রোববার (২৯ অক্টোবর) ৬০ হাজার টাকা জরিমানায় এ মৃত্যুর অভিযোগ তুলে নিতে বাধ্য করে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। ফজিলা খাতুন আদিতমারী উপজেলার কমলাবাড়ি ইউনিয়নের কুমড়িরহাট এলাকার নুরুজ্জামানের স্ত্রী।
ফজিলার পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বাংলানিউজকে জানায়, ১৮ অক্টোবর শহরের নিরাময় ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডা. সিরাজুল ইসলাম অস্ত্রোপচার করলে ছেলে সন্তানের জন্ম দেন ফজিলা। এরপর থেকে সুস্থই ছিলেন ফজিলা ও তার সন্তান। পরের দিন দুপুর পর্যন্ত স্বাভাবিক নিয়মে সন্তানকে দুগ্ধ পান করাচ্ছিলেন ফজিলা। কিন্তু বিকেলে হঠাৎ অসুস্থতায় ছটফট শুরু করেন তিনি। এসময় ফজিলার ফুফু মিনা বেগম ক্লিনিকের কর্তব্যরতদের বিষয়টি অবগত করেন। কিন্তু তারা বিষয়টি স্বাভাবিক নিয়ম বলে এড়িয়ে যান। কিছুক্ষণ পরে আবারো অবগত করা হলে একজন আয়াকে দেখে আসার জন্য ফজিলার বেডে পাঠান কর্তব্যরতরা। এরপরেই ফজিলার মৃত্যু হয় বলে তার পরিবারের অভিযোগ।
এদিকে নিজেদের দায় এড়াতে তড়িঘড়ি করে মৃত ফজিলাকে গাড়িতে করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ফজিলাকে মৃত ঘোষণা করলে মরদেহটি তার বাবার বাড়িতে রেখে কৌশলে সরে যান তারা।
পরের দিন ফজিলার বাবা মোর্শেদ আলী তার মেয়ের চিকিৎসার কাগজপত্র ও মৃত্যুর কারণ জানতে ক্লিনিকে গেলে তাকে গালমন্দ করে ক্লিনিক থেকে বের করে দেয়া হয়। পরে ফজিলাকে ভুল চিকিৎসা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করে সদর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন মোর্শেদ আলী। এ খবর পেয়ে দালাল ও কুচক্রি মহলকে নিয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে মরিয়া হয়ে পড়ে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। অবশেষে রোববার সন্ধ্যায় থানা চত্বরেই ৬০ হাজার টাকায় নির্ধারণ হয় ফজিলার জীবনের মূল্য!
শুধু ফজিলাই নন, ভুল চিকিৎসায় গত ছয় মাসে এ ক্লিনিকে কয়েকজন প্রসূতি মায়ের অকাল মৃত্যু হয়েছে বলে একাধিক পল্লী চিকিৎসকের দাবি।
টাকা দিয়ে ধামাচাপা দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে নিরাময় ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক সামসুল আলম বাংলানিউজকে জানান, অসুস্থ হওয়ায় ফজিলাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয় এবং সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
লালমনিরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজ আলম বাংলানিউজকে জানান, ফজিলার সদ্য প্রসূত সন্তানকে প্রতিপালনের জন্য ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ তার পরিবারকে ৬০ হাজার টাকা দিয়ে অভিযোগটির মিমাংসা করেছে। পরবর্তীতে এমন ঘটনা যেন না ঘটে সে বিষয়ে নজর রাখতে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে বলে জানান তিনি।
লালমনিরহাট সিভিল সার্জন ডা. কাশেম আলী বাংলানিউজকে জানান, ফজিলার মৃত্যুর বিষয়টি লোকমুখে শুনে নিরাময় ক্লিনিকসহ সকল ক্লিনিককে চিঠি পাঠানো হচ্ছে। শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার এবং মৃত্যুর কারণ জানতে চাওয়া হচ্ছে সেই চিঠিতে।
ফজিলার পরিবার লিখিত অভিযোগ দিলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০১৭
টিএ