ঢাকা, শনিবার, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ০৬ জুলাই ২০২৪, ২৮ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

মনকাড়া আয়োজনে মুগ্ধ সবাই

বিশেষ শিশুদের নিয়ে বসুন্ধরার অন্যরকম একদিন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৫
বিশেষ শিশুদের নিয়ে বসুন্ধরার অন্যরকম একদিন ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: শীতের সকালে সূর্যি মামার দেখা। সকাল আটটার পর থেকে সূর্যের আলোয় দিনটা উজ্জ্বল হতে শুরু করে।

আর এই আলোময় দিনে বিশেষ শিশুদের (প্রতিবন্ধী শিশু) নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠান অন্যরকম এক রঙ ছড়িয়ে দিলো।
 
প্রাণ খুলে হাসি, নিজের ইচ্ছে মতো চলাফেরা, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণসহ নানা আয়োজনে শিশুরা প্রাণবন্ত ও ফুরফুরে। সঙ্গে আসা তাদের অভিভাবকেরাও ছিলেন নির্ভার ও তৃপ্ত।
 
বিশেষ শিশুদের (প্রতিবন্ধী শিশু) নিয়ে ‘উইন্টার ক্যাম্প ২০১৫ উইথ ন্যাশন চাইল্ড’ অনুষ্ঠানে এমনই এক দিন পার হলো। আর এমন দিনের আয়োজনে ছিল বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপ।
 
বৃহস্পতিবার (২৪ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় (ব্লক আই) বেলুন উড়িয়ে দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ও পরিচালক ইয়াশা সোবহান। সমাপনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক আফরোজা বেগম।

অনুষ্ঠান আয়োজনে সহযোগিতায় ছিল বসুন্ধরা পেপারস মিলস লিমিটেড ও বিশেষ শিশুদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা সুইড বাংলাদেশ।
 
বেলা সাড়ে নয়টার দিকে অনুষ্ঠান প্রাঙ্গনে প্রবেশ করেই দেখা পাওয়া যায় বিশেষ এসব শিশুরা আয়োজকদের দেওয়া লাল টি শার্ট পরে নিজেদের মতো করে আনন্দে মেতে ওঠেছে। দুপুরে তো রীতিমতো উৎসবে পরিণত হয় দিনব্যাপী চলা এ অনুষ্ঠান।
 
সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে অনুষ্ঠান স্থলে প্রবেশ করেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। ১১টার দিকে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।
 
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়। এরপর ‘উইন্টার ক্যাম্প ২০১৫ উইথ ন্যাশন চাইল্ড’ এর একটি ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজের লোগো উন্মোচন করেন ইয়াশা সোবহান।
 
এরপর শুরু হয় শিশুদের খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক, নৃত্য প্রতিযোগিতা। ১৫ বছরের নিচে ও ১৫ বছরের বেশি এভাবে দুই ভাগে ভাগ করে এসব প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।

দুপুর পৌনে দুইটা পর্যন্ত চলে এসব প্রতিযোগিতা। দুপুরে খাবারের বিরতি চলে ৩০ মিনিটের মতো। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে অতিথিদের সামনে নৃত্য পরিবেশন করে বিশেষ শিশুরা। শিশুদের নৃত্য ও গান পরিবেশনায় অতিথিরা মুগ্ধতা প্রকাশ করেন।
 
নৃত্য ও গান পরিবেশনা শেষে দৌড়, সফট বল নিক্ষেপ, নৃত্য, চিত্রাঙ্কন, গানসহ নয়টি ইভেন্টে বিজয়ী ২৭ জনকে পুরস্কার হিসেবে ক্রেস্ট ও প্রাইজ মানি দেওয়া হয়। অংশ নেওয়া প্রতিজনকেও দেওয়া হয় প্রাইজ মানি ও কিছু উপহার।
 
সমাপনী অনুষ্ঠানে ‘উইন্টার ক্যাম্প ২০১৫ উইথ ন্যাশন চাইল্ড’  এর মূল উদ্যোক্তা ইয়াশা সোবহানকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক আফরোজ বেগম বলেন, আজকেই প্রথম পরিচিত হলাম ন্যাশন চাইল্ডের সঙ্গে। খুবই ভালো লাগলো।
 
