ঢাকা, শনিবার, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২৯ জুন ২০২৪, ২১ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

বাংলানিউজকে আসিফ মুনীর

গয়েশ্বরের কথায় অবাক হইনি, দেশের মানুষ বোকা না

সাজেদা সুইটি, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৫
গয়েশ্বরের কথায় অবাক হইনি, দেশের মানুষ বোকা না আসিফ মুনীর

ঢাকা: মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিতর্কিত মন্তব্যের পর বুদ্ধিজীবীদের ‘নির্বোধ’ বললেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। কিন্তু এসবে এখন আর অবাক হন না শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর সন্তান আসিফ মুনীর।



বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপে দৃঢ়কণ্ঠে এ শহীদ সন্তান জানান, এসবে এখন আর একদমই অবাক হন না তিনি, তার পরিবারের সদস্যরাও। কারণ ভুক্তভোগীরাই জানে কষ্ট কতটুকু লাগে। যারা ভোগেনি, তারা বোঝে না সেটি। বিভ্রান্তি ছড়াতে এসব বলতেই পারে তারা।  

২৫ ডিসেম্বর রাজধানীতে একটি আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখছিলেন গয়েশ্বর। খালেদা জিয়াকে নিয়ে উত্তপ্ত সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে তিনি বলেন, একাত্তরে ১৪ ডিসেম্বর নির্বুদ্ধিতার কারণেই এদেশের বুদ্ধিজীবীরা মারা গেছেন।
 
বিএনপির এ নেতা আরও বলেন, ‘ওনারা (বুদ্ধিজীবীরা) যদি এতো বুদ্ধিমানই হয়ে থাকবেন, তাহলে ১৪ তারিখ (১৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১) পর্যন্ত তারা বাংলাদেশে থাকেন কি জন্যে নিজের ঘরে? একটু বলেনতো আমারে আর তাদের যারা নিজ নিজ কর্মস্থলে প্রতিমাসে বেতন তুললো, পাকিস্তানের বেতন খাইলো, এইটা নিয়াওতো কথা বলা যায়, যায় কিনা?’

উপস্থিত নেতাকর্মীরা সমস্বরে ‘বলা যায়‘  বলে তাকে সায় দেন।

উৎসাহী গয়েশ্বর বলতে থাকেন, ‘হ্যাঁ, নেতৃত্বের অজ্ঞতার কারণে, আগাম সতর্কতার অভাবে ২৫ মার্চ যারা মারা গেছে, আত্মাহুতি দিসে, তারা না জানার কারণে। কিন্তু ১৪ ডিসেম্বর যারা মারা গেছে, তারাতো অজ্ঞাত কারণে মারা যায় নাই। তারা জ্ঞাতসারেই বাড়িতে ছিল। তারা প্রতিদিনই তো যে যেখানে কর্মস্থল ছিল সেখানে যাইতো। ’

স্বাভাবিকভাবেই সবকিছু ইতোমধ্যে জেনেছেন শহীদ সন্তান আসিফ মুনীরও।

প্রসঙ্গ টানতেই তাই বলেন, আমি অবাক হইনি, এখন আর আমরা এসব শুনে অবাক হই না। খালেদা জিয়া যেটি বলেছেন, গয়েশ্বর যা বলছেন, এসবতো নতুন নয়, বারবার তারা বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করেছেন।

‘কিন্তু নির্দিষ্ট করে কিছু কথা পুরোপুরি ভিত্তিহীনভাবে বলেছেন। বিশেষ করে আমাদের বাবাদের, বুদ্ধিজীবীদের প্রসঙ্গে তারা বলছেন, চাকরি করছিলেন, বেতন নিচ্ছিলেন। কীসের ভিত্তিতে এসব বলছেন’- বলেন তিনি।
 
আসিফ মুনীর বলেন, ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পরে কেউ চাকরি, অফিস করা- এসবে ছিলেন না। অসহযোগ যখন চলছিল, যুদ্ধ চলাকালে কে অফিস করছিল নিয়মিত। এসব বলা হাস্যকর ব্যাপার।

