ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

পাইপে পড়ে মৃত্যুর এক বছর

শিশু জিহাদ স্মরণে তৈরি হচ্ছে স্মৃতিফলক

শেখ জাহাঙ্গীর আলম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৫
শিশু জিহাদ স্মরণে তৈরি হচ্ছে স্মৃতিফলক ছবি/শেখ জাহাঙ্গীর আলম/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: পাইপে পড়ে শিশু জিহাদের মৃত্যুর এক বছর পূর্তি হচ্ছে রোববার (২৭ ডিসেম্বর)। জিহাদ বেঁচে নেই, তবে তার স্মৃতি এখনো তাড়া করে বেড়ায় রাজধানীর শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনির সবাইকে।

জিহাদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী সামনে রেখে তার স্মরণে তৈরি করা হয়েছে একটি স্মৃতিস্তম্ভ।
 
গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে রাজধানীর শাহজাহানপুরে বাসার কাছে রেলওয়ে মাঠে খেলতে গিয়ে পানির পাম্পের পাইপে পড়ে যায় জিহাদ। প্রায় ২৩ ঘণ্টা উদ্ধার কার‌্যক্রম পরিচালনার পর ২৭ ডিসেম্বর বিকেল তিনটার দিকে জিহাদকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এরপর শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
 
রেলওয়ে কলোনির মাঠের পাশে যে পাইপে পড়ে গিয়েছিলো শিশু জিহাদ সেখানেই একটি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করেছেন জিহাদের পরিবার ও এলাকাবাসী। ৬ বাই ৬ ফুট একটি দেয়ালে ৩ বাই ৩ ফুট একটি ম্যুরালে জিহাদের ছবি লাগানো হয়েছে।

বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকাল সাড়ে ৫টা থেকে এ ম্যুরালে স্মৃতিস্তম্ভের কাজ শুরু করে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে।

জিহাদের এ স্মৃতিফলক তৈরির কাজ করেছেন ম্যুরালশিল্পী লিটন শীল। তিনি ঢাকা আর্ট কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তার গ্রামের বাড়ি রংপুরের বদরগঞ্জে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় আর্ট রিলেটেড ম্যুরাল, টেরাকোঠা ও স্কাপচার তৈরির কাজ করে থাকেন তিনি।
 
জিহাদের ম্যুরাল স্মৃতিফলক তৈরির সময় লিটন বাংলানিউজকে বলেন, ‘গত বছর জিহাদ এখানে থাকা পাইপে পড়ে মারা যায়। গণমাধ্যমে সংবাদ দেখেছি, পড়েছি। খুব খারাপ লেগেছিলো তখন। আজ শিশু জিহাদের ম্যুরাল তৈরি করতে এসে বুঝলাম, এ এলাকার সবাই জিহাদকে কতোটা ভালোবাসেন। শিশু জিহাদকে তারা ভুলে যাননি’।
 
রেলওয়ে কলোনির বাসিন্দা শামসুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘জিহাদের স্মৃতিফলকটি তৈরির জন্য এ এলাকার বাসিন্দাদের সম্মতি আছে। আমরা চাই, এর একটি দৃষ্টান্ত থাকুক। পরিত্যক্ত এমন কোনো জিনিস যাতে খোলা না থাকে, সেদিকে লক্ষ্য রাখা দরকার। আর পরিবারের সবাই যেন তাদের সন্তানদের প্রতিও লক্ষ্য রাখেন’।
 
জিহাদের বিয়য়ে তিনি বলেন, ‘জিহাদ মানুষের কাছ থেকে আদর চেয়ে নিতো। এসেই সালাম দিয়ে বলতো, কি করেন?  এখনও মনে পড়ে, জিহাদের বলা সুন্দর সুন্দর কথাগুলো’।
 
জিহাদের পাশের বাসায় বসবাস করেন মো. আলাউদ্দিন। তিনি পেশায় একজন ফল ব্যবসায়ী। জিহাদের বিষয়ে বলেন, ‘বিকালে আমার সঙ্গে জিহাদের বেশি দেখা হতো। আমাকে জিহাদ নানা বলে ডাকতো। আর এসেই আমার সঙ্গে দুষ্টামি করতো। আমিও করতাম। মাঝে মাঝে খেপে যেতো। আদর করলে আবার ঠিক হয়ে যেতো’।
 
জিহাদের পরিবারসহ এ এলাকার সবাই মিলে ওই পাইপের কাছেই একটি স্মৃতিফলক তৈরি করা হয়েছে। জিহাদ মারা গেছে এক বছর হলো। তাই ওর স্মরণেই এ উদ্যোগ এলাকার সবার।

জিহাদের মামা মো. রঞ্জু বাংলানিউজকে বলেন, জিহাদের স্মরণে তৈরি এ স্মৃতিফলকটির উদ্বোধন করা হবে শনিবার (২৬ ডিসেম্বর)। গত বছরের (২০১৪ সাল) ২৬ ডিসেম্বর পাইপে পড়ে যায় জিহাদ, পরদিন ২৭ ডিসেম্বর উদ্ধার করা হয় তার মরদেহ। আর ওই পাইপের পাশেই এ স্মৃতিফলকটি তৈরি করা হয়েছে।
 
জিহাদের স্মৃতিফলকটি উদ্বোধনের পর সবাইকে নিয়ে মিলাদ ও দোয়া অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানান তিনি।
 
বাংলাদেশ সময়: ২১১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৫
এসজেএ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।