ঢাকা, সোমবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ জুলাই ২০২৪, ২৩ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

না ফেরার দেশে ভাষাসৈনিক দৌলতুজ্জামান

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৫
না ফেরার দেশে ভাষাসৈনিক দৌলতুজ্জামান ভাষাসৈনিক দৌলতুজ্জামান

ঢাকা: নাটোরের ভাষাসৈনিক দৌলতুজ্জামান। তবে তিনি দোলা নামেই বেশি পরিচিত।

৫২’র ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি ছিলেন নাটোরের জিন্নাহ মেমোরিয়াল হাইস্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র।
 
সে সময় নাটোরে কোনো কলেজ ছিল না। কলেজ না থাকায় ভাষা আন্দোলনের দায়িত্ব পড়ে স্কুলছাত্রদের উপর।

ওই বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি রাজধানীতে ছাত্র হত্যার প্রতিবাদ ও “রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই” দাবিতে শিক্ষার্থীদের মিছিলে নেতৃত্ব দেওয়ায় তাকে টেস্ট পরীক্ষায় ফেল করানো হয়। মনের কষ্টে স্কুল ছাড়েন দোলা। পরের বছর ভর্তি হন মহারাজা হাইস্কুলে।

কিন্তু ভেতরের তাগিদে ভাষা আন্দোলনের মিছিল মিটিং থেকে দূরে থাকতে পারেননি তিনি। ১৯৫৪ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি “রাষ্ট্র ভাষা বাংলার” দাবিতে রাজপথ কাঁপানোর অপরাধে ২২ ফেব্রুয়ারি দোলা গ্রেফতার হন।

পরদিন কোর্ট হাজতে এসে দেখেন, শুধু তিনি নন সে সময়ের মহকুমা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুল্লাহ বাহার, আওয়ামী লীগ নেতা কাঁচুউদ্দিন মোক্তার ও আয়ুব আলীকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।

একই সঙ্গে আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠায়।   জামিন শুনানির সময়  জানতে পারেন, মিছিল করার অপরাধে নয়- পুলিশ তাদের নামে ডাকাতির মামলা দায়ের করেছে।

অভিযোগ, জিন্নাহ মেমোরিয়াল স্কুলের সদর দরজা ভেঙে তারা ডাকাতি করতে গিয়েছিলেন। কোনো আপত্তিই কানে তোলেনি আদালত। জায়গা হয় জেলখানায়।

তবে দোলা এসএসসি পরীক্ষার্থী জেনে জেল কর্তৃপক্ষ তার লেখাপড়ার সুযোগ করে দেয়।
বাড়ি থেকে আনা হয় বই।

এর কিছু পরে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী জনসভা করতে নাটোর আসেন।   আমতলায় আয়োজিত জনসভা থেকে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে আটক মিছিলকারীদের বিরুদ্ধে ডাকাতি মামলা রুজু করায় ভাসানী হঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

তিনি তাদের মুক্তির দাবিতে স্থানীয় প্রশাসনকে কড়া ভাষায় হুমকি দেন।   ভাসানীর দেওয়া সেই হুমকিতে কাজ হয়।   সাত দিনের মাথায় তারা জামিনে মুক্তি পান।

১৯৫৪ সালে মহারাজা স্কুল থেকে এসএসসি পাস করে দোলা রেলওয়ে বিভাগে চাকরি নিয়ে সৈয়দপুর চলে যান। একদিকে অর্থনৈতিক কারণ, অন্যদিকে নাটোরে কলেজ না থাকায় উচ্চশিক্ষা নেওয়ার সুযোগ নেই। এরপর বলতে গেলে দীর্ঘ ২৪ বছর নাটোরের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল না।

শুক্রবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুর সোয়া তিনটার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের নিবিড় পর‌্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই ভাষাসৈনিক। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর।

দোলার পরিবারের সদস্যরা জানান, দীর্ঘ দিন যাবৎ তিনি বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। এর আগে মঙ্গলবার (২২ ডিসেম্বর) অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

গাড়িখানা জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে জানাজা শেষে শনিবার দুপুরে (বাদ জোহর) গাড়িখানা গোরস্থানে তাকে দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা।

বাংলাদেশ সময়: ০১৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৫
এটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।