এ আয়োজন সব সময় থাকবে জানিয়ে বিশেষ এসব শিশুদের উদ্দেশ্যে আফরোজা বেগম বলেন, তোমরা খেলাধুলা ও পড়াশোনা চালিয়ে যাবে। তোমাদের পাশে সব সময় বসুন্ধরা থাকবে।

‘উইন্টার ক্যাম্প ২০১৫ উইথ ন্যাশন চাইল্ড’ এর মূল উদ্যোক্তা ও ফাউন্ডার ইয়াশা সোবহান বলেন, অনেক স্বপ্ন আছে তোমাদের নিয়ে। যেন আরও কিছু করতে পারি, সে চেষ্টা করে যাবো। আমি অনেক খুশি আজকের তোমাদের সঙ্গে সময় কাটাতে পেরে। সবশেষে তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপনী ঘোষণা করেন।
 
সমাপনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট গ্রুপের (বিডিজি) ভাইস চেয়ারম্যান দিলারা মুস্তফা, ডিরেক্টর রাবিয়া মেহের মাহমুদ, সুইড বাংলাদেশের মহাসচিব জওয়াহেরুল ইসলাম মামুন, পরিচালক (স্পোর্টস অ্যান্ড কালচারাল) কাজী বিলকিস বেগমসহ বসুন্ধরা গ্রুপের ঊর্ধতন কর্মকর্তারা।
 
এ ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন ও সারাদিন অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণ ঘুরে সবার সঙ্গে যোগাযোগ ও বিশেষ শিশুদের সঙ্গে সময় কাটানো এবং দক্ষতার সঙ্গে অনুষ্ঠানটি পরিচালনার জন্য এসব শিশুদের অভিভাবকেরা ‘উইন্টার ক্যাম্প ২০১৫ উইথ ন্যাশন চাইল্ড’ এর মূল উদ্যোক্তা ও ফাউন্ডার ইয়াশা সোবহানকে ধন্যবাদ জানান ও তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
 
বিশেষ শিশুদের নিয়ে কাজ করা সংস্থা সুইড বাংলাদেশ এর পক্ষ থেকে জানানো হয়, এ অনুষ্ঠানে তাদের ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ জেলার ১১টি শাখা থেকে ১৫৫ জন বিশেষ শিশু (প্রতিবন্ধী) এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে। এসব শিশুদের সঙ্গে তাদের অভিভাবকরাও ছিলেন।
 
আয়োজকরা জানান, এখন থেকে প্রতি বছর বিশেষ দিন ও দিবসে এমন আয়োজন করা হবে। ‘উইন্টার ক্যাম্প ২০১৫ উইথ ন্যাশন চাইল্ড’ ওয়েবসাইট: (http://bgnationchild.com) ও ফেসবুক পেজ  (Facebook//bgnationchild.com) ।
 
বিশেষ শিশু ও বড়দের সঠিক আবাসনের দাবি: প্রতিটি বিশেষ শিশুর সঙ্গে একজন করে অভিভাবক এসেছিলেন এ অনুষ্ঠানে। তারা এ প্রতিবেদককে জানান, বিশেষ শিশু ও মানুষদের জন্য সঠিক আবাসন থাকা জরুরি। এদের পাশে কেবল বাবা ও মা-ই বেশি থাকেন। কিন্তু যখন বাবা-মা থাকবে না, তখন তাদের কী হবে!
 
রাজধানীর গ্যান্ডেরিয়া এলাকা থেকে আসা অভিভাবক পারভিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, অটিজম শিশুদের নিয়ে অভিভাবকদের সবসময়ই দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়। যেমন ধরুন, আমার ১৬ বছরের মেয়ে রয়েছে। সে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারে না। এখন আমি তাকে দেখাশোনা করছি, কিন্তু যখন থাকবো না, তখন কি হবে ওর!

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৫
একে/এএসআর/আরএইচ

** ন্যাশন চাইল্ডদের বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে চান ইয়াশা সোবহান
** শুরু হলো দিনব্যাপী ‘উইন্টার ক্যাম্প উইথ ন্যাশন চাইল্ড’
** শুরু হচ্ছে বসুন্ধরার ‘উইন্টার ক্যাম্প উইথ ন্যাশন চাইল্ড’

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।