ঢাকা, সোমবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ জুলাই ২০২৪, ২৩ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

‘আগে টের প্যাইলে ধইরা ফেলতু’

শরীফ সুমন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৫
‘আগে টের প্যাইলে ধইরা ফেলতু’ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

রাজশাহী: ‘মসজিদের মধ্যে বোমা মারইবে ভ্যাইবতে পারেনি। পাশে দ্যাঁড়িয়ায় (দাঁড়িয়ে) নামাজ পইড়ছিল।

আগে টের প্যাইলে ধইরা ফেলতু। কিন্তু মুহূর্তেই সব ঘইট্যা গেল। ’

হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে ঘাতককে জীবন্ত অবস্থায় ধরতে না পাড়ার আক্ষেপের কথাগুলো এভাবেই বলছিলেন রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার শুভডাঙ্গা ইউনিয়নের সৈয়দপুর চকপাড়া গ্রামের কৃষক সাহেব আলী (৩৬)।

মসজিদে তার ঠিক ডান পাশেই ছিল আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী সেই অজ্ঞাতপরিচয় যুবক। নিজে রক্তাক্ত হলেও বোমা বিস্ফোরণের পর অনেকটা সাহস করেই তাকে জাপটে ধরেছিলেন সাহেব আলী।

কিন্তু সবাইকে ডাকতে ডাকতেই মারা যায় সেই যুবক। সে সময় অন্য মুসল্লিরা প্রাণ ভয়ে দিকবিদিক পালাচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি নিজেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। আর চোখ খুলে নিজেকে আবিষ্কার করেন ভ্যানের ওপর। তখন তাকে ভ্যানে করে মচমইল বাজারে নিয়ে আসা হচ্ছিল। সেখান থেকে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশায় করে কেশরহাট। সেখান থেকে সিএনজি চালিত অটোরিকশায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে।

বর্তমানে সাহেব আলী (৩৬) রামেক হাসপাতালের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ১ নম্বর পেইং বেডে চিকিৎসাধীন। জরুরি অস্ত্রোপচারের পর তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তবে তার শারীরিক অবস্থা শঙ্কামুক্ত। সবার সঙ্গে কথা বলতে মানা নেই তার।

পাশেই ৩ নম্বর পেইং বেডে চিকিৎসাধীন সাহেব আলীর আপন চাচাতো বড় ভাই ময়েজ উদ্দিন (৪০)। রামেক হাসপাতালে জরুরি অস্ত্রোপচারের পর সন্ধ্যায় তার কোমরের এক্স-রে করা হয়েছে।

এদের মধ্যে সাহেব আলীর ডান কোমরের উপরে এবং বড় ভাই ময়েজ উদ্দিনের ডান পায়ের উপরে এবং তলপেটের নিচে বোমার স্প্লিন্টারের আঘাত রয়েছে। এছাড়া একই ঘটনায় আহত ১২ বছরের শিশু নয়নের ডান পায়ের উপরে স্প্লিন্টারের আঘাত রয়েছে। তাকে ভর্তি করা হয়েছে ৯ নম্বর ওয়ার্ডে।

সাহেব আলী জানান, শুক্রবার হাটবার ছিল। সপ্তাহে চার দিন তাদের গ্রামে হাট বসে। এর মধ্যে রোববার গরুর হাট, সোম ও শুক্রবার পানের হাট এবং বুধবার সাধারণ হাট বসে। শুক্রবারের পানের হাটটি সবচেয়ে বড়। পানের জন্য এদিন বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারি ব্যাবসায়ীরা আসেন ওই হাটে। তাদের অনেকে দুপুরে পান বিক্রি করে সৈয়দপুর চকপাড়া আহমেদিয়া জামে মসজিদে যান জুমার নামাজ আদায় করতে।

তিনি আরও জানান, মসজিদে ইমাম সাহেবের পর দুই কাতারে আনুমানিক ৫০ থেকে ৫৫ জন নামাজ আদায় করছিলেন আজ। তিনি ছিলেন প্রথম কাতারে আর অপরিচিত সেই যুবক ছিল পেছনের কাতারে। পেছনে সুন্নত নামাজ আদায় শেষে দুই রাকাত ফরজ নামাজ শুরু হলে সামনের কাতারে আসেন ওই যুবক। পরনে জিন্স প্যান্ট, কালো জ্যাকেট ও মুখ মাফলার দিয়ে জড়ানো ছিল তার।

প্রথম রাকাত নামাজ শেষে দ্বিতীয় রাকাতের রুকুতে যাওয়ার পর বোমার বিস্ফোরণ ঘটান। বোমার বিকট শব্দে মুহূর্তের মধ্যেই নামাজ ছেড়ে মসজিদের মুসল্লিরা প্রাণ ভয়ে ছোটাছুটি শুরু করেন।

ওই সময় তিনি রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে গেলেও পাশে থাকা যুবকটিকে ধরে রেখেছিলেন। কিন্তু কয়েক মিনিটের মধ্যে যুবকটি মারা যায় এবং তিনিও এক পর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।

সাহেব আলীর ভাষ্যমতে, কাদিয়ানি মসজিদ হলেও হাটের দিন তাদের বাইরে অনেক অপরিচিত মানুষই ওই মসজিদে নামাজ পড়তে আসেন। যে কারণে সেভাবে কখনও কাউকে সন্দেহের চোখে দেখেন না তারা। এছাড়া মসজিদের মধ্যে কেউ এমন নৃশংস ঘটনা ঘটাবে তা কল্পনাও করতে পারেনি কেউ।

সন্ধ্যায় তাদের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিতে যান রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. প্রফেসর মনোয়ারুল ইসলাম।

তিনি বেরিয়ে এসে কথা বলেন বাংলানিউজের সঙ্গে। এ সময় তিনি বাগমারায় মসজিদে বোমা হামলায় আহত তিনজন বর্তমানে আশঙ্কামুক্ত বলে জানান।

বাংলাদেশ সময়: ২২২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৫
এসএস/এটি

** বাগমারায় মসজিদে আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনায় মামলা
** বাগমারায় মসজিদে আত্মঘাতী বোমায় হামলাকারী নিহত
** বাগমারায় মসজিদে আত্মঘাতী বোমায় হামলাকারী নিহত
** আজান শেষে সবার আগে মসজিদে প্রবেশ করে হামলাকারী

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।