নিজের বাবা প্রসঙ্গে মা লিলি চৌধুরীর উদ্ধৃতি দেন আসিফ, বলেন, পাকিস্তান সরকার সে সময় চাপ দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষককে। যেন তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে যায়, যাতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক মনে হয়। কিন্তু চাকরি করছিলেন, বেতন নিচ্ছিলেন- এসব ভিত্তিহীন কথা। যার যার অবস্থান থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করছিলেন তাদের কেউ কেউ।

মুনীর চৌধুরীর ছোট ছেলে আসিফ মুনীর বলেন, আমার বাবারও পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল। লেখালেখির কারণে সে সুযোগ ছিল তার। কিন্তু দেশ ছেড়ে না পালানো তাদের (গয়েশ্বর) কাছে নির্বুদ্ধিতা মনে হতে পারে, তারা বা তাদের আত্মীয়-স্বজনরা হয়তো তাই করেছিলেন। কিন্তু ভুক্তভোগীরাই জানেন, কষ্টগুলো।

আমাদের বাবাদের আগে থেকেই টার্গেট করা হয়েছিল। তালিকা করে বাছাই করে তাদের হত্যা করা হয়। মুনীর চৌধুরীসহ অনেকেই ৫২ থেকেই তালিকায় ছিলেন। মুনীর চৌধুরীকে একটি খেতাব দেওয়া হয়েছিল- ‘সিতারা ইমতিয়াজ’। তিনি সেটি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন’- বলেন আসিফ।

আবারও বর্তমানে ফেরেন শহীদের এ সন্তান। বলেন, বুদ্ধিজীবীদের প্রসঙ্গে বিভ্রান্তির চেষ্টা নতুন নয়। একাত্তরের পরে ইতিহাস অনেকবার খণ্ডিত করার চেষ্টা হয়েছে। দুঃখজনক হলো- পৃথিবীর আর কোনো দেশে ইতিহাসকে এভাবে অস্বীকারের চেষ্টা হয়নি, যতটা বাংলাদেশে হয়েছে। ঘটনা যা ঘটেছে, তাকে সত্যি হিসেবে নেওয়া হয়েছে সেসব দেশে। জাতির জনক নিয়ে বিতর্ক তোলেনি তারা।

‘কিন্তু দুঃখজনক বিষয়- বাংলাদেশে এসব নিয়ে বিতর্ক হয়। বিভ্রান্তি ছড়ানোর ধারাবাহিকতায় এবারও কথাগুলো হয়েছে’- আসিফ মুনীর বলেন।

তিনি বলেন, ভুক্তভোগীরা এসব ব্যাপার বুঝবেন, তাদের (গয়েশ্বর) কাছের লোকরা যুদ্ধের সময় কোথায় ছিলেন, ভুক্তভোগী কতটা জানি না। কিন্তু এটা জানি, দেশকে মেধাশূন্য করার পরিকল্পনা হিসেবে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছিল।

সমস্যার সমাধানও দেন আসিফ, বলেন, তারা আমাদের বুদ্ধিজীবীদের বোকা বলছেন, দেশের মানুষ বোকা না। দেশের মানুষ এসব বুঝবে। একজন, দু’জন বা ১০ জন বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করলে লাভ হবে না। এখন দরকার, সঠিক ইতিহাস যারা জানেন, তারা যেন সত্যগুলো তুলে ধরেন, নতুন প্রজন্মকে জানান।

শহীদদের সন্তানদের সংগঠন ‘প্রজন্ম ৭১’র সহ-সভাপতি আসিফ মুনীর। সংগঠন থেকে দু’একদিনের মধ্যে এসব বিষয়ে কর্মসূচি দেবেন বলেও বাংলানিউজকে জানান তিনি।
 
বাংলাদেশ সময়: ২৩২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৫
এসকেএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।