তবে এখন অবস্থা বদলাচ্ছে। ইদানীং হিজড়াদের আচরণে আগের মতো বিনয়ী ভাবটা নেই।
এখন কেউ টাকা দিতে না চাইলে হিজড়ারা তাকে বিভিন্ন অশ্লীল গালিগালাজ করা থেকে শারীরিকভাবে হেনস্তা করতেও পেছপা হয় না। অনেক নিরীহ মানুষ অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বাধ্য হয়ে টাকা দিয়ে দেন।
রাজধানীর বিজয় সরণি, আগারগাঁও সিগন্যাল ও কাকরাইল মোড়ে হিজড়াদের চাঁদাবাজির উৎপাত লক্ষ্য করা যায় বেশি।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর এসব এলাকায় সকাল ৯টা থেকে হিজড়ারা কয়েকটা দলে ভাগ হয়ে নামে। প্রতিদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত টাকা তোলে। দেখা যায়, প্রতিটি রাস্তার ট্রাফিক সিগন্যালে পড়ামাত্র তারা রাস্তায় নেমে এসে রিকশা, প্রাইভেটকার ও বাসের যাত্রীদের ঘিরে, ছেঁকে ধরে। টাকা আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা মানুষকে জিম্মি করে রাখে।
এছাড়া লক্ষ্য করা গেছে, যেসব যাত্রী তাদের টাকা দিতে অসম্মতি জানিয়েছেন তাদের শারীরিক হেনস্তা করার ভয় দেখানোসহ অকথ্য গালিগালাজ করেছে হিজড়ারা। অনেকে সম্মানহানির ভয়ে টাকা দিয়ে পার পেয়েছেন।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী মো. আতিক হাসান প্রতিদিন ফার্মগেট থেকে মিরপুর ১০ নাম্বারে যাতায়াত করেন। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, বিজয় সরণির সিগন্যাল পড়লেই দল বেঁধে হিজড়ারা এসে ঘিরে ধরে যাত্রীদের। কেউ টাকা না দিলে তার মা বোন তুলে গালি দেওয়াসহ শারীরিক হেনস্তা করার চেষ্টা করে।
কাকরাইল মোড়ে এমন অপ্রীতিকর ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এক বাসযাত্রী সাজ্জাদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, কাজের কারণে প্রতিদিন কাকরাইল মোড় দিয়ে যাতায়াত করি। প্রতিদিনই বাসে উঠলে হিজড়াদের চাঁদা দিতে হয়। চাঁদা না দিলে দল বেঁধে আক্রমণ করে। শরীরের কাপড় ধরে টানাটানি করে। মুখে চিমটি দেয়। এছাড়া আরো নানাভাবে হেনস্তা করার চেষ্টা করে। তখন বাধ্য হয়ে টাকা দিতে হয়।
সন্ধ্যার পর থেকে রাস্তা থেকে হিজড়ারা চলে যায় রাজধানীর বিভিন্ন বিনোদনকেন্দ্র বা পার্কের সামনে। এক্ষেত্রে তাদের উপস্থিতি বেশি লক্ষ্য করা যায় হাতিরঝিল ও ধানমন্ডি লেকে।
এ সময় বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে আসা মানুষনের কাছ থেকে একই কায়দায় টাকা আদায়ের চেষ্টা করে এরা। পার্কগুলোতে সাধারণত দেখা যায়, পরিবার পরিজন নিয়ে মানুষজন বিকেলে কিংবা সন্ধ্যায় বেড়াতে আসেন। হিজড়াদের এমন অত্যাচারে বিপাকে পড়েন পরিবার পরিজন নিয়ে ঘুরতে আসা মানুষেরা।
মো.সিয়াম হাতির ঝিলে স্ত্রী-কন্যা নিয়ে বেড়াতে এসেছেন। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ইদানীং রাস্তাঘাটসহ রাজধানীর বিনোদনকেন্দ্রগুলোতেও হিজড়াদের উৎপাত বেড়ে গেছে। টাকা না দিলে কী জঘন্য আচরণ যে ওরা করতে পারে, তা চিন্তাও করা যায় না। তাই অনেক সময় তাদের বাধ্য হয়ে টাকা দিতে হয়।
‘নয়া সেতু’ নামে একটি সংগঠন হিজড়াদের নিয়ে কাজ করে। সংগঠনের সভাপতি জয়া শিকদার নিজেও একজন হিজড়া।
মানুষকে জুলুম করে হিজড়াদের টাকা তোলার বিষয়টি নিয়ে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, সরকার হিজড়াদের তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টিকে শুধুমাত্র কাগজে কলমেই রেখে দিয়েছে। এর বাস্তবায়নে তেমন কোনো উদ্যোগ এখনো লক্ষ্য করা যায়নি। কর্মসংস্থান না থাকার কারণেই হিজড়ারা এমন কাজ করছে।
তিনি বলেন, চাকরি দেওয়ার নামে হিজড়াদের অনেক নির্যাতনও করা হয়। হিজড়ারাও তো মানুষ। তাদেরও বেঁচে থাকার জন্য কর্মসংস্থানের প্রয়োজন। এখন যদি তাদের এসব সুবিধা না দেওয়া হয় সাধারণ নাগরিকদের মতো, তাহলে তো বাধ্য হয়ে রাস্তায় নামবেই।
বাংলাদেশ সময়: ০৭১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০১৭
এমএসি /জেএম