ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০৯ জুলাই ২০২৪, ০১ মহররম ১৪৪৬

জাতীয়

নয় মাসে ৩৩৩৬ নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতিত

ফররুখ বাবু, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৫
নয় মাসে ৩৩৩৬ নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতিত ছবি: প্রতীকী

ঢাকা: সাভারের জিঞ্জিরা এলাকায় যৌতুকের টাকা না পেয়ে স্বামী রবিউল তার দুই ভাই ও এক বোন মিলে ইলেকট্রিক টেস্টার দিয়ে স্ত্রী সুখীর এক চোখ উপড়ে ফেলেছেন। অন্যদিকে ময়মনসিংহের নান্দাইলে পিতার কাছে একাধিকবার ধর্ষণের শিকার হয়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে এক কন্যাশিশু।


 
কুমিল্লা সদর উপজেলায় পারিবারিক কলহের জের ধরে পাষণ্ড এক স্বামী ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নির্মমভাবে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছেন।

বর্বরোচিত কায়দায় নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের এসব ঘটনা উদ্বেগজনকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বছর জুড়েই ধর্ষণ, গণধর্ষণ এবং ধর্ষণের পর হত্যা খবরের শিরোনাম হয়েছে।
 
এমন কি সন্তানের সামনে মাকে ধর্ষণ, এক সঙ্গে মা-মেয়েকে ধর্ষণের মতো নিকৃষ্ট ঘটনাও ঘটেছে!
 
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্য অনুসারে, ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে ধর্ষণসহ ৩ হাজার ৩শ’ ৩৬ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়।

তথ্যমতে, ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৮২৬ জন, এর মধ্যে গণধর্ষণের শিকার ১৫৮ জন, ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৭১ জনকে।
 
বিগত তিন বছরের (২০১২, ২০১৩ ও ২০১৪) মধ্যে সবচেয়ে বেশি নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ২০১২ সালে। বছরটিতে ৫ হাজার ৬শ’ ১৬ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়।
 
২০১৩ সালে ৪ হাজার ৭শ’ ৭৭ জন ও ২০১৪ সালে ৪ হাজার ৬শ’ ৫৪ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
 
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে নির্যাতিত ৩ হাজার ৩শ’ ৩৬ জন নারী ও কন্যাশিশুর তালিকা:-

ধর্ষণ:
ধর্ষণের শিকার ৫৯৭ জন (জানুয়ারিতে ৩৯ জন, ফেব্রুয়ারি ৪৩ জন, মার্চ ৫৬ জন, এপ্রিল ৬৯ জন, মে ৭৮ জন, জুন ৬৬ জন, জুলাই ৫৯ জন, আগস্ট ৯২ জন এবং সেপ্টেম্বরে ৯৫ জন)।
 
গণধর্ষণ:
গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১৫৮ জন (জানুয়ারি ৯ জন, ফেব্রুয়ারি ১২ জন, মার্চ ১২ জন, এপ্রিল ২৪ জন, মে ১৮ জন, জুন ২৪ জন, জুলাই ১৫ জন, আগস্ট ২৮ জন, সেপ্টেম্বর ১৬ জন)।
 
ধর্ষণের পর হত্যা:
ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছেন মোট ৭১ জন (জানুয়ারিতে ৭ জন, ফেব্রুয়ারি ৮জন, মার্চ ১১ জন, এপ্রিল ০৪ জন, মে ০৭ জন, জুন ০৫ জন, জুলাই ০৯ জন আগস্ট ০৯ জন, সেপ্টেম্বর ১১ জন)।
 
ধর্ষণের চেষ্টা:
ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়েছেন মোট ১১১ জন (জানুয়ায়িতে ০৩ জন, ফেব্রুয়ারি ১১ জন, মার্চ ১০ জন, এপ্রিল ০৮ জন, মে ১৫ জন, জুন ১৬ জন, জুলাই ১৯ জন, আগস্ট ১৭ জন, সেপ্টেম্বর ১২ জন)।
 
এছাড়া শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছেন মোট ৭৯ জন। যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ২৭ জন নারী। পিতৃত্বের দাবির ঘটনায় নির্যাতনের সংখ্যা ০৭ জন। এসিডদগ্ধ হয়েছেন মোট ২৯ জন। অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন মোট ২৮ জন। অগ্নিদগ্ধের কারণে মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের।
 
অপহরণের শিকার হয়েছেন ৬৫ জন। নারী ও শিশু পাচারের শিকার ৪৬ জন। পতিতালয়ে বিক্রির শিকার হয়েছেন ১৫ জন। যৌতুকের কারণে হত্যার শিকার হন ১৬১ জন। যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হন ১৪১ জন নারী।
 
এছাড়াও বিভিন্নভাবে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন ২২২ জন। ৩২ জন গৃহপরিচারিকা নির্যাতনের শিকার হন। হত্যার শিকার হন ২৮ জন গৃহপরিচারিকা। গৃহপরিচারিকা আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে ০২ জন। হত্যার শিকার হয়েছেন মোট ৫০০ জন। হত্যাচেষ্টার ঘটনার শিকার হয়েছে ৩৬ জন নারী ও কন্যাশিশু।
 
বখাটেদের উত্যক্তের ঘটনার শিকার হয়েছে ২৯৩ জন নারী ও কন্যাশিশু। উত্যক্তের কারণে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে ১৬টি। প্রেম প্রত্যাখান করায় নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ০৬ জন। ফতোয়ার কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ২৭ জন। জোরপূর্বক বিয়ের কারণে নির্যাতনে শিকার হন ৫ জন। বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে  ৬৭ কন্যাশিশু।
 
আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে ২৩১টি। আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন ১০ জন। আত্মহত্যার প্ররোচনার শিকার হয়েছেন ০৭ জন। রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে ১১০ জন নারীর। পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়েছে  ৩৫ জন নারী ও কন্যাশিশু।
 
এছাড়াও বিবিধ কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১৫৭ জন নারী ও কন্যাশিশু।  
 
মানবাধিকার সংগঠন, সরকারের একক ও সম্মিলিত উদ্যোগের পরেও নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৫
এফবি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।