অসুস্থতার কারণে ছুটি নিয়ে বিদেশ যাওয়ার পর প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ১১টি অভিযোগ তুলে তার সঙ্গে এক বেঞ্চে না বসতে আপিল বিভাগের পাঁচজন বিচারপতির মতের বিষয়ে এসব কথা বলেন আইনমন্ত্রী।
দুর্নীতি, অর্থপাচারসহ ওই ১১টি অভিযোগ তুলে শনিবার (১৪ অক্টোবর) বিবৃতি দিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্ট।
রোববার (১৫ অক্টোবর) সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট যে বিবৃতি দিয়েছেন, সেটি তো আমার নিয়ন্ত্রণে নয়। বিবৃতিটির বিষয়ে আমি বিশেষ কথা বলতে চাই না। আমি ওয়েবসাইটে যে বক্তব্য দেওয়া আছে, তা পড়েছি’।
বিবৃতিটি পড়ে শুনিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে বলা আছে যে, আপিল বিভাগের পাঁচজন বিচারপতি তার (প্রধান বিচারপতি) বিরুদ্ধে যে ১১টি অভিযোগ রয়েছে, সেগুলোর সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তার সঙ্গে একই বেঞ্চে বসে বিচারকার্য পরিচালনা করবেন না’।
‘এটিই যদি তাদের বক্তব্য, তাহলে আমি বলবো, যতোক্ষণ পর্যন্ত এ ১১টি অভিযোগের বিষয়ে সুরাহা না হবে, ততোক্ষণ পর্যন্ত তারা হয়তো তার সঙ্গে বসবেন না। তাহলে তিনি কি করে এখানে এসে বসবেন? কারণ, আপিল বিভাগে একক বেঞ্চের কোনো নিয়ম আছে বলে আমার জানা নেই’।
পাঁচ বিচারপতি প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বসেন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘তাদের সম্পর্ক আলাদা। এ অভিযোগগুলো যখন তারা জেনেছেন এবং নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে তাকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেছেন, তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এটির বিষয়ে আমাদের তো বলার কিছু নেই’।
সুপ্রিম কোর্ট বিবৃতি দিতে পারেন কি-না- সাংবাদিকদের প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টকে নিয়ে বা কোনো প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে যদি কোনো বিতর্কের সৃষ্টি হয়, আমার মনে হয়, আইনি বলে ও প্রিন্সিপাল অব ন্যাচারাল জাস্টিসের বলে সে প্রতিষ্ঠান জবাব দিতে পারেন। সুপ্রিম কোর্ট যদি সেক্ষেত্রে দিয়ে থাকেন, তো বিবৃতি দিতে পারেন’।
অভিযোগের তদন্তের বিষয়ে তিনি বলেন, আইনে বলে, ‘যদি কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, মামলা-মোকদ্দমার আগে প্রক্রিয়া আছে। আইন নিজস্ব গতিতে চলবে। অভিযোগ যেহেতু উঠেছে, প্রথমে এর অনুসন্ধান হবে। অনুসন্ধানে যদি এর সত্যতা পাওয়া যায়, তাহলে নিশ্চয়ই তার পরবর্তী পদক্ষেপগুলো নেওয়া হবে’।
সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে কোনো ব্যবস্থা হবে কি-না- জানতে চাইলে আনিসুল হক বলেন, ‘সেটি সম্পর্কে দ্বিমত আছে, বিতর্ক আছে। আমরা ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের রিভিউ আবেদন জানাবো। ওই রায়েই কিন্তু সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে পুনর্বহাল করা হয়েছে। আমরা রিভিউ আবেদন করবো এবং সে কারণে এটি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিষয় বলে আমার মনে হয় না’।
‘প্রধান বিচারপতির পদটি একটি প্রতিষ্ঠান। এ আসন যিনি অলঙ্কৃত করেন, তার বিষয়ে ও তাকে যদি কোনো অভিযোগে অভিযুক্ত করতে হয় বা তার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হয়, তাহলে সম্পূর্ণ আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। খামখেয়ালিভাবে বা তাড়াহুড়া করে একজন প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াটা আমরা মনে করি, সমীচীন নয়’।
শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) রাতে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হন বিচারপতি সিনহা। সরকারি বাসভবন ছাড়ার আগে তিনি সাংবাদিকদের কাছে লিখিত বিবৃতি দিয়ে যান। ওই বিবৃতিতে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি সম্পূর্ণ সুস্থ, পালিয়ে যাচ্ছি না, ফিরে আসবো’।
এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি এখনও বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি আছেন। তিনি ছুটি চেয়েছেন, বিদেশে গেছেন এবং নিজের মুখে বলেছেন যে, আগামী ১০ নভেম্বরের মধ্যে দেশে ফিরে আসবেন’।
‘তার এ বক্তব্য সরকারকে বিব্রত করেছে কি-না’- হাসতে হাসতে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বিব্রত হইনি। যদি এসব বলে থাকেন, তাহলে আমার মনে হয়, তিনি নিজেই ব্রিবত। কারণ, কেউ বলেননি যে, তিনি পালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বিব্রত বলেছেন অন্য কারণে। এ প্রশ্ন ওঠেনি যে, তিনি পালিয়ে যাচ্ছেন, তাহলে নিজে তৈরি করলেন কেন?’
‘প্রথম কথা, ছুটি চেয়েছেন, তাকে ছুটি দেওয়া হয়েছে। তিনি অসুস্থ। সাতদিন পরে তিনি ছুটি কেন চেয়েছেন? তিনি অবসাদগ্রস্ত, বিদেশে যেতে চান। আইনি নিয়মে করে দেওয়া হয়েছে, বাধা দেওয়া হয়নি। তিনি কেন যাচ্ছেন, পালিয়ে যাচ্ছেন কি-না- তাকে কেউ বলেনওনি। তাহলে এসব প্রশ্নের উদ্রেক হওয়ার কথা নয়’।
** প্রধান বিচারপতির বক্তব্যে হতভম্ব আইনমন্ত্রী
** টক শোতে ব্যক্তিগতভাবে অ্যাটাক হচ্ছেন আইনমন্ত্রী
** ‘প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান’
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৭
এমআইএইচ/এএসআর