ঢাকা, বুধবার, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ জুন ২০২৪, ১৮ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

মিরপুরে বোমা তৈরির কারখানা

২৫ মার্চ নাশকতার টার্গেট ছিলো জেএমবি’র

নুরুল আমিন ও শেখ জাহাঙ্গীর আলম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৫
২৫ মার্চ নাশকতার টার্গেট ছিলো জেএমবি’র ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম (ফাইল ছবি)

ঢাকা: আগামী ২৫ মার্চ দেশে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা নিয়েই বিপুল পরিমাণে গ্রেনেড-বোমা তৈরি করছিলেন নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্যরা। ধর্মীয় উৎসব, পীর ও ধর্মযাজকদের হত্যারও পরিকল্পনা ছিলো তাদের।


 
আর এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনই ছিলো জেএমবি’র সদস্যদের টার্গেট।

রাজধানীর শাহ আলী থানার মিরপুর-১ নম্বর এলাকার আস্তানা ও বোমা তৈরির কারখানা থেকে বোমাসহ জেএমবি’র একাংশের গুরুত্বপূর্ণ তিন সদস্যকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।

মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (দক্ষিণ) উপ-কমিশনার (ডিসি) মাশরুকুর রহমান খালেদ বাংলানিউজকে বলেন, সামনে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা ছিলো জেএমবি’র সদস্যদের। বিশেষ করে ২৫ মার্চকে টার্গেট করে বোমা তৈরি ও হামলার ছক তৈরি করছিলেন তারা।

ডিবি’র এই ডিসি আরও বলেন, গ্রেফতারকৃতরা ছাড়াও ওই বাসায় জেএমবি’র আরো দু’জন সদস্য ছিলেন। তারা অভিযানের সময় বাইরে ছিলেন। তাই তাদের গ্রেফতার করা যায়নি। তবে আমাদের ধারণা, ওই দুইজন গ্রেফতার হলে গুরুত্বপূর্ণ আরও অনেক তথ্য পাওয়া যাবে।

তাদের গ্রেফতারে ঢাকাসহ সারাদেশের গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান মাশরুকুর রহমান খালেদ।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, মিরপুরের ওই আস্তানায় গ্রেফতারকৃত তিনজনের সঙ্গে থাকতেন শাকিল ও ইমরান নামে আরও দুই জেএমবি’র সদস্য। শাকিল জেএমবির এই অংশের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া শাকিল বিভিন্ন ইলেকট্রিক সার্কিটের সঙ্গে টাইমার যোগ করে গ্রেনেড তৈরির কাজ করতেন। আর পলাতক সোহেল রানা ওরফে হিরন ওরফে ইমরান ঢাকা ও এর আশপাশের অঞ্চলের অপারেশন কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
 
সূত্রটি আরো জানায়, ‘হ্যান্ড মেইড লোকাল গ্রেনেড’ তৈরির এ ফর্মুলাটি ছিলো শাকিলের। আগে জেএমবিতে শাকিলের মতো ‘বোম্ব মেকার’ ছিলো না। যে কারণেই সংগঠনের অনেক সদস্য বোমা তৈরি করতে গিয়ে বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন।

গোয়েন্দা পুলিশ মনে করছে, পলাতক শাকিলকে গ্রেফতার করা গেলে জেএমবি’র কাছে বোমা তৈরির কি পরিমাণ রসদ (বিস্ফোরক) ও তৈরি করা বোমা রয়েছে তা জানা যাবে। তারা কোন জায়গা থেকে বোমা তৈরির সরঞ্জামাদি ও বিস্ফোরক সংগ্রহ করতেন- সে তথ্যও জানা যাবে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের প্রধান সানোয়ার হোসেন বলেন, গ্রেফতারকৃত তিনজনের মধ্যে দু’জন হলেন বোম্ব মেকার। তারা জেএমবি’র সাংগঠনিক কোনো তথ্য দিতে পারেননি। তবে মো. আবু সাইদ সালমান ওরফে রাসেলের কাছ থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আমরা পেয়েছি। এসব তথ্যের যাচাই-বাছাই চলছে।

সানোয়ার হোসেন বলেন, বেশ কয়েকমাস ধরে গ্রেনেডগুলো তৈরি করে আসছেন পলাতক শাকিল। অপারেশনের সময় তিনি ওই বাসার বাইরে ছিলেন। আর একজন পলাতক সোহেল রানা ওরফে ইমরান জেএমবির এই অংশের অপারেশন কমান্ডার।

গত বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) মধ্যরাত ২টা  থেকে বৃহস্পতিবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টা পর্যন্ত শাহ আলী থানার মিরপুর-১ এলাকার ৯ নম্বর রোডের ‘এ’ ব্লকের একটি ভবনে জেএমবির আস্তানায় শ্বাসরুদ্ধকর ১৪ ঘণ্টার অভিযান চালায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। অভিযানে জেএমবির তিন জঙ্গি মো. আবু সা‌ঈদ ওরফে রাসেল ওরফে সালমান (২২), মো. ইলিয়াস ওরফে ওমর ফারুক (২৩) ও মহসীন আলী (২০) এবং সন্দেহজনক চারজনসহ মোট সাতজনকে আটক করা হয়। এ সময় ১৮টি গ্রেনেড-বোমা ও বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়।

অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া এডিসি সানোয়ার হোসেন জানান, গ্রেফতারকৃত সাঈদ ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। বিভিন্ন  জেলা ও থানায় সংগঠনের সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করতেন তিনি। আল-আরাফাহ ইসলামি ব্যাংকের সাভার শাখার অফিস সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন মো. ইলিয়াস। আর মহসীন আলী জেএমবি’র বোমা তৈরির কারিগর ছিলেন। এর আগেও বোমা তৈরির সময় তিনি আহত হয়েছেন। তার দেহে স্প্লিন্টারের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।

পরে গ্রেফতারকৃত তিন জেএমবি সদস্য, পলাতক শাকিল ও সোহেল রানা ওরফে ইমরান ছাড়াও অজ্ঞাতপরিচয় ছয়জনসহ মোট ১১ জনকে আসামি করে শাহ আলী থানায় মামলা দায়ের করে ডিবি পুলিশ। তবে ওই বাড়ি  থেকে আটক বাকি চারজনকে এ মামলায় আসামি  দেখানো হয়নি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। আরও তদন্ত সাপেক্ষে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হলে তাদের নামও এ মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছে ডিবি।

আদালতের নির্দেশে গ্রেফতারকৃতদের গত শুক্রবার (২৫ ডিসেম্বর) থেকে ছয়দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবি পুলিশ।
 
বাংলাদেশ সময়: ১২০১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৫
এনএ/এসজেএ/এএসআর

** সারাদেশে বোমা সরবরাহ করতো জেএমবি সদস্যরা

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।