার ছিলেন তার সহযোগী।

গৌরনদী কলেজে পাক হানাদারদের ক্যাম্পে মুক্তিবাহিনী ও মুজিব বাহিনী যৌথ আক্রমণ চালিয়েছিলো। দীর্ঘ ২৮ দিন যুদ্ধের পর পাক বাহিনী পরাস্ত হয়। একপর্যায়ে ২২ ডিসেম্বর গৌরনদী কলেজ ক্যাম্পে অবস্থানরত পাকবাহিনী মিত্র বাহিনীর মেজর ডিসি দাসের মাধ্যমে মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৫
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।