ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

নিজস্ব গোয়েন্দা ইউনিট গঠন করছে দুদক

শেখ জাহিদুজ্জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২২২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৬
নিজস্ব গোয়েন্দা ইউনিট গঠন করছে দুদক

দেশের যেকোনো দুর্নীতি নির্মূলে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কাজে গতিশীলতা আনতে এবার নিজস্ব গোয়েন্দা ইউনিট গঠন করতে যাচ্ছে সংস্থাটি।  

ঢাকা: দেশের যেকোনো দুর্নীতি নির্মূলে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কাজে গতিশীলতা আনতে এবার নিজস্ব গোয়েন্দা ইউনিট গঠন করতে যাচ্ছে সংস্থাটি।

 

নিজস্ব গোয়েন্দা ইউনিট গঠন করা হলে প্রয়োজনীয় তথ্য এবং প্রাসঙ্গিক সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহে অনুসন্ধানকারী/তদন্তকারী ও কর্মকর্তাদের কারিগরি সহযোগিতা দেওয়া সহজ হবে। দুদকের ক্ষমতা ও সক্ষমতা আরো বাড়বে বলেও আশা করছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা।
 
২০০৪ সালের মে মাসে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর আওতায় দুর্নীতিমূলক কাজ প্রতিরোধের লক্ষ্যে দুর্নীতি এবং অন্য যেকোনো অপরাধের অনুসন্ধানে  স্বাধীন  দুদক প্রতিষ্ঠা করা হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির বয়স ১২ বছর অতিবাহিত হলেও নেই কোনো নিজস্ব গোয়েন্দা ইউনিট। ফলে অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয়েই কাজ করে যেতে হচ্ছে দুদককে।

তবে এবার পাঁচ বছরের কৌশলগত কর্মপরিকল্পনার মধ্যে  নিজস্ব গোয়েন্দা ইউনিট গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে দুদক। যে পরিকল্পনার মধ্যে  নিজস্ব গোয়েন্দা ইউনিট গঠনে সবেচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে দুদক সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
 
অন্যদিকে যেকোনো মামলার তদন্ত ও অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়েও  বেশিরভাগ সময়ই দুদককে বিভিন্ন সংস্থার সাহায্য নিতে হচ্ছে। দুদকের সোর্সের দেওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই যেকোনো অনুসন্ধান ও তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হয়। ফলে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, গোপন তথ্যও ফাঁস হয়ে গেছে। কিংবা দায়ের করা অভিযোগকারী ব্যক্তি নিরাপরাধ। কিংবা তিনি এ তথ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন- এমন ঘটনার তিক্ত অভিজ্ঞতাও রয়েছে দুদকের।

ফলে বেশিরভাগই সময় প্রকৃত দোষীরা দুদকের হাত ফসকে বের হয়ে যাচ্ছেন।

সূত্রে জানা গেছে, গড়ে প্রতিদিন  শতাধিক অভিযোগ জমা পড়ে দুদকে।   দুর্নীতির অভিযোগ যাচাই-বাছাই  টিম দেখেছে, এসব অভিযোগের মধ্যে প্রায় ৯৬ শতাংশ অভিযোগই দুদকের এখতিয়ার বহির্ভূত। আর বাকি ৪ শতাংশ অভিযোগের অধিকাংশই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আবার দুদক যখন অভিযোগগুলোর তদন্তে নামে তখন দেখা যায়, বেশিরভাগই পূর্বশত্রুত‍া কিংবা ব্যক্তিস্বার্থের জেরে দায়ের করা হয়েছে। ফলে একদিকে যেমন দুদকের সময় নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে তেমনি ইমেজ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

এসব কারণেও যেকোনো তথ্য ও অনুসন্ধান কার্যঅক্রমের গতিশীলতা বাড়াতে নিজস্ব গোয়েন্দা ইউনিট গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে দুদক।

দুদকের সচিব আবু মো. মোস্তফা কামাল বাংলানিউজকে বলেন, প্রস্তাবিত পঞ্চবার্ষিকী খসড়া কৌশলগত কর্মপরিকল্পনায় নিজস্ব গোয়েন্দা শাখা/ইউনিট গঠনের উল্লেখ রয়েছে। এটি হলে কাজের গতিশীলতা অনেক বাড়বে। কেননা যেকোনো তথ্য যাচাই কিংবা অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে দুদককে অন্যের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হয়।

দুদক সূত্রে আরো জানা গেছে,পঞ্চবার্ষিকী কৌশলগত কর্মপরিকল্পনার খসড়ায়  পাসপোর্ট অধিদফতর, নির্বাচন কমিশন, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতার কথা বলা হয়েছে। আর এ সংক্রান্ত চুক্তি প্রস্তাবিত গোয়েন্দা ইউনিটের সঙ্গে হবে। ফলে আসামির যেকোনো তথ্যের প্রয়োজন হলে প্রতিষ্ঠানগুলো দুদকের নিজস্ব গোয়েন্দা ইউনিটকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করবে।
 
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, দুদক নিজস্ব গোয়েন্দা ইউনিট গঠনে যে উদ্যোগ নিয়েছে, সেটির পেছনে অবশ্যই যৌক্তিকতা রয়েছে।   যারা সাধারণত দুর্নীতি করেন তারা কোনো ফাঁক-ফোকর রাখেন না। ফলে দুর্নীতির জটিলতা বাড়ছে। তাই দুদককে আরো বেশি বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে অবশ্যই একটি গোয়েন্দা ইউনিটের প্রয়োজন।
 
তিনি আরো বলেন, ‘দুদককে শুধু গোয়েন্দা ইউনিট গঠন করলেই হবে না। এখানে অবশ্যই যোগ্য কর্মী নিয়োগ করতে হবে। ইউনিটটিরও স্বচ্ছতা থাকতে হবে।   আমাদের দেশে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার নামের সঙ্গে কালেমা লেপে আছে। তাই দুদকের গোয়েন্দা ইউনিট যেন ক্ষমতার অপব্যবহার না করে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে’।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮২০ ঘন্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৬
এসজে/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।