ঢাকা, রবিবার, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বাড়ছে দুর্ঘটনা

অন্যের জমিতে ১০৮৫ রেলক্রসিং!

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৫
অন্যের জমিতে ১০৮৫ রেলক্রসিং! ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: ২০০৯ সালে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলায় অবৈধ রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনায় ৯ জন নিহত ও ৩১ জন আহত হন। এ লেভেলক্রসিংটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) জমিতে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে।



শুধু পাঁচবিবিই, নয় বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলে মোট ১ হাজার ৮৫টি রেলক্রসিংয়ের কোনো বৈধতা নেই। অন্যের জমিতে গড়ে উঠেছে সেগুলো। এর ফলে এসব লেভেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনার দায়ভার নেয় না রেল মন্ত্রণালয়। এমনকি এলজিইডিও পাশ কাটিয়ে যায়।

সরকারের কোনো বিভাগ এসব লেভেলক্রসিংয়ের যথাযথ মেরামতও করে না।

সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে মোট ১ হাজার ১৬০টি লেভেলক্রসিং গেট রয়েছে। এর মধ্যে ৮১৪টির কোনো অনুমোদন নেই। অন্যদিকে পশ্চিমাঞ্চলে ১ হাজার ২৪৯টি লেভেলক্রসিং গেট রয়েছে। এর মধ্যে ২৭১টির কোনো অনুমোদন নেই। বাকি ৯৭৮টি গেটের অনুমোদন থাকলেও গেটকিপার রয়েছেন মাত্র ২২১টিতে।

দু’টি অঞ্চল মিলে রেলের ১ হাজার ৮৫টি লেভেল ক্রসিং অন্যের জমিতে নির্মাণ করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, রেলওয়ের অনুমোদন ছাড়াই সওজ, এলজিইডি, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন  ও জেলা পরিষদ, হাট বাজার ও সড়কে অবৈধভাবে লেভেলক্রসিংগুলো নির্মিত হয়েছে।

রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অবকাঠামো) কাজী রফিকুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, নানা সময়ে অবৈধভাবে রেলের লেভেলক্রসিং তৈরি করা হয়েছে। একসঙ্গে সবগুলো নির্মাণ করা সম্ভব না। এলজিইডি ও সওজের জায়গায় অনেক রেলক্রসিং আছে। সেগুলো মেরামত করা সম্ভব না। তবে আমদের রেলের জায়গায় তৈরি হওয়া ৫০০টি রেলক্রসিং আমরা মেরামত করবো।

রেলওয়ে অ্যাক্ট’১৮৯০ এবং রেলওয়ের ম্যানুয়াল অনুসারে অন্য বিভাগের মাধ্যমে লেভেলক্রসিংগুলো নির্মিত। ফলে লেভেলক্রসিং গেটগুলো সংশ্লিষ্ট মাধ্যমে প্রাপ্ত ডিপোজিট অর্থে মেন্টেনেন্স ও অপারেটিং কস্ট ব্যবস্থাপনার কথা থাকলেও তা করা সম্ভব হয়নি। ফলে অন্যের জমিতে গড়ে ওঠা রেলের লেভেলক্রসিংগুলো যথাযথভাবে মেইন্টেনেন্স না করায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।
 
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। একই সঙ্গে যানবাহনের চলাচল বাড়ায় অবৈধ ক্রসিংগুলোর রোড সারফেসসহ অন্যান্য অবকাঠামো দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে। ফলে দুর্ঘটনার সংখ্যাও বাড়ছে।
 
রেলওয়ের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ৭ বছরে বিভিন্ন লেভেলক্রসিংয়ে সংঘটিত ২৬৪টি দুর্ঘটনায় মোট ২০১ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ৩৪৯ জন। এসব দুর্ঘটনায় ৬৭টি লোকোমোটিভ ও বেশ কিছু যাত্রীবাহী কোচ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

২০০৬ সালে ৪৪টি দুর্ঘটনায় ৪৭ জন নিহত হন এবং আহত হন ৬১ জন। ২০০৬ সালে ৪১টি দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত হন এবং আহত হন ৩৭ জন।
তবে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটে ২০০৮ সালে। এ বছর ৫১টি দুর্ঘটনায় নিহত হন ৪৪ জন এবং আহত হন ৫৩ জন।
 
অন্যদিকে, ২০০৯ সালে ২৬ জন, ২০১০ সালে ১৫ জন, ২০১১ সালে ৩০ জন এবং ২০১২ সালে ২৩ জন নিহত হন অবৈধ রেলক্রসিংয়ের দুর্ঘটনায়।
 
রেলওয়ে জানায়, পশ্চিমাঞ্চলের মোট ২৭৩টি বিদ্যমান লেভেলক্রসিংয়ের পুনর্বাসন ও মান উন্নয়ন জরুরি হয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে ৫৩টি অবৈধ গেটকে বৈধ গেটে রূপান্তরও জরুরি হয়ে পড়েছে।
 
এসব ক্রসিং গেটগুলোকে আধুনিক করার পাশাপাশি ৮৫১ জন গেটকিপারও নিয়োগ জরুরি হয়ে পড়েছে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধকল্পে হাইওয়ে লেভেল ক্রসিংগুলোতে সিগন্যালিং ব্যবস্থা স্থাপন করাও জরুরি।
 
একই অবস্থা পূর্বাঞ্চলের লেভেলক্রসিংগুলোরও। এ অঞ্চলে ১৮৯টি গেটের উন্নয়ন, পুনর্বাসন ও মানোন্নয়ন জরুরি হয়ে পড়েছে। ১৫৭টি অবৈধ গেটকে বৈধ না করলে আরও দুর্ঘটনা বাড়বে। জরুরি ভিত্তিতে পূর্বাঞ্চলের ৩৪৬টি লেভেলক্রসিং গেটের উন্নয়ন ও ১ হাজার ৩৮ জন গেটকিপার নিয়োগ দেওয়াও প্রয়োজন।

এসব উদ্যোগ না নেওয়া হলে যেকোনো সময় লেভেলক্রসিংয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে খোদ বাংলাদেশ রেলওয়ে।

বাংলাদেশ সময়: ০৩০৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৫
এমআইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।